এইমাত্র জানতে পারলাম যে আমার অত্যন্ত প্রিয় আলেম ড: আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সরক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। আমি মারাত্মক শোকাহত।
আজ ছিলো ছুটির দিন। সারাদিন কতভাবে কত কি করলাম। বহু রকমের রান্না বান্নাও করলাম। কিন্তু যখন সবকিছু প্রস্তুত তখনই নেটে দেখলাম এই ভয়াবহ দু:সংবাদটি। আমি থেমে গেলাম। আবারও ভুলে যাওয়া অনুভূতি ফিরে এলো----প্রত্যেক প্রানীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে।
আমি আমার অবসরে ইউটিউবে ভিডিও দেখি। আর অবশ্যই ড: আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের নানান লেকচার শুনি। আরও অন্য আলেমের বক্তব্য ভালো লাগলেও উনার বক্তব্য সবথেকে বেশী ভালো লাগত।
এই লোকটি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাদীস শাস্ত্রের উপর পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করে সম্ভবত ১৯৯৮ সালে দেশে ফিরেন। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। সেখানে তিনি চাকুরী জীবন দীর্ঘায়িত না করে দ্বীন প্রচারে ব্যপক কর্মসূচী গ্রহন করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে খ্রিষ্টান মিশনারীগুলো মানুষকে ভুল বুঝিয়ে খ্রিষ্টান বানাচ্ছে,আর তিনি এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা স্বরূপ ব্যপক ইসলামী দাওয়াহ প্রচার করেন। অনেককে পথে ফেরান এবং দাওয়াহ বেগবান করেন।
তিনি শিরক এবং কুফরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহন করেন। তিনি সমাজে প্রচলিত সকল অন্ধবিশ্বাস,কুসংষ্কার ও বিদআতের বিরুদ্ধে তার লেখা ও কুরআন - সুন্নাহ ভিত্তিক বক্তব্য দ্বারা অবস্থান গ্রহন করেন। এ কারনে তাকে শিরক-বিদআতে অভ্যস্ত মানুষদের কটু কথা,অপপ্রচারের সম্মুখিত হতে হয়েছে,বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনই থামেননি।
তিনি একজন হানাফী আলেম কিন্তু সচেতনভাবে এই মাযহাবটির ব্যাখ্যা গ্রহন করেছেন। মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে নিজে স্ট্যাডী করে যেটাকে কুরআন-সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী মনে করেছেন সেটাকেই গ্রহন করেছেন এবং প্রচার করেছেন। তিনি রেফারেন্স ছাড়া কখনও মনগড়া কথা বলেননি। কেউ তার বিরোধীতা করলে তিনি সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ ভাষায় সুন্নাহ মোতাবেক সমালোচনা করেছেন বা জবাব প্রদান করেছেন। কাওকে কথার মাধ্যমে আঘাত করেননি।
যেখানে হানাফী অনেক আলেমগন আহলে হাদীস নামক সহি সুন্নাহ অনুসরনকারী একটি দলকে নানাভাবে সামালোচনা,অপবাদ,কুৎস্যা রটিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে এবং কখনও নির্যাতনে ইন্ধন যুগিয়েছে,সেখানে তিনি আহলে হাদীসগনের সাথে সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাদেরকেও যুক্তিসঙ্গত উপায়ে ও সুন্নাহর ভিত্তিতে সমালোচনা করে এমন পরিবেশ তৈরীর চেষ্টা করেছেন যেখানে উভয়ে সুন্নাহর আলোকে একই প্লাটফর্মে আসতে পারে। অন্য আলেমদের সাথে ওঠাবসা করতেন এবং হৃদ্যতা তৈরী করে নানান মতদ্বৈততা কমিয়ে আনার চেষ্টায় রত ছিলেন তিনি।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য নিয়ে বাংলাদেশে এই আলেমটির মত চিন্তিত আর কাওকে দেখিনি। সবসময় মুসলিমদের পারষ্পরিক ঝগড়া থামিয়ে একই পথে চলার কথা বলতেন।
তিনি আস সুন্নাহ ট্রাষ্ট নামক একটি ট্রাস্ট গঠন করে দাওয়াহর কাজ পরিচালনা করেছেন। আমি এবং আমার বন্ধু মিলে সেটার ব্যপকতা প্রত্যক্ষ করেছি। নানান বয়সীদের কুরআন সুন্নাহ জ্ঞান বিজ্ঞান শেখানোতে তিনি অগ্রগামী ছিলেন। মানুষকে কুরআন সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান প্রদান করার ক্ষেত্রে তিনি কার্পন্য করেননি। বিদেশ এবং দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত এ লক্ষে ভ্রমন করেছেন।
আমি যখনই তার কোনো লেকচার শুনেছি,মন থেকে কেবল দোয়াই করেছি। আল্লাহর কসম ! আমি এই আলেমকে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই অনেক বেশী ভালোবাসি। আজ উনি সড়ক দূর্ঘটনার মাধ্যমে তার মালিকের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন।
মৃত্যু কতটা সত্য এবং অবশম্ভাবী তা আমরা পুরোপুরি ভুলে গেছি। কি অবাক কান্ড !!! আমরা ফিরে যাবার পরোয়ানা হাতে নিয়ে ঘুরছি ,অথচ দুনিয়াতে ডুবে আছি। কি মারাত্মক ভুলের মধ্যে বসবাস করছি !!! আমাদের আচরণ প্রমান করে,যেন আমাদের মৃত্যুই হবে না !! অথবা যেন তা শত বছর পূর্ণ হবার পূর্বে হবেনা !!
ইয়া আল্লাহ ! আপনি আমার এবং তার মালিক, আপনি দয়ার স্রষ্টা,আপনি খালিক,মালিক,,জব্বার,রহিম,কুদ্দুস,কাদীর,আপনি রহমান, আপনি আপনার বান্দাটিকে ক্ষমা করে দিন। তার জীবনের সকল সগিরা ও কবীরা গুনাহ পুরোপুরি ক্ষমা করে দিন। তাকে আপনার শাস্তি থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি দিন। আপনি তার অভিভাবক হয়ে যান। আপনি তাকে কবরে মহা শান্তিতে রাখুন ! জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন !!! আমার অন্তরের এই আকূতি কবুল করুন !! আর বাংলাদেশকে ইসলামের জন্যে কবুল করুন ! মজলুমকে উদ্ধার করুন ! যালিমকে ধ্বংস করুন !!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:৫০