ফারুকী গং দের তথ্যগত বিভ্রান্তিপূর্ণ মায়াকান্না’র পর আজ প্রথম আলো’তে আনিসুল হক লিখলেন ‘কেন রুখে দাঁড়াতে হয়?’(Click This Link)। আপনার লেখাটি মানবিক, নিঃসন্দেহে আপনার স্বামর্থের প্রশংসা করতে হয়। কারণ এতদিন আমদানীর পক্ষে ছিলেন আমার এমন একজন চলচ্চিত্র কর্মী বন্ধুও আজ আপনার লেখা পড়ে বলছিল- আপনি ভালো লিখেছেন, মানে, মনে মনে সে আপনার মানবিক আকুতি মেনে নিয়েছে। আমি আপনার লেখাকে মানবিক আকুতি বলছি কারণ আপনার লেখার তত্ত্ব ও তথ্য’র বিভ্রান্তিগুলো আমি এখন একটু দেখানোর চেষ্টা করবো।
শেষদিক থেকে শুরু করি- ভারতীয় সিনেমার সাথে প্রতিযোগীতার বিপক্ষে আপনারা যারা বলছেন তারা সবাই উদহারণ দিচ্ছেন ইরান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার, প্রসঙ্গত এসব কোনো দেশই হলিউডের সিনেমা’র সাথে প্রতিযোগীতা ছাড়া তাদের সিনেমা শিল্পের উন্নয়ন করেনি।
ভালো বাংলা ছবি, হোক তা এপার কিম্বা ওপার বাংলায়, আমরা দেখবোই!
আপনারা বলছেন তাহলে ভারতীয় সিনেমা কেন, ইরান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার ছবি আনা হোক, আপনি জানেন কি এসব সিনেমা’র উপর যে আমাদের দেশে আদতেই কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই?
“আর একটা প্রশ্ন, আমরা কেন হিন্দি চ্যানেলগুলোকে এই দেশের টিভিতে এমন অবাধ করে দিয়েছি, যখন ভারতে আমাদের চ্যানেলগুলো দেখানো হয় না বললেই চলে!” আমি যতদূর জানি ভারতে বাংলাদেশি চ্যানেল এর উপর আদতেই কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, ভারতে যে কোনো চ্যানেল দেখাতে হলে একটা নির্দিষ্ট পরিমান ট্যাক্স দিয়ে দেখাতে হয়, সেক্ষেত্রে মান সম্পন্ন অনুষ্ঠান তৈরী করে বাংলাদেশী চ্যানেলও কিন্তু পারে ভারতের বাজার তৈরী করতে।
আপনার শেষদিককার প্রস্তাবনায় “এমনকি ভারতের, কোনোই আপত্তি নেই, তবে তা আন্তর্জাতিক বিচারে ভালো ছবি হতে হবে” যখন বলছেন তখন তা আমার ভালোই লেগেছে, আমরা সাধারণ দর্শকরাও আসলে তাইই চাই। কিন্তু এর আগে সংস্কৃতির রক্ষার কথা বলে যে আবেগপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আপনার এই মৃদু সমর্থনের আর কোনো জোর থাকে না।গলাধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে, “আজ থেকে গেলেও পারেন” বলায় বিশেষ কোনো মাহাত্ব্য নেই!
প্রতিযোগীতার প্রশ্নে আপনাদের জোর আপত্তি, কয়েকদিন আগেও আমি টালিগঞ্জের ৫টি সাম্প্রতিক ভালো ছবির একটা ইউ-টিউব লিংক(Click This Link) ফেসবুকে দিয়েছিলাম, দেখেছিলেন? অনেকে বলেন বলিউডের কারনে টালিগঞ্জে ভালো ছবি হয় না, যারা বলেন তারা জানেন না যে, হয় ঠিকই কিন্তু বাংলাদেশে ভালো ছবিগুলো আসে না। কারণ ডিপজলদের প্রটেকশন দিয়ে দিয়ে আপনারা বাংলাদেশের দর্শকদের রুচিকেও নোংরা করে দিয়েছেন, তাই বানিজ্যের কল্যানে যারা ডি ভি ডি আনেন তারাও ঐ ডিপজল-মার্কা ছবিই আনেন। এখন আমাকে কি বলতে পারেন এতদ অসম প্রতিযোগীতা স্বত্ত্বেও টালিগঞ্জে ভালো ছবি কি করে তৈরী হচ্ছে, এবং সংখ্যাটা যে একেবারে কম না এবং মানের দিক থেকে যে আমাদের তথাকথিত ভালো ৩৫মিমি-নাট্যছবি গুলোর চেয়ে অনেক ভালো তা ট্রেলার দেখলেই বুঝবেন যদি ডি ভি ডি না খুজে পান।
হিন্দি’র আধিপত্য নিয়ে আপনাদের জোর আপত্তি, কিন্তু আপনারা RJ-VJ দের বাংরেজী কথা বার্তা নিয়ে কোনো কথা বলেন না।রবীন্দ্রনাথ ঢাকাই শাড়ির কথা বললে যেমন ঢাকাই শাড়ির বিজ্ঞাপন হয়, আপনি থ্রি ইডিয়টস নিয়ে লিখলেও হিন্দি ছবিরই বিজ্ঞাপন হয়, এবং সেখান থেকে ‘আলিজ ওয়েল’ বাংলাদেশীদের মুখে মুখে ঘুরে!
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় আমার বাসায় প্রথম মৈত্রেয়ী দেবী’র ‘ন-হণ্যতে’ আসে, আমি হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছিলাম, মা বললেন- “ওটা রাখ, তোর ওটা পড়ার বয়স হয় নি”। সেদিনই লুকিয়ে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম বইটা পড়ার জন্য, এমনিতে হয়তো ঐ বয়সে ঐ বই আমার ২/১ পৃষ্ঠা পড়ার পরই দূরে সরিয়ে রাখার কথা। এটা শুধুমাত্র আমার একার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, শিল্প সংস্কৃতি ধরনই যে এমন, নিষিদ্ধতার সাথে এর প্রতি আকর্ষণের কি এক চমৎকার সম্পর্ক আছে।
বাঁধ দিয়ে সংস্কৃতি রক্ষার পক্ষে আপনারা যারা কথা বলছেন, বিশ্বভূবন চষে একটা উদহারণ কি দেখাতে পারবেন যেখানে বাঁধ দিয়ে সংস্কৃতি রক্ষা করা গেছে?
লেখা খামোকাই বড় হচ্ছে, আমাদের বলায় আপনারও ভাবনা পরিবর্তন হবে না আর সরকারও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না। তবে অনুরোধ থাকবে একবার ভেবে দেখবেন আপনারা যে প্রটেকশন এর পক্ষে বলছেন তা কি আসলেই ‘মনপুরা’র পক্ষে যাচ্ছে নাকি ‘জুম্মন কশাই’ এর। কারণ এবার দেশে গিয়ে সিনেপ্লেক্সে ‘মনপুরা’ দেখতে গিয়ে দুই সপ্তাহের সিরিয়াল দেখে আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে। এর ঠিক পাশের হলেই কিন্তু হলিউডি জনপ্রিয় কোনো ছবি চলছিল।যা বাংলাদেশের মানুষকে ভালো ছবি দেখার জন্য বাঁধা দিতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ উন্নাসিক নয়, ভুল পথে চালিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২২