শুটার আসিফ হোসেন খান
বাংলাদেশকে কমনওয়েলথ গেমসে
স্বর্ণ পদক এনে দিয়েছিলেন
২০০৪ সালে। খুব সম্ভবত
২০০৬ সালে, মানে স্বর্ণপদক
দেবার দুই বছর পরেই বাংলাদেশের
পুলিশ পিটিয়ে তাঁর হাত ভেঙ্গে
দিয়েছিলো। পুলিশের আক্রমণের
সময় আসিফ বার বার বলছিলেন
তিনি শুটার আসিফ, হাতে যাতে না
মারে। পুলিশ এগুলো
শোনেনি।“পুলিশের কাজ পুলিশ
করেছে কামড় দিয়েছে পা’য়”...
আসিফ বলেছিলো যে এখন তার
হাত দিয়ে রাইফেল ধরে নিশানা
করতে বড় কষ্ট হয়। পুলিশের সেই
লাঠির বাড়ির কারনে আজও তাঁর
হাত কাঁপে।আসিফ হারিয়ে
গেছেন...আর তাঁর খোঁজ পাইনি
কখনো।
বিমল চন্দ্র তরফদার নামে
আমাদের দেশে এক স্প্রিন্টার
ছিলেন। সঠিক সাল মনে নেই তবে
খুব সম্ভবত ৯৪/৯৫ সালের
কোনো এক সাফ গেমসে তিনি
বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম মানব
হয়েছিলেন। ভারতের, শ্রীলংকার
বাঘা বাঘা দৌড়বিদদের হারিয়ে
তিনি স্বর্ণপদক এনে দিয়েছিলেন
বাংলাদেশকে। তারপর অলিম্পিক
বা কমনওয়েলথ গেমসের ভিলেজ
থেকে তিনি পালিয়ে গেলেন একটা
সুন্দর জীবনের আশায়। আর ফিরে
আসেন নি। এখন খুব সম্ভবত
আমেরিকায় থাকেন।
ফাহিম মোহাম্মদ নামে ১১
বছরের এক ছেলে। ৭ বছর বয়সে
তাঁর বাবার সাথে ফ্রান্সে পাড়ি
জমিয়েছিলেন অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট
হিসেবে। বাবার সাথেই থাকতেন
রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের
জন্য সুনির্দিষ্ট করা ক্যাম্পে।
সেখান থেকেই তিনি (খুব সম্ভবত
২০১২ সালে) ফ্রান্সের জুনিয়র
দাবার চ্যাম্পিয়ন হলেন।
চ্যাম্পিয়ন হবার পর পর
বাংলাদেশের মিডিয়া “আমাদের
বাংলাদেশের ছেলে, আমাদের
বাংলাদেশের ছেলে বলে খুশিতে খুব
কেলাচ্ছিলো। একের পর এক
রিপোর্ট লিখে এমন একটা ভাব
করছিলো যেন ফাহিম বাংলাদেশের
হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে”
উদাহরণ দিতে গেলে এমন অসংখ্য
উদাহরণ দিতে পারব। কি করে দেশ
থেকে মেধা গুলো হারিয়ে গেছে, কি
করে একজন মেধাবীর সাথে
অন্যায় আচরণ করে তাঁর
ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিয়েছে এই
বাংলাদেশ, এসবের অসংখ্য দুঃখ
গাঁথা আমার জানা রয়েছে।
বোধকরি আমাদের অনেকেরই
সেগুলো জানা।
লেখাটা লিখলাম মার্গারিটা
মামুনের স্বর্ণ পদক জিতবার পর
আমাদের কিছু মিডিয়া আর কিছু
জনতার উচ্ছাস দেখে। আমাদের
মেয়ে, আমাদের দেশের ভ্রুণ
রয়েছে, আমাদের রক্ত রয়েছে,
ইত্যাদি বলে যে আনন্দের আঙ্গুল
চাটাচাটি লক্ষ্য করেছি তা
আমাকে ভীষন আনন্দ দিয়েছে
সন্দেহ নেই।
মার্গারিটা বাংলাদেশের হয়ে
জুনিয়ার লেভেলে এক সময়
খেলেছিলেন কিন্তু অবকাঠামো
আর সুযোগের অভাবে তিনি
বাংলাদেশের হয়ে আর খেলেন নি
এই কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়ে
পত্রিকাগুলো প্রমাণ করতে
চাইছেন মার্গারিটা একবার না
একবার বাংলাদেশের ছিলেন সুতরাং
এইবার অলিম্পিকে জিতে যাওয়া
স্বর্ণপদকে বাংলাদেশের ভাগ
রয়েছে।
হাসি পায়। যে ঘটনাটি হচ্ছে
লজ্জার আর মাথা হেঁট হয়ে যাবার
মত, সেটি যখন গর্ব করে চাউর
করা হয় তখন এইসব নির্বুদ্ধিতা
নিয়ে কি মন্তব্য করব সেগুলোই
আসলে মাথায় আসে না।
এই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি,
সিস্টেম, দূর্নীতি কিংবা সরকারী
ডাকাতির মধ্যে থেকে অনেকেই
নিজের জীবন নিয়ে এই দেশ থেকে
পালায়।
যারা এতকিছুর পরেও এই দেশে
থেকে যান তাঁদের কারো হাত
ভেঙ্গে দেয়া হয়, কারো পা, কারো
মাথা, কাউকে ক্রস ফায়ার।
কেউবা একটা হলের জন্য সংগ্রাম
করেন কেউবা সুন্দরবন বাঁচাবার
জন্য।
নোবেল পদক প্রাপ্ত যে লোকটি
এই দেশের, যে লোকটি দেশের জন্য
এত সম্মান বয়ে নিয়ে আসলেন, যে
লোকটি বয়ে নিয়ে গেলেন
অলিম্পিক টর্চ সেই লোকটি এই
দেশের রাজনীতিতে হয়ে গেলেন
সুদখোর ও নিকৃষ্ট আর রাশিয়ার
একটি কিশোরীকে বাংলাদেশী
বানিয়ে সর্বোচ্চ নির্লজ্জ
চেষ্টার সকল রকম আয়োজন
দেখতে দেখতে ক্লান্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:১০