বিশ্বকাপে আপনি কোন দল সমর্থন করেন?
এই প্রশ্নটির মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের প্রায় প্রতিদিনই।
আর যারা আগে থেকেই জানেন আপনি কোন দলের সমর্থক, তারা হয়তো শরীর জ্বালানো অথবা চমকপ্রদ দু একটা তথ্য দিচ্ছে দেখা হলেই।
কোন দলকে কেন সমর্থন করেন? এই প্রশ্নের আসলে একটা যথাযথ উত্তর না থাকলে কেমন কেমন যেন লাগে।
যেমন ধরুন আপনি ইতলির সমর্থক, এখন যদি আপনাকে কেউ প্রশ্ন করে, কেন ইতলি সমর্থন করেন?
জবাবে আপনি নিশ্চয় বলবেন না, ইতালির খেলোয়াড়েরা দেখতে তুলনামূলক সুন্দর তাই!!!
আশা করবো সমর্থনের পেছনে যথাযথ কারন আছে।
এ পোস্টে বিভিন্ন দেশের খেলার বৈশিষ্ট্য নিয়ে সামান্য আলোচনা করবো।
এক এক দেশের আছে এক এক রকম খেলার বৈশিষ্ট্য। কেউ করে ধাক্কাধাক্কি , কেউ চেষ্টা করে সারাজীবনেও বল পা-ছাড়া না করতে, কেউ আবার এক লাথি মেরে মাঠের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় বল পাঠিয়ে দেয়, কেউ আবার ১০ ফুট সামনে যেতে না যেতেই ১০টা পাস দিয়ে যায়................ এ রকম আরো অনেক বৈচিত্র্য!
প্রথমে যে দেশ নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হলো ব্রাজিল।
ছন্দময় ফুটবলের জন্য বিখ্যাত আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল। আপাতত ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবল খেলার কারনটা খুঁজে বের করি চলুন।
ছন্দময় ফুটবল আসলে কি? খেলোয়াড়েরা নিশ্চয় বল ছেড়ে নাচানাচি করে না!
হ্যাঁ, তারা নাচানাচি করে, তবে সেটা বল সাথে নিয়েই।
ড্রিবলিং, গতি, অপূর্ব দলীয় বোঝাপড়া, ছন্দময় অবস্থান পরিবর্তন, ছোট-বড় পাস সব কিছু মিলে ব্রাজিলের ফুটবল।
কিন্তু কেন এই নাচানাচি???? আসুন দেখি...
ব্রাজিলে ফুটবল খেলা আসে ইংল্যান্ড থেকে। তখন দুই দেশের খেলার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য ছিলোনা।
খুব সহজেই ব্রাজিলে ফুটবল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আপন করে নেয় সাধারন জনগণ। ফলে নিজেদের মত খেলা শুরু করে দেয়। ছুঁড়ে ফেলে বাঁধাধরা নিয়মনীতি। নিয়ে আসে সাম্বা নাচের ধাঁচ। নাচতে গিয়ে শুরু হলো ড্রিবলিং।
ড্রিবলিং এর আরেকটি কারণ হলো, তারা চাইতো না প্রতিপক্ষের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে!
কারন!!!! সাদা-কালোর বৈষম্য চলে আসে এখানে। স্থানীয় ব্রাজিলের অধিবাসীরা কালো। বিভিন্ন কাজে যে সব ইংলিশ শ্রমিক সেখানে কাজ করতো তারা ছিল সাদা। সংস্পর্শ থেকে বাচঁতে চাইতো কালোরা!!???
সুতরাং বর্ণ বৈষম্যই যেন জন্ম দিলো ড্রিবলিং এর!!!
আরেকটি তথ্য দেই, ব্রাজিলে এক ধরনের শারিরীক প্রতিযোগীতা হতো (ক্যাপুইরা), বাদ্য-বাজনার তালে তালে একজন আরেকজনকে আঘাত করতো কোন সংস্পর্শ ছাড়া (পা দিয়ে লাথি শুধু মাত্র)। এই সংস্কৃতিও অন্যতম একটি কারণ ড্রিবলিং এর।
যতোই দিন যেতে থাকলো, ইংল্যান্ড এর সাথে তাদের খেলার
পার্থক্য বাড়তে থাকলো। কিন্তু সব কিছু তো আর পরিবর্তন করা সম্ভব না। রক্ষনভাগে তাই কিছুটা ইংলিশ প্রভাব রয়ে যায়।
[আরেকটি মজার তথ্য। দুরপাল্লার শটের ধারণা কিন্তু ব্রাজিল শুরু করে, পরবর্তীতে ইংলিশরা এটা গ্রহণ করে। ইংলিশদের কথা ছিলো যতো সম্ভব কাছে গিয়ে শট নেয়া। (আর্জেন্টিনা এখনো এটা ধরে রেখেছে) ]
যে ইংলিশরা ব্রাজিলে ফুটবল নিয়ে গিয়েছিল, তারা এক সময় ব্রাজিলের বেশ কিছু টেকনিক অনুসরণ শুরু করে। কারণ, লাতিনরা ইউরোপিয়ানদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ততদিনে মাঠে রাজত্ব শুরু করেছে। এবং সেটা এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে। ইউরোপিয়ান লীগ গুলোতে লাতিনদের সংখ্যা হিসাব করুন তো!
(টোটাল ফুটবল, কাত্তানাচ্চিও'র প্রচলন আরো অনেক পরে)
( তাহলে ১৯৩৪, ১৯৩৮ এ কেন ইতালি চ্যাম্পিয়ন? এ কথা ভাবছেন?? মুসোলিনি, হিটলাররের সামনে দিয়ে কাপ নিয়ে যাওয়ার সাহস ছিলোনা হয়তো!)
অন্যান্য দেশের ফুটবলারদের সাথে ব্রাজিলের ফুটবলারদের তফাৎ কোথায় জানেন নিশ্চয়?
অন্যান্য দেশের ফুটবলাররা শুধুমাত্র ফুটবলার। ব্রাজিলের ফুটবলাররা একইসাথে ফুটবলার এবং এক জন শিল্পী।
বস্তির ছেলেগুলো ছেঁড়া মোজা, আর কাপড় দিয়ে বানানো বল দিয়ে খেলতে শুরু করে একসময় পরিণত হয় পেলে, জিকো, সক্রেটিস, রোনালদিনহো, রোনালদোর মত খেলোয়াড় এ। যার কারণেই বলের উপর নিয়ন্ত্রণ এতো অসাধারণ।
[ দুঙ্গার পরিচালনায় যদি সত্যিকারের ব্রাজিলের খেলা দেখতে চান তাহলে আপনাকে হতাশ হতে হবে, আগেই বলে রাখি ]
আগামী পর্বে থাকবে: আর্জেন্টিনা
(ব্রাজিলের এত প্রশংসা করলাম দেখে ভাববেন না আমি ব্রাজিলের সাপোর্টার।
আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার! কেন? সেটা আগামী পর্বে )
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১০ বিকাল ৪:১৮