ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা ভাগাভাগীর ফলাফল রাজনৈতিক সীমারেখার প্রতি আমার বিশেষ কোনো শ্রদ্ধা নেই, বরং ধর্মে-বর্ণ-রাজনৈতিক ঠুনকো সীমারেখা ডিঙিয়ে হাজার বছর ধরে লালন করা একই রকম আচার, আচরন ও সংস্কৃতির জাতিস্বত্ত্বাবোধ অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ।
এ কারণে একই রাজনৈতিক ভূখন্ডে থেকেও আইরিশ-স্কটিশ-ইংলিশরা ভিন্ন ভিন্ন জাতি, বার্লিন প্রাচীর দিয়ে আলাদা করা যায়নি জার্মানদের, আমেরিকান সৈন্য দিয়ে সীমান্ত পাহারা দিয়ে বিরোধকে জিইয়ে না রাখলে হয়তো অনেক আগেই এক হয়ে যেত দুই কোরিয়া। ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাদা ছোড়াছুড়ি দিয়ে ভাগ করা হয়েছে চার হাজার বছরের বাংলা’কে।
এক অংশে ধর্মের ছুঁতো এবং রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত অহেতুক ভারতবিদ্বেষকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত বাঙালীকে বাংলাদেশি করে তোলার আপ্রান চেষ্টা চলছে অন্য অংশে একই রকম ধর্মের ঠুনকো মৌলবাদ এবং রাজনৈতিক-সামাজিক মিথ্যাচার দিয়ে বাঙালীকে শুধুই ইন্ডিয়ান বানানো হচ্ছে। আজ আমার ওপারের বন্ধু মজন্তালি সরকার যখন বলেন, “এপারে একটা বাজে ধারনা লোকের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশী মানেই ধর্মান্ধ হিন্দু বিদ্বেষী মুসলিম মৌলবাদী। এবং ঠিক এর উল্টোটা করা হয়েছে পূর্ববঙ্গে। আমি এই সব বিষাক্ত ধারনার অবসান চাই। এই ধারনাকেই অস্ত্র করে বাংলার জমি ছিঁড়ে দুটুকরো করে আজ বাইরের লোকেরা তাদের পুতুলদের ক্ষমতায় বসিয়ে আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে। পূব-পশ্চিম দুদিকেই।”, আমি মর্মাহত হই!
পৃথিবীর বুকে বাঙালী জাতির একমাত্র স্বাধীন ভূখন্ড বাংলাদেশ’ অর্জনের গর্ব একমাত্র বাঙালীর। ভাষা আন্দোলনের অকুন্ঠ সমর্থন থেকে শুরু করে যুদ্ধকালীন দুই কোটি বাঙালীর নিরাপদ আশ্রয় পর্যন্ত কাটাতারের ওপারের বাঙালিরা যে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছে এর জন্য শুধু ধন্যবাদ জ্ঞাপনই যথার্থ নয় প্রয়োজন ভাতৃত্ববোধ।মুক্তিযুদ্ধে ওপারের সাধারন মানুষের সমস্ত প্রকার সহযোগীতাকে পাশ কাটিয়ে কেন ইন্ডিয়ান আর্মির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের অংশগ্রহনকেই বড় করে দেখা হচ্ছে! কেন ওপারের মানুষদের ভাবতে শেখানো হচ্ছে যে বাংলাদেশ ধর্মান্ধ এক ব্যর্থ রাষ্ট্র!
প্রায় ৩০লক্ষ প্রান দিয়ে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষ অংশে যখন পাকিস্থানী হানাদারদের নাভিশ্বাস অবস্থা তখন মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাহায্য এগিয়ে আসা ইন্ডিয়ান আর্মি আজ কি করে দাবী করে ৭১ এর বিজয় শুধুমাত্র তাদের বিজয়! ১১ টি সেক্টরের লক্ষ লক্ষ যোদ্ধাদের পাশ কাটিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়া কি করে একপেশে প্রচারণা চালায় যে মুক্তিবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধে ইন্ডিয়ান আর্মিই পাকিস্থানের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছে!ইন্ডিয়ান মিডিয়ার এই প্রচেষ্টা এক দুই দিনের নয়, এবং তারা সফল বলেই আজ ইন্ডিয়ানরা ভাবতে শুরু করেছে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইন্ডিয়ান আর্মির উপহার!এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই কি ইস্টার্ন কমান্ড মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত দলিল দস্তাবেদ ধংশ করেছে! বাঙালীর বিজয়কে ইন্ডিয়ান আর্মির বিজয় হিসেবে দেখানোর এই প্রচারনা মাথা চারা উঠেছে এমন এক সময় যখন আমরা পার করছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত এক ক্রান্তিকালীন সময়। কি চাল চালতে চাচ্ছে ইন্ডিয়ান মিডিয়া ও ইন্ডিয়ান আর্মি!
কি করছি আমরা!
#বাংলাদেশ ততদিন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন নয় যতদিন পর্যন্ত পাকিস্থানী ভুত মাথায় নিয়ে এদেশের ক্ষমতায় যুদ্ধাপরাধীদের রাজাকারী আদর্শের অংশিদারিত্ব আছে।
#মুজিবের সাধারণ ক্ষমায় এটা স্পষ্টতই আছে যে- তারা সাধারন ক্ষমার বাইরে থাকবে
-----১-যারা হত্যা করেছে বা হত্যায় সহায়তা করেছে।
-----২-যারা ধর্ষন করেছে বা সহায়তা করেছে।
-----৩-যারা মানুষের লুটপাট করেছে বা সহায়তা করেছে।
------৪-যারা মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে বা সহয়তা করেছে।
#মুজিব পরবর্তী সময়ে রাজাকারী আদর্শকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ক্ষমতাসীনেরা বিলম্বিত করেছে আমাদের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা, সেই সুযোগে আদর্শগত ভাবে পরাধীনতা শেকড় বসিয়ে ফেলেছে এদেশের মাটিতে।
#স্বাধীনতার জন্য ভূখন্ডের সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি আদর্শগত মুক্তিও অতীব জরুরী।
#নিশ্চিহ্ন হোক জামাত সহ যুদ্ধাপরাধীদের সমস্ত রাজনৈতিক অংশিদারিত্ব।
বাঙালীর বিজয় অনিবার্য!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২৩