বছরের শুরুর দিকে যখন আমি ঘুমের লেনদেন করতে ব্যাংকে গেলাম দেখলাম আমার বিস্তর ঘুম জমে আছে গতবছরের। ব্যাংকের লোকরা মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললো "কি ব্যাপার বলুন দেখি মশাই। এত কম ঘুমে জীবন চলবেটা কি করে? আপনার ঘুমের হিসেব মিলেতে গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড। আপনি কি আপনার ঘুম নিয়ে কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনা করছেন? ঘুমগুলো কি বিলি করতে চান? নাকি জমা করতে চান পাঁচ-দশ বছরের জন্য। ফেরত যখন পাবেন সাথে পাবেন আরো অনেক ঘুম ইন্টারেস্টসহ। আগ্রহী থাকলে যোগাযোগ করুন"। এ বলে লোকটি আমাকে তার কার্ডটা বাড়িয়ে দিলো। কার্ডটা দেখতে সুন্দর। চারপাশে চারটা মেঘ আঁকা। দেখলেই ঘুম ঘুম পায়। আমি মাথা নেড়ে রেখে দিলাম। আজকাল জীবনে ঘুমের বেশ দাম। একটু ঘুমের জন্য মানুষ কত কি করে ফেলছে। সেখানে কিনা আমি দিব্যি এত তাজা ঘুম বগলদাবা করে ঘুরে বেড়াচ্ছি, সেটা দেখে সবাই হিংসায় তাতিয়ে যাচ্ছে। আমার কিচ্ছুটি করার নেই। এ জন্য আমাকে কম কাঁঠ-খড় পোড়াতে হয়নি। সারা দিন রাত চা-কফি গিলেছি, যতটুকু কমে ঘুমিয়ে পারা যায় তাই ই করেছি। এত কষ্ট তুমি করো বাপু তাহলে তুমিও এত ঘুমের মালিক হবে একদিন।
তবে এত ঘুম বিক্রী করে কিন্তু আমি এখন দিব্যি ধনী হয়ে যেতে পারি এখন। ভেবে একটা প্রশান্তির হাসি দিলাম। কিন্তু তা আমি করছি না, ঘুমগুলো জমিয়েছি একজনকে দেবো বলে। ভেবেছি তাকে সবচেয়ে দামী জিনিসগুলো যখন দিবো সে তখন অনেক খুশী হবে। এত ইউনিক জিনিস কে দিয়েছে আগে! আমার ভালো লাগে তা ভাবতেই। তাকে দেখলেই চলমান গল্প মনে হয়। তাকে আসলে ঘুম দেয়াই যায়। কিন্তু তাকে ঘুমগুলো দিতে সাহসে কুলোচ্ছে না। নাকি আরো ঘুম বাড়িয়ে দেবো? ভাবতে ভাবতে আরো দিন মাস বছর চলে গেলো। চলমান গল্পটি আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আমি এখনো ঘুমগুলো দিতেই পারলাম না। এভাবে করে পরের বছরের ঘুমের লেনদেন লাইনে আমাকে আবার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। ব্যাঙ্কের লোক আবার মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললো "এ দেখি এলাহী কান্ড!" আমি বোকার মতো হাসতে লাগলাম।