রেলগাড়িটি ঝমঝম করে দৈনিক এই স্টেশনটি যখন পার হয়ে যায় আমি তখন বসে থাকি স্টেশনের ছোট্ট বেঞ্চিটাতে। স্টেশনটি সর্বদা নিঃশব্দে ভরপুর। আমি স্টেশনের বেঞ্চে বসে বসে হাই তুলি বা মাছি তাড়াই বা জোনাক পোকা গুনি। সেই কবে জানি আমি ভুলে গেছি কবে আমি তখন স্টেশনের পাশ কেটে যাচ্ছিলাম, আমাকে স্টেশন মাস্টার বললো কিছুক্ষন থাকতে, সে এই আসছে! আমি আচ্ছা বলে থেকে গেলাম। সেই কিছুক্ষন হয়ে গেলো কিছুদিন, এরপর তা হয়ে গেলো অনেক অনেক দিন। আমি হয়ে গেলাম ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার। এখানে কেউ কখনো আসে নি, কখনো আসবে বলে মনেও হয় না। রেলগাড়িটি যখন ঝম ঝম করে চলে যায় তখন আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকি কেউ হয়তো নামবে, নাহ রেলগাড়িটিও ফাঁকা ময়দান যেনো। জানালার ধারে কাউকে কোনোদিন দেখিনি। এক ঝলকের জন্য রেলগাড়ির চালকটিকে যেনো আমি দেখতে পাই প্রতিদিন, এতেই আমার বেশ লাগে।
রেলগাড়ির চালক ও যখন স্টেশনটি পার হয়ে যায় সে দেখতে পায় দৈনিক বেঞ্চিতে বসে থাকা মানুষটিকে। সেও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে কোনোদিন হয়তো স্টেশনটি থেকে কেউ রেলগাড়িতে চড়ে বসবে। কেউ কখনো আসে নি। সে বিশাল এই অজগরের মতো রেলগাড়িটিকে নিয়ে এঁকে বেঁকে চলতেই থাকে। ভাবতে থাকে বহুদিন আগের কথা যখন তাকে এক পাক ঘুরে এসো রেলগাড়ি নিয়ে, আমি আসছি তা বলে চালকটি কই যেনো চলে গেলো। এরপর এক পাক হয়ে গেলো বহু পাক। রেলগাড়ির চালক বা স্টেশনের মাস্টার কই হারিয়ে গিয়েছিলো কেউ জানতে পারে নি, তাদের খোঁজার জন্য ছাপা হয়নি কোনো বিজ্ঞাপন। শুধু জানা হয়েছিলো এটুকুই যে নতুন দু'জন মানুষের এক জীবন আঁটকা পড়ে গেলো এখানে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো একে বেকে চলা সমান্তরাল রেললাইন গুলো। নির্বিকার চিত্তে জ্বলতে থাকলো জোনাক পোকা গুলো। কে জানি লেখে ফেললো তড়িঘড়ি করে তাদের গল্প। কিন্তু সে গল্প কেউ পড়লো না কখনো, তাদের গল্প কেউ পড়ে না।