ছোটবেলায় আমাদের শেখানো হতো- শিক্ষক-শিক্ষিকারা হচ্ছে বাবা-মায়ের মত।
সামাজ এরকমই একটি অদৃশ্য বাধন তৈরী করে দিয়েছিলো।
দীর্ঘদিনের ‘সামাজিক মূল্যবোধ’ বলেন আর কালচার বলেন এই সম্পর্কের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে।
কিন্তু অতি সম্প্রতি মিডিয়ায় বিভিন্ন নাটক প্রচারিত হচ্ছে, যেটা দেখে আমার মনে হয়েছে সমাজে বহুদিনের গড়ে ওঠা সেই বাধনে ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মানে- শিক্ষিকা ছাত্রদের সম্পর্ক মা-সন্তানের মত নয়, প্রেমিক-প্রেমিকার মত। যেমন : নাটক-‘ম্যাডাম তোমাকে ভালোবাসি’, নাটক-‘লোনলি টাচ’, দ্বীপ্ত টিভিতে প্রচারিত ‘যা কিছু ঘটে যায়’, দেশটিভিতে প্রচারিত ‘নাইন এন্ড হাফ’ প্রত্যেকটি নাটকে শিক্ষিকার সাথে ছাত্রের প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে।
অনেকে হয়ত বলতে পারেন, “আরে ভাই আছেন কোথায়, আজকাল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটছে, যার প্রতিফলন এই নাটক।” আমি বলবো- হতে পারে। কিন্তু দুই-পাঁচ জন ব্লু ওয়েল গেম খেললো, আর আপনি সেটা নিউজ আর টকশো করে সারা দেশেব্যাপী প্রচার করে দিলেন, এখন ব্লুয়ে ওয়েলের গ্রাহক হয়ে গেলো পাচ-দশ লক্ষ।
যেই জিনিসটা কিছু অংশে সীমিত আছে সেটা কিছু অংশেই সীমিত থাকতে দিন, আপনি নাটক বানিয়ে, রসিয়ে-রসিয়ে সেটা পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিলেন, এখন ছাত্র-শিক্ষিকার মধ্যে সেই সম্পর্কটা কি আর থাকবে ? আর এই বাধন ভেঙ্গে দিলে দীর্ঘমেয়াদী ও ফিল্ড পর্যায়ে তা কতটুকু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, সেটা কি চিন্তা করেছেন ?
প্রতিদিন খবরে দেখেছেন- খুন, ধর্ষণ, হত্যা, রাহজানির খবর। অনেকেই বলছেন- এগুলো সমাজে মূল্যবোধ ধ্বংসের কারণ। কিন্তু সেই মূল্যবোধ’টা কিভাবে তিলে তিলে ধ্বংস করা হচ্ছে সেটা নিয়ে কেউ ভাবছে না। পশ্চিমাবিশ্বে কিংবা ভারতে যে বিষয়গুলো স্বাভাবিক, বাংলাদেশে সেটা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেই কালচারটা যখন আপনি বাংলাদেশে নাটক সিনেমার মাধ্যমে আমদানি করলেন, তখনই ঘটলো সমস্যা। আমার মনে হয়, সমাজে বাধন ভাঙ্গার এই প্রক্রিয়া নিয়ে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের সচেতন হওয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০০