মূল নিঙ্ক
‘এখন নিয়ম হচ্ছে কেন্দ্র থেকে ফলাফল ঘোষণা করা। সেক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার কেন্দ্র থেকে এক ফল ঘোষণা করলেন আর নির্বাচন কমিশনে পাঠালেন উল্টো করে। সেই ফল নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা করা হলো।
সেভাবেই রিটার্নিং অফিসার বসানো হচ্ছে। আর মিডিয়ার কোনো ত্যাদড় মার্কা রিপোর্টার যদি আসল খবর পাঠায়—সেটা গেজেট না করলেই হলো। সুতরাং আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করে ফেলা কোনো ব্যাপার না।
প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেছেন, ‘আগে উনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সারাদেশের। এখন শুধু ঢাকার প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। মন্ত্রীরা সব ঢাকার মন্ত্রী হয়ে গেছেন। মন্ত্রীদের ঢাকার বাইরে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।’
সোমবার চ্যানেল আই-এর টকশো ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মূল্যায়ন করেন।
এবিএম মূসা বলেন, ‘কথা বলতে গেলে আবার আমাকে কে কোন বিপদে ফেলে কে জানে! বস্তুত ঢাকা শহর এখন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। এ কারণে আমি এখন নতুন নাম দিয়েছি গণপ্রজাতন্ত্রী ঢাকার প্রধানমন্ত্রী।’
মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় ওই টকশোতে এবিএম মূসা আরও বলেন, ‘অবরোধ চলছে। সামনে হয়তো আরও হবে। আমি বৌমাকে বলেছি মাসখানেকের চাল-ডাল কিনে রাখতে। এই কথা ’৭১ সালে আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘অবরোধে ঢাকা শহরে তো জিনিসপত্র আসবে না। এই পরিস্থিতিতে শুধু শহরের মানুষই বিপাকে পড়বে না, গরিব চাষীরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। আপনাকে আমি ভোট দিয়েছি আমাকে রক্ষা করতে। আপনি ঢাকা শহর রক্ষা করছেন। সারাদেশকে রক্ষা করতে পারছেন না কেন? এখনো সময় আছে, দুইজন বসে একটা সমাধানে আসুন।’
এ সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মূসা বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বলেন রাস্তায় আসেন? এটা কি কুস্তি খেলা? রাস্তায় নামতে ডাকলে আপনিও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে রাস্তায় নামুন।’
সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটা প্রহসন মঞ্চস্থ হচ্ছে। সেই প্রহসনটা দেখে মানুষ আমোদ পাবে। আর যারা ভোটে দাঁড়িয়েছে, তার শতকরা ৯০ ভাগই এলাকায় যেতে পারবে না। আমার এলাকায় তো এক প্রার্থীর গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।’
ছয়জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন—সঞ্চালকের এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এবিএম মূসা বলেন, ‘অনেক কমই হয়েছে। আমার ধারণা শ’ খানেক হবে। এখনো প্রত্যাহারের সময় আছে। এই প্রত্যাহারটা দুইভাবে হচ্ছে। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, হয় বন্দুকের মুখে, না হয় টাকা দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো নির্বাচন হচ্ছে ১৪ দলের মধ্যে। নিজেদের সঙ্গে নিজেদের বোঝাপড়ার হিসাব চলছে।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—গৃহপালিত বিরোধী দলটা কে হবে? হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও হতে পারে, জাসদও হতে পারে। সেজন্য এখন বোঝাপড়া হবে কে কত আসন নেবে, তাই নিয়ে। শুনেছি এরশাদ ৭০টা আসন চেয়েছেন। সেটা না দিলে তিনি নির্বাচন করবেন না। তাকে ৭০টা দিলে থাকে ২৩০টি। অন্য দলকেও দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকছে না। সংবিধান পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না। আবার যারা স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়াবে, তাদেরকেও তো কিছু দিতে হবে। স্বতন্ত্র কিছু লোককে হয়তো বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হবে। পরে তারা ফিরে আসবে। একটা মজার নির্বাচন হবে। ঘরে বসে বসে টেলিভিশনে দেখব।’
তিনি বলেন, ‘এমনিতে নিয়ম আছে নির্বাচনী কেন্দ্রের নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে কেউ ঢুকতে পারবে না। এবার সেখানে সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের ঢোকা নিষিদ্ধ করে দাও, যাতে ভেতরে কি হচ্ছে তা জানা না যায়। আর বিদেশি পর্যটক? ইইউতো ইতোমধ্যে তাদের কথা বলেই দিয়েছে। আর যারা আসতে চায়, তাদের ভিসা না দিলেই হলো যে, আমাদের নির্বাচনে বিদেশি পর্যটক দরকার নেই।’
এবিএম মূসা বলেন, ‘এখন নিয়ম হচ্ছে কেন্দ্র থেকে ফলাফল ঘোষণা করা। সেক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার কেন্দ্র থেকে এক ফল ঘোষণা করলেন আর নির্বাচন কমিশনে পাঠালেন উল্টো করে। সেই ফল নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা করা হলো।
সেভাবেই রিটার্নিং অফিসার বসানো হচ্ছে। আর মিডিয়ার কোনো ত্যাদড় মার্কা রিপোর্টার যদি আসল খবর পাঠায়—সেটা গেজেট না করলেই হলো। সুতরাং আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করে ফেলা কোনো ব্যাপার না। আমাদের কারো কিছু করার নেই। অবস্থা ’৮৬ সালের নির্বাচনের মতো হবে। তখন দুই নেত্রী ঘোষণা করেছিলেন, এরশাদের নির্বাচন করবেন না। আমি তখন বিএসএসের প্রধান। মনে করলাম, নির্বাচন হবে না। হলে একতরফা হবে। বাসায় চলে যাই। আমাকে বিশেষ জায়গা থেকে বলা হলো—আপনাকে সারা রাত থাকতে হবে। আমি ভাবছি চমকটা কি? রাত ১১টার দিকে জানতে পারলাম শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এসেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি নির্বাচনে যাবেন।’