একমাত্র মনে হয় আমাদের দেশেই (ভারতে) পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে তা হয়ে যায় একটা খবর আর যারা ফার্স্ট সেকেন্ড হয় তারা হয়ে যায় সেলিব্রিটি ।
এর মধ্যেই বেরোল মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট । আর এই রেজাল্ট নিয়ে প্রত্যেক বছরের মত এবছরও দেখা গেল মিডিয়ার বাড়াবাড়ি । আমাদের দেশের মিডিয়া যে কত দায়িত্বজ্ঞানহীন তা প্রমান করে পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তাদের এই অহেতুক প্রচারে । এখন আর বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয় না তবুও সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলগুলি নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড খুঁজে বের করে । যা আসলে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতিই করে ।
আর যে পরীক্ষায় পাঁচ ছয় লক্ষ করে পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয় এবং এক দুই নম্বরের ব্যবধানে অজস্র ছাত্রছাত্রী সেখানে দশ বা কুড়ি জনকে কেবল নম্বরের বিচারে বেছে নেওয়া নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয় । প্রথম দশ বা কুড়ি জন নয়, প্রথম অন্তত দুশো জনের মধ্যে মেধার কোন ফারাক নেই ।
মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক বা সেন্ট্রাল বোর্ডের পরীক্ষাগুলি প্রত্যেক বছরই যথাসময়ে হবে এবং তাতে বহু ছাত্রছাত্রী পাস অথবা ফেল করবে । এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা । এটা প্রত্যেক বছরেই ঘটবে । এই ঘটনা নিয়ে এত মাতামাতি করার কি আছে সেটা ভেবে পাওয়া যায় না । আসলে আমাদের দেশে শিক্ষার থেকে প্রতিযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । আমরা আসলে ভুলে যাই যে শিক্ষাটা কোন প্রতিযোগিতার বিষয় নয় । ছাত্র ছাত্রীরা কি শিখেছে সেটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত । তারা একে অপরের থেকে কত বেশি বা কম নম্বর পেয়েছে তাকে কখনই গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় ।
আর মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক কখনই জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা আইআইটির মত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নয়
আর সব থেকে হাসি পায় উচ্চ মাধ্যমিকে যখন মেধা তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করা হয় । উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতে দেখা যাবে প্রায় সবাই বিজ্ঞানবিভাগের ছাত্র ছাত্রী । সেখানে কলা বা বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের দেখা যায় না । তার মানে কি কলা বা বাণিজ্য বিভাগে কোন প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা পড়ে না । আসলে বিজ্ঞান বিষয়গুলিতে যত বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব তা কখনই কলা বা বাণিজ্য বিভাগের বিষয় গুলিতে পাওয়া সম্ভব নয় । ইতিহাস বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কি ৯০ শতাংশ নম্বর পাওয়া সম্ভব । মনে হয় না ।
তাহলে বোঝাই যায় যে উচ্চমাধ্যমিকের কখনই কোন মেধা তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব নয় । অথচ রিপোর্টাররা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রথম দ্বিতীয় স্থানাধিকারীদের খুঁজে বার করে এবং তাদের নিয়ে হল্লা আরম্ভ করে । কোন কোন সংবাদপত্র বা চ্যানেল আবার মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারীর নাম ঘোষনা করে । এটা প্রমান করে যে আমাদের মিডিয়া যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁরা কতটা অশিক্ষিত এবং তাঁদের কমন সেন্স কতটা কম । মেধা কখনও মানুষের লিঙ্গের উপর নির্ভর করে না । আইনস্টাইন যদি পুরুষ না হয়ে মহিলা হতেন তাহলে কি তাঁর বুদ্ধি আর মেধা বেড়ে বা কমে যেত ?
এরপর প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা যখন হঠাৎ করে মিডিয়ার সামনে পড়ে তখন তারা যে মানসিক চাপের সম্মুখীন হয় তার ফলেও তাদের নানা রকমের সমস্যা চলে আসতে পারে । বহু মানুষের প্রশংসা আর পিঠ চাপড়ানি খেতে খেতে তাদের যদি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস চলে আসে তার ভবিষ্যৎ ফল খারাপ হতে বাধ্য ।