বর্তমান সময়ের আলোচিত দুটি বিষয় হল “মেহেরজান” এবং আড়িয়াল বিলে বিমান বন্দর নির্মাণ ইস্যু।
মেহেরজান নিয়ে প্রায় সব ব্লগ ও পত্রিকাতেই প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। তার বেশীর ভাগই এ ছবিটির সমালোচনা করে। কেন এর সমালোচনা করা হচ্ছে তা সম্পর্কে সবাই নিশ্চয়ই অবগত আছেন। এ নিয়ে অনেক পোষ্ট ব্লগে এসেছে। ব্লগার দাসত্ব তার এই পোস্টটিতে অনেক ভালো যুক্তি দিয়েছেন এবং প্রথম আলোর সাথে “মেহেরজান” এর সম্পর্কের কথাও বলে গেছেন। তার কাছ থেকেই জানতে পারি যে প্রথম আলোর নিয়মিত লেখক ফারুক ওয়াসিফের স্ত্রী ফারজানা ববি চলচ্চিত্রটির সহকারী পরিচালক।
যাই হোক, মেহেরজানের বিজ্ঞাপন ক্রমাগত প্রথম আলোতে আসতে থাকে এর প্রদর্শনী বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত। ২৬ তারিখে প্রথম আলোর সম্পাদকীয় তে “মুক্তিযুদ্ধ ও নারীর প্রতি অবমাননার ছবি ” শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয় যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিল্পী ও একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা-বীরাঙ্গনা রা একসাথে লিখেন মেহেরজানের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করে। কিন্তু এর পরের পৃষ্ঠাতেই ছবিটির পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন এর “‘মেহেরজান’ যা বলতে চেয়েছে ” শিরোনামে বিশাল এই লেখাটি ছাপা হয়। যাতে পরিচালক অপ্রাসঙ্গিক সব কথা বলে ও যুক্তি দিয়া তার ছবিটিকে হালাল করতে চেয়েছেন! লিংক দেয়া আছে ইচ্ছে করলে যে কেউ লেখা দুটি পড়ে নিতে পারেন।
আর এটা এক প্রকার ওপেন সিক্রেট যে রুবাইয়াত হোসেন আওয়ামী নেতা যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের মেয়ে বলেই মেহেরজান সেন্সর বোর্ডে কোন বাধার মুখে পড়েনি।
দাসত্ব এর লেখাটিতে আমি মন্তব্য করেছিলাম যে প্রথম আলো এখন কি করে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। আজ আমার অপেক্ষা শেষ হয়েছে।
আজকের পত্রিকায় প্রথম আলো বিনোদন পাতায় মাঝারী সাইজের একটা নিউজ করেছে এই শিরোনামে- “ ‘মেহেরজান’ ছবির প্রদর্শনী বন্ধ!”
শিরোনামের ঐ বিস্ময় সূচক (!) চিহ্ন টা লক্ষ করেছেন! যেন মেহেরজানের প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বিস্ময়কর ব্যাপার! সরকার নিষিদ্ধ করেনি অথচ প্রদর্শনী বন্ধ- এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অবিচার! যেন এই ছবিতে এমন কিছুই নেই যে এটার প্রদর্শনী বন্ধ হতে পারে!
প্রিয় “প্রথম আলো”, সরকার আর সেন্সর বোর্ডের চেয়েও বড় হচ্ছে জনগন। পাবলিক চায় নি বলেই মেহেরজানের প্রদর্শনী বন্ধ। আশা করি এই সহজ সত্যটি বোঝার ক্ষমতা আপনাদের হয়েছে। আপনাদের নিয়মিত লেখকের স্ত্রী এর সহকারি পরিচালক বলেই এর সাত খুন মাফ হবে না।
আজকের খোলা কলমেও প্রথম আলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক, চলচ্চিত্র গবেষক, ফাহমিদুল হকের “বিনির্মাণের বিপত্তি ও জাতীয়তাবাদী আবেগ ” শিরোনামে লেখাটি ছাপিয়েছে। অনেক ধৈর্য নিয়ে তাঁর এই বৃহৎ লেখাটি পড়লাম। লেখাটিতে তিনি অনেক থিওরির সমাবেশ ঘটিয়েছেন যার মর্ম বোঝার ক্ষমতা আমার মতো সাধারন মানুষের নেই। তবুও যতটুকু বুঝতে পারলাম তাতে মনে হল তিনি মেহেরজানের কারিগরি কিছু বিষয়ের সমালোচনা করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ঐ প্রথম আলোর তথা মেহেরজান তথা এর পরিচালক, সহ পরিচালকদেরই গুনগান গেয়েছেন। আপনার যদি অনেক ধৈর্য থাকে তবে লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন!
প্রশ্ন হচ্ছে “দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক” হিসেবে প্রথম আলোকে কি এই অল্প পরিমাণ স্বজনপ্রীতি না দেখালে কি চলত না?
প্রথম আলোর “বিখ্যাত” বুদ্ধিজীবী মহলের কি মেহেরজানের অসঙ্গতি গুলো চোখে পড়ছে না?
শেষ করতে চাই আড়িয়াল বিল ও “বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর” নিয়ে কিছু বলে।
প্রসঙ্গতঃ আমি প্রথম আলোর একজন নিয়মিত পাঠক। এই যে প্রথম আলোর এত্ত সমালোচনা করলাম তার পরেও প্রথম আলোকে আমার ভালো লাগে। কেন জানেন?
অন্তত প্রথম আলোকে আমার রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ বলে মনে হয়েছে। অনেকেই হয়তো প্রথম আলোকে আওয়ামী পন্থী বলেন। আমার তা মনে হয় না। বিশ্বাস না হলে আজকের পত্রিকাটিই খুলে দেখুন।
আড়িয়াল বিল নিয়ে কি হচ্ছে তা ব্লগের স্টিকি পোষ্টটিই বলে দেয়। আজ প্রথম আলোর প্রধান খবর “নতুন বিমানবন্দর কেন? ” পড়ে রাগে গা জ্বলছে!
হাসিনাকে যে কি কি বলে কতবার গালি দিতেই আছি তা নিজেও বলে শেষ করতে পারব না।
এই রাজনীতিবিদ গুলা কতটুকু খারাপ হলে পারে ১০ লাখ মানুষের পেটে লাথি মেরে নিজের বাপের নাম ফলাতে! দেশের সাধারণ মানুষের ৫০ হাজার কোটি টাকা অপচয় করতে! খালেদা- হাসিনা যেন ৫ বছর পর পর নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। একজন দুর্নীতিতে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবে তো আরেকজন সন্ত্রাসীতে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবে! একজন স্বজনপ্রীতিতে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবে তো আরেক জন দলীয়করণ নামকরণে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবে! এই দুই ডাইনী, লজ্জাহীন এক গাধা আর একদল মীরজাফরের হাত থেকে দেশটা কবে মুক্ত হবে?
নবজাগরণের ছোঁয়া লেগেছে আরব বিশ্বে। বহুদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটছে তিউনিসিয়া, মিশরে। আমাদের দেশের অবস্থাও কি তিউনিসিয়া মিশরের চেয়ে খুব ভালো?
বেকারত্ব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, মুদ্রাস্ফীতি, ক্ষমতার অপব্যাবহার এসব কি বাংলাদেশে নেই?
শাসক গোষ্ঠী হুশিয়ার! এই জনগণই করেছিল ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর গন আন্দোলন, ৭১ মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন।
দলীয়করণ, নামকরণ, অধিকার হরণ, ব্যক্তি স্বার্থে রাজনীতি বাদ দিন। তা না হলে...
“বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা”!
হুশিয়ার!!