মনে আছে ছোটবেলায় শারদীয়া আনন্দমেলায় পড়তাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সমরেশ মজুমদারের অর্জুন আর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের রোমাঞ্চকর সব উপন্যাস এছাড়া শৈলেন ঘোষের রূপকথার উপন্যাসও আমার বেশ ভাল লাগত ।
তাই সেই পুরোনো স্বাদ আবার ফিরে পেতে এবারে কিনলাম শারদীয়া আনন্দমেলা । কিন্তু হতাশ হলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবুর উপন্যাস ‘কাকাবাবুর চোখে জল’ পড়ে । এটি একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস । সেই বস্তাপচা কিডন্যাপিং এর গল্প । কাকাবাবুর বেশির ভাগ উপন্যাসই কিডন্যাপিং সংক্রান্ত । কোন গল্পে কাকাবাবু কিডন্যাপ হয় । কোন গল্পে কিডন্যাপ হয় সন্তু বা জোজো আবার কোন গল্পে অন্য কেউ । ‘কাকাবাবুর চোখে জল’ উপন্যাসে কিডন্যাপ হল কাকাবাবুর পাড়ার একটি বাচ্চা ছেলে । তারপর কাকাবাবু কিভাবে সেই ছেলেটিকে উদ্ধার করে আনলেন সেই নিয়েই হল গল্প ।
উপন্যাসটিতে কোন প্লটের বালাই নেই । কাকাবাবু গেলেন আর কয়েকজনকে ঠেঙিয়ে ছেলেটিকে নিয়ে এলেন এই হচ্ছে গল্প । আর সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই উপন্যাসে সন্তু বা জোজোর সেরকম কোনো ভূমিকা নেই । কেবল মুখ দেখানোর জন্যই তার উপন্যাসে হাজির এরকম ব্যাপার আমি প্রথমবার দেখলাম ।
উপন্যাসটি পড়তে গেলে মনে হয় কেবল মাত্র লেখার জন্যই যেন লেখা হয়েছে । স্রেফ কিছু পাতা ভর্তি করে দেওয়া । লেখক হিসাবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যে কিরকম অবনতি হয়েছে এই উপন্যাসটিই তার প্রমাণ ।
কিছুদিন আগেই কিনেছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উপন্যাস সমগ্র প্রথম খন্ড । এই খন্ডেই ছিল সুনীলের কিছু বিখ্যাত উপন্যাস । যেমন আত্মপ্রকাশ, অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভৃতি । কি সহজ সরল দৃপ্ত ভাষায় লেখা উপন্যাসগুলি । মানুষের বিভিন্ন অভিব্যক্তি হাসি দুঃখ রাগ কামনা কিভাবে তিনি অক্লেশে লিখেছিলেন । চকচকে ছোরার ফলার মত ছিল এক একটি উপন্যাস তাঁর । আর আজ সেই লেখকের এরকম বাজে লেখা পড়তে আমার একটুও ভাল লাগল না । অবশ্য কাকাবাবুর উপন্যাসগুলির সাথে এগুলির তুলনা চলে না । তবুও কাকাবাবুর কিছু পুরোনো উপন্যাস নতুনগুলির থেকে অনেকাংশে ভাল ছিল । যেমন বিজয়নগরের হীরে, সবুজ দ্বীপের রাজা, মিশর রহস্য, কাকাবাবু ও বজ্রলামা, নীলমূর্তি রহস্য প্রভৃতি । আর এই বিষয়ের উপর কাকাবাবুর আরেকটি উপন্যাস আছে । সেটি হল কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল ।
শারদীয়া আনন্দমেলার আরেকটি উপন্যাস পড়লাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপার’ । কাকাবাবুর চোখে জলের মত এত বাজে না লাগলেও শীর্ষেন্দুর উপন্যাসটি পড়েও ঠিক মন ভরল না । এরকম উপন্যাস শীর্ষেন্দু অনেক লিখেছেন । মনে আছে স্কুলে পড়ার সময় যখন শীর্ষেন্দুর ঝিলের ধারে বাড়ি, গৌড়ের কবচ বা পটাশগড়ের জঙ্গলের মত উপন্যাস পড়েছিলাম তখন কি ভালোই না লেগেছিল । সেরকম ভালো লাগা অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপারে পাওয়া গেল না ।
মনে হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত লেখকেরা তাঁদের প্রতিভার শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন । লেখার মধ্যে সেই উদ্যম বা নতুনত্ব আর নেই । দেখা যাক নতুন লেখকেরা কেউ হাল ধরেন কিনা ।