বিয়ের আগে মেয়ে পক্ষ ছেলেকে এক নজর দেখেই খোঁজ নেয়া শুরু করে ছেলের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে। গাছের গোড়া পোকায় কাঁটা না থাকলে ফল পাকবেই। তেতো হোক বা মিষ্টি, সেটা পরের কথা। যদি ফল নষ্ট হয় তবে তা গাছের কারনে, ফল নিজেকে কাঁটা চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে না।
আগে একটু ত্যানা প্যাচাইয়া নেই।
আমাদের জি মানে জি-বাংলা ইন্সপায়ারড গার্জিয়ানরা ছেলে-মেয়েদের গোল্ডেন এ+ নিশ্চিত করতে জেএসসি-পিএসসি পরীক্ষার আগের রাতে হোটেলের শুকনা হাড্ডির পেছনে দৌড়ানো কুত্তার মত প্রশ্নপত্রের পেছনে দৌড়ায়। যাতে উনার সুপুত্র-সুকন্যার সোনালি-রূপালি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়। বাবা-মায়ের ঘুম হারাম হয় প্রশ্ন খুঁজে আনার চিন্তায়, আর ছেলে মেয়ের ঘুম হারাম হয় ককে ওয়ার অ্যাটাকের চিন্তায়। প্রিপারেশনের জন্য চিন্তাশীল বাপ-মা ই আছে না! এত পড়ে কি ফায়দা?
ফিউচার জেনারেশনের পাবলিক পরীক্ষার ভিত্তিই শুরু হচ্ছে এইভাবে।
একটু আগে দেখলাম সিটি কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের মেধাবী মুখেরা রাস্তায় নেমে এসেছে যৎকিঞ্চিত দাবি-দাওয়া নিয়ে।
তা, কি সেইসব দাবি?
উনাদের পরীক্ষার সিট পড়েছে ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজে। সেখানে টিচাররা খুবই বেয়াদপ কিসিমের। ঘাড় ঘুরাইতে দেয় না। আর সিটি কলেজের সোনার ছেলে-মেয়েদের ঘাড়ে সামান্য সমস্যা আছে। লেখার সময় ঘাড় ঘুরায়ে ঘুরায়ে ঝাঁকানি না দিলে ব্যাথা হয় লেখার সময়। আর অল্প একটু-আধটু দেখাদেখিও করা যায় না। উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিতকরনে দেখাদেখির বিকল্প নেই। সুতরাং গুল্ডেন এ+ চাইলে ধানমন্ডির ২ নাম্বারে নেমে মোমবাতি জ্বেলে, ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম রাস্তা আটকে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। একদাবি- সিট প্ল্যানিং চেঞ্জ কর, দেশ উদ্ধার কর! যার ফলাফল অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষনা, কলেজের সুনামের ভরাডুবি ছাড়া আর কিছু দেখছি না।
এই ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত দামাল ছেলেরা মনে হয় না ঘরে ফিরবে। আর তাদের বাবা-মা রা আশা করি তাদের পুর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবেন। ছোটকাল থেকে তাদের জন্য এত কষ্ট করে পেলে পুষে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়েছেন, এই বিপদের সময় পাশে না থাকলে হয়?
শাহবাগের আন্দোলনের সময় আমি নিশ্চিত যাদের ছেলে মেয়েরা গলা ভেঙে ফেলেছিল বিচার আদায়ের দাবিতে, সেই ভেঙে যাওয়া গলার আওয়াজ বিটোফেনের ফিফথ সিম্ফোনির মত লেগেছিল তাদের বাবা মায়ের কাছে।
এই রাতের বেলা পর্যন্ত সন্তান ঘরের বাইরে এমন একটা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে আর তাদের বাবা-মা কি করছেন তা খুবই জানতে ইচ্ছে করছে। ব্যাপারটা এমন নয় যে হুট করে আজকেই সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। গতকাল দুপুর থেকেই এই নাটক শুরু হয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল শেষ করে রাত আর তারপরে আরেকটা পুরো দিন চলে গেল।
আজকে সারাদিন চিৎকার করে গলা ভেঙে ফেলা ছেলেটার আওয়াজ কেমন লাগছে বাবা-মায়ের কাছে তা জানতে খুব ইচ্ছে করছে।
নকল করার অধিকার আদায়ের দাবিতে যারা আন্দোলন করে নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাংতে পারে, তারাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। ভাবলে দেয়ালে মাথা ঠুকতে ইচ্ছে করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৯