না, এটা আমার কথা না। দিনমজুর পিতা বহু কষ্ট করে ছেলেকে পাঠাইছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে সে কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে, পুত্রের আন্দোলনের জেরে পিতাকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। ভয়ভীতি দেখাইছে, মানসিক টর্চার করছে, পিতা তখন দুঃখ করে সন্তানকে বলছে- বাবা তোকে জন্ম দিয়ে আমার পাপ হইছে।
রাশেদ রাষ্ট্রের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। কোটি কোটি রাশেদের প্রতিনিধি হয়ে মিডিয়ার সামনে আসছে। এটাই তার দোষ। শেখ হাসিনা সংসদে দাড়ায় বলছে- সব কোটা বাদ । এখানে আন্দোলন কোটা নিয়ে, সেটা নিয়ে কথা বলা জরুরী ছিলো। কিন্তু যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদেরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা মানে কতটা নিকৃষ্ট চর্চা সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সেই নিকৃষ্ট চর্চার দায়িত্ব আবার একাত্তর টিভির হাতে। সেই একাত্তর টিভি টকশো করে মিথিলাকে দিয়ে রাশেদের পুরাতন ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। জেরা করেছে। জামাত-শিবির প্রমাণ করতে চাইছে। একাত্তর টিভি যে কত বড় টাউট এই অনুষ্ঠান সেটার প্রমাণ। ৯৫ সালে আওয়ামীলীগের সব শীর্ষ নেতা তো জামায়াতের সাথে জোট বানাইছিলো, আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের পাশে বসার বহু ছবি অনলাইনে এখনও পাওয়া যায়, সেই ছবি দিয়ে কি একাত্তর টিভি আওয়ামীলীগকে জামায়াত-শিবির প্রমাণ করতে পারবে ?
আমার মনে হয়, এ ধরনের ব্যক্তিগত ট্যাগ দেয়া, নিকৃষ্ট চর্চা। একটা জাতিকে ধ্বংস করার নামান্তর। রাশেদকে ব্যক্তিগত ট্যাগ দেয়া, ২০০ ফেসবুক একাউন্ট সনাক্তের খবর ছড়িয়ে ভীতি তৈরী করার চেষ্টা করা এগুলো বৃথাচেষ্টা। কোটা বিরোধী আন্দোলন কোন ব্যক্তিগত আন্দোলন না, এটা গণ আন্দোলন। দীর্ঘ সময় মানুষের ভেতর জমে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এক্ষোভে এক রাশেদ চলে গেলও লক্ষ রাশেদ দাড়িয়ে যাবে। কয়জন রাশেদকে দমাতে পারবে বিরোধীরা?
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি সেই ‘দূরন্ত পথিক’ আর বিভীষিকার কথপোকথন মনে পড়ে:
– ‘আমি চিরন্তন মুক্তিকামী। এই যাদের খুলি পড়ে রয়েছে তারা কেউ মরেনি, আমার মাঝেই তারা নূতন শক্তি, নূতন জীবন, নূতন আলোক নিয়ে এসেছে। এ মুক্তের দল অমর!’ বিভীষিকা কাঁপিয়া উঠিয়া বলিল, – ‘আমার চেন না? আমি শূঙ্খল। তুমি যাই বল, তোমাকে হত্যা করাই আমার ব্রত, মুক্তিতে বন্ধন দেওয়াই আমার লক্ষ্য। তোমাকে মরতে হবে!’ দুরন্ত পথিক দাঁড়াইয়া বলিল, – ‘মারো,– বাঁধো, – কিন্তু আমাকে বাঁধতে পারবে না; আমার তো মৃত্যু নাই! আমি আবার আসব!..........সহস্র প্রাণের উদ্বোধনই তো তোমার মরণের সার্থকতা। নিজে মরিয়া জাগানোতেই তোমার মৃত্যু যে চিরজাগ্রত অমর!’ নবীন পথিক তাহার তরুণ বিশাল বক্ষ উন্মোচন করিয়া অগ্রে বাড়াইয়া দিয়া কহিল, – ‘তবে চালাও খঞ্জর!’
সত্যিই বলতে, রাশেদকে আমার এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা মনে হয়েছে। সে আসল বাংলাদেশীর প্রতিচ্ছবি। সে সুবিধাভোগী কোন পরিবারে জন্ম নেয়নি। এসি রুমে শহুরে আরাম আয়েশ তার ভাগ্যে জুটেনি। দরিদ্র দিনমজুর বাবা কষ্ট করে টাকা উপর্জন করে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় পাঠিয়েছে। সেই রাশেদ নিজের জন্মদাতা পিতাকে বন্দুকের আগায় রেখে লক্ষ-কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছে, ডিবি পুলিশ চোখ-হাত বেধে ধরে নেয়ার পর তো সে তো দমে যেতে পারতো। কিন্তু সেটা সে করেনি। আসল সাহস দেখিয়েছে। এতদিন আমরা যাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধি ভেবেছি, আসলে তাদের সেই চেতনা ভুল। তারা একাত্তরেও ছিলো সুবিধাবাদী আর এখন স্বাধীনতা ব্যবসায়ী। তারা ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ নামের গল্প লিখে, সিনেমা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে, কিন্তু লক্ষ-কোটি জনতার কথা বলেনি । দিন মজুরের ছেলে রাশেদ তো সেই দুঃসাহসের কাজটি করতে পেরেছে, লক্ষ-কোটি জনতার কষ্টের কথা সাহসের সাথে বলতে পেরেছে।
রাশেদ আর কেউ নয়। লক্ষ কোটি জনতাই রাশেদ।
#আমি_রাশেদ, #I_m_Rashed, #Stand_for_Rashed
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৫১