আমি পুরোপুরি অহিংসা নীতিতে বিশ্বাস করি । গান্ধীজিকে আমার এইজন্য ভাল মনে হয় । এবং এটা লাগে রহো মুন্নাভাই দেখার পরে নয় । ছোটবেলা থেকেই আমার গান্ধীজির প্রতি একটা শ্রদ্ধা ছিল । যে শ্রদ্ধা গান্ধীজির প্রতি বেশিরভাগ বাঙালিরই নেই ।
মূলত বাঙালিদের সহিংস সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাব এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বনাম গান্ধীজি দ্বন্দ্ব বেশিরভাগ বাঙালিকে গান্ধী বিরোধী করেছে । প্রকাশ্যে কেউ গান্ধীজির বিরুদ্ধে বেশি কিছু কথা না বললেও আমি বহু লোককেই গান্ধীজির বিপক্ষে অসম্মান সূচক মন্তব্য করতে শুনেছি । বহু লোকই দেশভাগের জন্য গান্ধীজিকেই দায়ী করে থাকেন ।
এটা আমিও স্বীকার করি যে গান্ধীজির বহু দোষ ছিল । কিন্তু এটা বার বার প্রমান হচ্ছে যে বর্তমান পৃথিবীতে গান্ধীজির নীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ।
আমি মনে করি গান্ধীজির চরম অসম্মান সেদিন করা হয়েছিল যেদিন গান্ধী হত্যার দায়ে নাথুরাম গডসেকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল । কারন হিংসার বদলে হিংসা গান্ধীজির নীতিবিরোধী । গান্ধীজি নিজে কি চাইতেন যে তাঁর মৃত্যুতে অভিযুক্তকে ফাঁসি দেওয়া হোক । আমার মনে হয় না ।
ঠিক একই ভাবে সব ধর্মই নিজেদের অহিংসার পূজারী বলে ব্যাখ্যা করলেও আমার মনে হয় সব থেকে অহিংস ধর্ম হচ্ছে জৈন ধর্ম । তার পরেই আসবে বৌদ্ধ ধর্ম । জৈন ধর্ম এতটাই অহিংস যে তারা কোনভাবেই জীব হত্যা সহ্য করতে পারে না । যাতে কোনভাবে মুখে কোন পোকা ঢুকে পড়ে নিহত না হয় সেজন্য তাঁরা মুখে কাপড় দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখেন । এর থেকে অহিংস কি কোন ধর্মের হওয়া সম্ভব ?
আর কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় সে বিষয়ে অনেক তর্ক হয়েছে । আমার কাছে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাই হল অন্যায় । যখনই আপনি অন্যের স্বাধীনতাহীনতার কারন হচ্ছেন তখনই আপনি অন্যায় করছেন । যেমন আপনি আপনার শিশুর খেলা করার অধিকার হরন করে তাকে সারাদিন পড়াশোনায় বাধ্য করছেন আপনি অন্যায় করছেন । আবার যখন জর্জ বুশ ইরাক দখল করে সেখানকার নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার হরন করছেন তখন তিনিও অন্যায় করছেন ।
আমাদের রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম একটা খুব সুন্দর কথা বলেছিলেন যে দুর্নীতি দূর করতে পারেন কেবলমাত্র প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এবং শিশুর পিতামাতা । এছাড়া কারও দুর্নীতি দূর করার ক্ষমতা নেই । ঠিক এই একই কথা প্রযোজ্য হিংসা সম্পর্কে । যে একটা খুব সুন্দর ছোটবেলা কাটিয়েছে এবং বাবা মা এবং শিক্ষকদের কাছে ঠিক শিক্ষা পেয়েছে তার পক্ষে দুর্নীতিগ্রস্ত বা হিংসাত্মক হওয়া অসম্ভব ব্যাপার ।
দুর্নীতিমুক্ত হোন । মনে রাখুন এটা আপনার বাবা মা অথবা আপনার সন্তান কেউই পছন্দ করবে না । দস্যু রত্নাকর তার বাবা মা এবং স্ত্রী সন্তানের জন্যই ডাকাতি ও খুন খারাপি করত । কিন্তু কেউই তার পাপের ভার নিতে রাজি হয় নি ।
তাই বাচ্চাদের ভালবাসুন । গান শুনুন । ছবি আঁকুন । নদীর ধারে বেড়ান । আকাশ দেখুন । ক্ষমা করতে শিখুন (সবার আগে নিজেকে) । বন্ধুত্ব করুন । আর অনেক ভাল থাকুন ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০