ধারণা করা হয় মানুষ অপরাধী, নাকি অপরাধী নয় সে সিদ্ধান্তটি তার মস্তিষ্কের গঠনের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে থাকে। তবে ব্রিটেনের রয়্যাল একাডেমি বলছে, এই তত্ত্ব সর্বাংশে ঠিক নয়। অবশ্য অপরাধীকে শনাক্ত করতে এবং অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ করতে লাই ডিটেক্টর, ব্রেন স্ক্যান এবং জিনগত তথ্য_ সবই কাজে লাগায় আজকের অপরাধবিজ্ঞান। অনেক ক্ষেত্রে আদালতে সাজাও হয় এসব পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যের সহায়তায়, যদি তা অকাট্য প্রমাণ বলে গ্রাহ্য হয়ে থাকে। অপরাধবিজ্ঞান এসব লাই ডিটেক্টর, ব্রেইন বা মস্তিষ্কের স্ক্যান ইত্যাদিতে যতই আত্মতুষ্ট থাকুক না কেন, ব্রিটেনে বিজ্ঞানের সবচেয়ে পুরনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ন্যাশনাল একাডেমি দ্য রয়্যাল সোসাইটি এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ উচ্চমাত্রায় সতর্ক বাণী জানিয়েছে। এই সম্পর্কে সংস্থাটির প্রধান নিকোলাস ম্যাকিনটস বলেন, অপরাধবিজ্ঞানের সহায়ক সব পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। তিনি বলেন, বিষয়টি হলো মানব মস্তিষ্কের গঠন এবং তার বৈশিষ্ট্য। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু জায়গায় দেখা যায়, কিছু মানুষের মস্তিষ্ক হয়ে থাকে একটু বিশেষ ধাঁচের। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, এ ধরনের সাইকোপ্যাথ মস্তিষ্ক যাদের রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে নিউরনগুলো বিশেষ ধরনের আবেগ বা অনুভূতিতে সাড়া দেয় না। খুন বা ধর্ষণের মতো বড় মাপের অপরাধ যেসব অপরাধী করেছে, তাদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এফএমআরআই করে দেখা গেছে, তাদের মস্তিষ্কে রয়েছে ত্রুটিসম্পন্ন সংযোগ ব্যবস্থা। ফলে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াটা তাদের পক্ষে বিচিত্র নয়। বিশেষ সময়ে তাদের মস্তিষ্কের নিউরনগুলো আবেগ বা মায়া-মমতার কেন্দ্রে সংযুক্ত হতে পারে না ত্রুটিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে।
লন্ডন ল' স্কুলের কিংস কলেজের অধ্যাপক রজার ব্রাউনসফোর্ড। ম্যাকিনটসের গবেষণা দলে তিনিও কাজ করেছেন। ব্রাউনসফোর্ডের মতে, নিউরো সায়েন্টিফিক যেসব তথ্য অপরাধীদের বিষয়ে আদালতে হাজির করা হয়ে থাকে এর সব কিছুই যে শতভাগ প্রামাণ্য তথ্য, তা নয়। এ কারণেই আদালতে যখন কোন সম্ভাব্য অপরাধী সম্পর্কে এ ধরনের তথ্য হাজির করা হবে তখন আইনজীবী জানাতে বাধ্য থাকবেন_ এই প্রাপ্ত তথ্যের দুর্বলতা কোথায়। কোন মানুষের মস্তিষ্কের গঠনের মধ্যে সাইকোপ্যাথ হওয়ার বৈশিষ্ট্য থাকা মানে এই নয় যে, সে অপরাধী। তিনি বলেন, সচরাচর দেখা যায়, আদালতে বিচারপতিরা খুব সহজেই এ ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য দেখে তা গ্রহণ করে ফেলেন। কিন্তু এই পদ্ধতি সব সময় শত ভাগ যে ঠিক নয়, বিজ্ঞান সেটিই প্রমাণ করেছে। আসলে অপরাধী মন বা অপরাধপ্রবণ মানসিকতা এক জিনিস এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াটা আরেক বিষয়। ম্যাকিনটসের গবেষকদলের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, অপরাধপ্রবণতা থাকলেই যে মানুষ অপরাধ করবে, তা সব সময় বাস্তব নয়। আবার এমনও দেখা গেছে, অপরাধমূলক কাজ যার করার কথা ছিল, অন্তত মস্তিষ্কের গঠন অনুযায়ী সে জীবন কাটিয়ে গেছে একেবারে নিরীহ গোবেচারার মতো। তবে সকলেই বলছেন, এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
সংগৃহীত।