somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনিসুল হক এর অরণ্যে রোদন; তত্ত্ব ও তথ্য’র বিড়ম্বনা (পাঠ-প্রতিক্রিয়া)

২৭ শে মে, ২০১০ বিকাল ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষয়বস্তুঃ ইতিমধ্যেই চিপে চিপে তিতে হয়ে যাওয়া ভারতীয় সিনেমা আমদানী প্রসঙ্গ:

ফারুকী গং দের তথ্যগত বিভ্রান্তিপূর্ণ মায়াকান্না’র পর আজ প্রথম আলো’তে আনিসুল হক লিখলেন ‘কেন রুখে দাঁড়াতে হয়?’(Click This Link)। আপনার লেখাটি মানবিক, নিঃসন্দেহে আপনার স্বামর্থের প্রশংসা করতে হয়। কারণ এতদিন আমদানীর পক্ষে ছিলেন আমার এমন একজন চলচ্চিত্র কর্মী বন্ধুও আজ আপনার লেখা পড়ে বলছিল- আপনি ভালো লিখেছেন, মানে, মনে মনে সে আপনার মানবিক আকুতি মেনে নিয়েছে। আমি আপনার লেখাকে মানবিক আকুতি বলছি কারণ আপনার লেখার তত্ত্ব ও তথ্য’র বিভ্রান্তিগুলো আমি এখন একটু দেখানোর চেষ্টা করবো।

শেষদিক থেকে শুরু করি- ভারতীয় সিনেমার সাথে প্রতিযোগীতার বিপক্ষে আপনারা যারা বলছেন তারা সবাই উদহারণ দিচ্ছেন ইরান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার, প্রসঙ্গত এসব কোনো দেশই হলিউডের সিনেমা’র সাথে প্রতিযোগীতা ছাড়া তাদের সিনেমা শিল্পের উন্নয়ন করেনি।


ভালো বাংলা ছবি, হোক তা এপার কিম্বা ওপার বাংলায়, আমরা দেখবোই!


আপনারা বলছেন তাহলে ভারতীয় সিনেমা কেন, ইরান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার ছবি আনা হোক, আপনি জানেন কি এসব সিনেমা’র উপর যে আমাদের দেশে আদতেই কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই?

“আর একটা প্রশ্ন, আমরা কেন হিন্দি চ্যানেলগুলোকে এই দেশের টিভিতে এমন অবাধ করে দিয়েছি, যখন ভারতে আমাদের চ্যানেলগুলো দেখানো হয় না বললেই চলে!” আমি যতদূর জানি ভারতে বাংলাদেশি চ্যানেল এর উপর আদতেই কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, ভারতে যে কোনো চ্যানেল দেখাতে হলে একটা নির্দিষ্ট পরিমান ট্যাক্স দিয়ে দেখাতে হয়, সেক্ষেত্রে মান সম্পন্ন অনুষ্ঠান তৈরী করে বাংলাদেশী চ্যানেলও কিন্তু পারে ভারতের বাজার তৈরী করতে।

আপনার শেষদিককার প্রস্তাবনায় “এমনকি ভারতের, কোনোই আপত্তি নেই, তবে তা আন্তর্জাতিক বিচারে ভালো ছবি হতে হবে” যখন বলছেন তখন তা আমার ভালোই লেগেছে, আমরা সাধারণ দর্শকরাও আসলে তাইই চাই। কিন্তু এর আগে সংস্কৃতির রক্ষার কথা বলে যে আবেগপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আপনার এই মৃদু সমর্থনের আর কোনো জোর থাকে না।গলাধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে, “আজ থেকে গেলেও পারেন” বলায় বিশেষ কোনো মাহাত্ব্য নেই!

প্রতিযোগীতার প্রশ্নে আপনাদের জোর আপত্তি, কয়েকদিন আগেও আমি টালিগঞ্জের ৫টি সাম্প্রতিক ভালো ছবির একটা ইউ-টিউব লিংক(Click This Link) ফেসবুকে দিয়েছিলাম, দেখেছিলেন? অনেকে বলেন বলিউডের কারনে টালিগঞ্জে ভালো ছবি হয় না, যারা বলেন তারা জানেন না যে, হয় ঠিকই কিন্তু বাংলাদেশে ভালো ছবিগুলো আসে না। কারণ ডিপজলদের প্রটেকশন দিয়ে দিয়ে আপনারা বাংলাদেশের দর্শকদের রুচিকেও নোংরা করে দিয়েছেন, তাই বানিজ্যের কল্যানে যারা ডি ভি ডি আনেন তারাও ঐ ডিপজল-মার্কা ছবিই আনেন। এখন আমাকে কি বলতে পারেন এতদ অসম প্রতিযোগীতা স্বত্ত্বেও টালিগঞ্জে ভালো ছবি কি করে তৈরী হচ্ছে, এবং সংখ্যাটা যে একেবারে কম না এবং মানের দিক থেকে যে আমাদের তথাকথিত ভালো ৩৫মিমি-নাট্যছবি গুলোর চেয়ে অনেক ভালো তা ট্রেলার দেখলেই বুঝবেন যদি ডি ভি ডি না খুজে পান।

হিন্দি’র আধিপত্য নিয়ে আপনাদের জোর আপত্তি, কিন্তু আপনারা RJ-VJ দের বাংরেজী কথা বার্তা নিয়ে কোনো কথা বলেন না।রবীন্দ্রনাথ ঢাকাই শাড়ির কথা বললে যেমন ঢাকাই শাড়ির বিজ্ঞাপন হয়, আপনি থ্রি ইডিয়টস নিয়ে লিখলেও হিন্দি ছবিরই বিজ্ঞাপন হয়, এবং সেখান থেকে ‘আলিজ ওয়েল’ বাংলাদেশীদের মুখে মুখে ঘুরে!
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় আমার বাসায় প্রথম মৈত্রেয়ী দেবী’র ‘ন-হণ্যতে’ আসে, আমি হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছিলাম, মা বললেন- “ওটা রাখ, তোর ওটা পড়ার বয়স হয় নি”। সেদিনই লুকিয়ে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম বইটা পড়ার জন্য, এমনিতে হয়তো ঐ বয়সে ঐ বই আমার ২/১ পৃষ্ঠা পড়ার পরই দূরে সরিয়ে রাখার কথা। এটা শুধুমাত্র আমার একার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, শিল্প সংস্কৃতি ধরনই যে এমন, নিষিদ্ধতার সাথে এর প্রতি আকর্ষণের কি এক চমৎকার সম্পর্ক আছে।

বাঁধ দিয়ে সংস্কৃতি রক্ষার পক্ষে আপনারা যারা কথা বলছেন, বিশ্বভূবন চষে একটা উদহারণ কি দেখাতে পারবেন যেখানে বাঁধ দিয়ে সংস্কৃতি রক্ষা করা গেছে?

লেখা খামোকাই বড় হচ্ছে, আমাদের বলায় আপনারও ভাবনা পরিবর্তন হবে না আর সরকারও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না। তবে অনুরোধ থাকবে একবার ভেবে দেখবেন আপনারা যে প্রটেকশন এর পক্ষে বলছেন তা কি আসলেই ‘মনপুরা’র পক্ষে যাচ্ছে নাকি ‘জুম্মন কশাই’ এর। কারণ এবার দেশে গিয়ে সিনেপ্লেক্সে ‘মনপুরা’ দেখতে গিয়ে দুই সপ্তাহের সিরিয়াল দেখে আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে। এর ঠিক পাশের হলেই কিন্তু হলিউডি জনপ্রিয় কোনো ছবি চলছিল।যা বাংলাদেশের মানুষকে ভালো ছবি দেখার জন্য বাঁধা দিতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ উন্নাসিক নয়, ভুল পথে চালিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২২
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×