আমরা অনেকেই ভূতের সিনেমা দেখতে ভয় পাই কেনো?
যেখানে হলিউডের বেশির ভাগ ভৌতিক সিনেমা সেইম টাইপের হরর এলিমেন্ট ব্যবহার করে। হঠাত চমকে দেয়া শব্দ, দরজার ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে খুলে যাওয়া, শাদা পাউডার মাখা ভূত কিংবা সিজিআই ইফেক্ট- যা দেখেই ললনারা চাদর দিয়ে মুখ ঢাকে। আর বলিউডের কথা তো বাদই দিলাম।
আমরা আসলে সবাইই জানি যে সিনেমা স্টুডিওতে সেট সাজিয়ে-মেক আপ মাখিয়ে বানানো কিছু দৃশ্য ধারন। আর ইউটিউবে গেলেই বিহাইন্ড দ্যা সীন ফুটেজে সব রহস্য ফাঁস!
ভয়ের কারনটা আসলে সেটা নয়।
তাহলে?
আমি আমার মত করে ব্যাখ্যা করছি। জানি না আপনাদের সাথে মিলবে কিনা।
আমরা ছোটবেলা থেকেই ভুত-জ্বীন-পরীর গল্প শুনে বড় হয়ে এসেছি। মেছো ভূত, শ্মশানের পোড়া ভূত, অপঘাতে মরা ভূত- ভুতোপ্রকারের অভাব নেই। লোডশেডিং হলেই হারিকেনের আলোয় জমে উঠতেও গল্পের আসর। শিশু বেলায় বুকে ধরফর ওঠানো জ্বীনের ঘটনা শুনেও আনন্দ পেতাম।
সেই সাথে যার যার ধর্ম তো আছেই। আমাদের ইসলাম ধর্মেই আছে আল্লাহ আমাদের পাশাপাশি জ্বীন জাতিকেও সৃষ্টি করেছেন। আর আমরা বড় হওয়ার সময়টাতে বাবা-মা-দাদা-দাদীর মুখে এই জ্বীন ঘটিত অনেক ঘটনা শুনেছি। আমরা বাঙালিরা নিজেদের ধর্মভীরু হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসি। পালন করি আর না করি। সেসব ঘটনাকে আমরা প্রশ্ন তোলা ব্যতীত মেনে নিই। যে হ্যাঁ! এরকম হয়তো ঘটেছিল।
সিনেমা দেখার সময় আচমকা শব্দ হলে অতিসাহসীরও পিলে চমকে যেতেই পারে। এটাতে সিনেমার ক্রেডিট বলে আমি মনে করি না। অন্ধকারে ‘হাউ!’ করে চিৎকার করে উঠলে আপনিও ভয় পাবেন।
আমরা সিনেমা দেখার সময় নিজেদের অবচেতন মনে নিজেদের ভৌতিক অভিজ্ঞতা কিংবা কারো মুখে শোনা কাহিনীগুলোকে রিলেট করতে থাকি। তবে, ব্যাপারটা এমন না, যে সিনেমা দেখা আর রিলেট করা- দুটোই একসাথে করছেন আপনি। আপনার অবচেতন মনে গেঁথে আছে সেই বাস্তব ঘটনা বা শোনা কাহিনীটা। সেটার উপরেই এই সিনেমাটা প্রভাব ফেলছে।
এর জন্যই অনেকে রাতের বেলা ভৌতিক সিনেমা দেখতে ভয় পান। কারন আমরা সাধারণত রাতের বেলা ইনসিকিউরড ফিল করি। কেউ একলা ঘুমাতে ভয় পায়, কেউ বাথরুমে যেতে। যদি এমন কিছু দেখে ফেলি বাথরুমের আয়নায়? যদি অন্ধকারে কারো ছায়া দেখি তাহলে কি করব?
সিনেমা তো বিনোদনের জন্য। ভৌতিক বিনোদন দেবেই আপনাকে। কিন্তু সেটা দেখার পরের অবস্থা আপনি মোকাবেলা করতে পারবেন তো?
আমি নিজের কথাই বলি। ব্যাপক আলোচিত ‘Dabbe: Cin Çarpmasi’ সিনেমাটা আমি দেখা শুরু করি দুপুর বেলা। শেষ করতে করতে মাগরিবের আজান শেষ হয়েও ৩০ মিনিট হয়ে যাওয়ার পরে সিনেমা শেষ হয়। এই সন্ধ্যা বেলায়ও আমার বুক কাঁপছিল নিজের রুমের উজ্জ্বল আলোর নিচে বসে থেকেও।
আমি বেশ ভালোমত নাড়া খেয়ে গিয়েছিলাম সিনেমাটা দেখে। যারা দেখেছেন তারা জানেন যে শেষ দৃশ্যে দেখা যায় যে ফিমেইল ক্যারেক্টার ইব্রুকে কাঠের কফিনে বন্দি করে কবর দিয়ে দেয়া হয়। তারপর বিষধর সাপের দল তাকে কামড়াতে শুরু করে। যেটা আমাদের মৃত্যুর পরবর্তী কবরের আজাবের কথা মনে করিয়ে দেয়। যেমনটা করিয়ে দিয়েছিল ‘2012’ সিনেমাটা কেয়ামতের কথা। যদিও সেটা হরর মুভি না।
আমি আরো বেশকিছু দৃশ্যে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বা বুক ধক করে উঠেছিল নির্দ্বিধায় স্বীকার করব। কারন সিনেমাটা ইসলাম ধর্মের রীতিতে কুফুরি কালাম, খারাপ জ্বীনের প্রভাবের ভয়ংকরতম ব্যাপার গুলো তুলে ধরেছে যৌক্তিক ভাবে। এখানে এই দাব্বে আমাকে প্রভাবিত করতে পেরেছিল আমার ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে কাবু করে।
সেরকম ভাবে অন্যদের কাবু করে তাদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে। আর এখানেই একজন সফল হরর মুভির ডিরেক্টরের সাফল্য নির্ভর করে।
তবে হ্যাঁ সব সময় যুক্তি দিয়েই ভয় পেতে হবে ব্যাপারটা তেমনও না। নিছক বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে হরর মুভির তুলনা নেই।
হ্যাপি মুভি ওয়াচিং ব্লগার্স!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৩১