ব্লগার রিপেনন্ডিল "নাস্তিকদের কাছে আমার সামান্য কিছু প্রশ্ন" শিরোনামে একটি পোষ্ট দিয়েছেন। সেখানে আমার একটি মন্তব্য এখানে পোষ্ট আকারে দেওয়া হল।
এখন আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, গতরাতে মশিউর সাহেবকে খুন করার পর আপনি কি খুন করার কাজে ব্যবহার করা ছুরিটির গায়ে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করেছিলেন?
এর উত্তর দিন হ্যাঁ অথবা না দিয়ে।
আপনি যেভাবে হ্যাঁ-না নিয়ে একমুখী অবস্থান নিচ্ছেন সেই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নটি করলাম। সব প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে হয় না।
বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা মুসলিমরাও করেছে। যুদ্ধবন্দীনি ধর্ষন, দাসী সঙ্গম এইসবি বিবাহবহির্ভূত যৌনতা। এখন আপনি নানা যুক্তি দিয়ে এগুলোকে হালাল করতে চাইবেন। ঠিক তেমনি যারা বিবাহবহির্ভূত যৌনতা সমর্থন করে তারাও নানা যুক্তি দিয়ে তাদের যৌনতাকে হালাল করতে পারে। একজন মুসলিম তার দক্ষিণ হস্তের অধিকারীর সাথে যৌনসঙ্গম করতে পারে (পুরুষরা)। এখন একজন মুসলিম পুরুষ বাজার থেকে একজন মহিলা দাসী ক্রয় করে এনে তারা ভরণপোষন ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান সাপেক্ষে তার সাথে যৌনসঙ্গম করতে পারে। ঠিক তেমনি একজন বিবাহবহির্ভূত যৌনসঙ্গম সমর্থনকারী বলতে পারে যে সে রাস্তা থেকে কোন মহিলার সাথে কথাবার্তা বলে সেই মহিলার সম্মতি আদায় করে সেই মহিলার চাহিদামত সুযোগ সুবিধা দিয়ে সেই মহিলার সাথে যৌন সঙ্গম করতে পারে। প্রথম ক্ষেত্রে দাসী মহিলার সন্তান হলে সেই সন্তানের দায়িত্ব মুসলিম পুরুষকে নিতে হবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রেও রাস্তার মহিলার সাথে সঙ্গমের ফলে কোন সন্তান হলে সেই সন্তানের দায়িত্ব পুরুষকে নিতে হয়। দুইটার মধ্যে আসলে কি মৌলিক কোন পার্থক্য আছে। হিসাব করলে দেখা যাবে বরং দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি অনেক বেশী মানবিক। কারণ দাসী মানে, একজন মানুষ যাকে কেনাবেচা করা যায়। মানুষ কিভাবে পণ্য হয়? মানুষ কেনাবেচা বিষয়টিই তো অনেক বর্বর। এক্ষেত্রে হয়রত মুহম্মদ (সাঃ) থেকে আব্রাহাম লিংকনক কি অধিক উচুদরের মহামানব নয়? আপনি আমাকে বোঝান যে একজন মানুষ দাস হয় কিভাবে? আপনি দাস ইতিহাস দেখলে বুঝবেন যে আগের সময়ে দস্যুরা বিভিন্ন জায়গায় লুটতরাজ চালাত, মানুষকে অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে এনে জোরপূর্বক বাজারে বিক্রি করত। এখন একজন স্বাধীন মানুষকে যেখানে জোরপূর্বক একটা অন্যায় লুটতরাজের মাধ্যমে দাস করা হল, সেখানে দাসপ্রথা সমর্থন করাটা কি ঐ লুটতরাজকারীকে সমর্থন করা নয়? একজন দাসীকে বিছানায় নিয়ে যাওয়া কেবলমাত্র এই অধিকারে যে, আপনি তাকে টাকা দিয়ে কিনেছেন, সেই মহিলার আপনার সাথে বিছানায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি নাই তার ধার না ধরা কি বর্বরতা নয়? এটাও তো একপ্রকার ধর্ষন। সেই হিসেবে মুসলিম ধারার বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের থেকে আমার উপরে উল্লেখিত দ্বিতীয় পদ্ধতির যৌনসম্পর্ক কি অধিক মানবিক নয়? অন্তত দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মহিলাটি স্বাধীন এবং সে ইচ্ছা করলেই সঙ্গী পুরুষকে না করে দেবার সামর্থ্য রাখে। আপনি এখন বর্তমানের পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়ে বলতে পারেন, এখন আর মুসলিমদের মধ্যে দাসপ্রথা নাই। কিন্তু আমরা তো বর্তমান ইসলাম নিয়ে কথা বলছি না, আমরা কথা বলছি সার্বজনীন ইসলাম নিয়ে, যা সব কালে, সব সময়ে প্রযোজ্য।
যাই হোক ব্যক্তিগতভাবে আমি বিবাহবহির্ভূত যৌনসম্পর্ক সমর্থন করি না। তা সেটা মুসলিম দাসীগামীতা বা যুদ্ধবন্দীনি ধর্ষন হোক, অথবা আপনার কথা অনুযায়ী কোন নাস্তিকের রাস্তায় পাওয়া কোন মহিলাই হোক। এটা আমার ব্যাক্তিগত পছন্দ যা আমার পারিপার্শ্বিক সংস্কৃতি থেকে প্রাপ্ত। আমার নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমার নিজস্ব দেশ আছে, জাতীয়তা আছে। আমি আমার সংস্কৃতি, দেশ ও জাতীয়তা নিয়ে গর্বিত এবং আমি এর মাঝে আনন্দ ও শান্তি খুজে পাই। পৃথিবীর প্রায় সব জাতিরই নিজস্ব দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতি আছে। তারা তাদের মত চলছে, আমি আমার মত চলছি। তবে এর মানে এই নয় যে তারা খারাপ আর আমি ভাল। এটা বিচিত্রতা এবং এই বিচিত্রতা পৃথিবীতে আছে, তাই পৃথিবীটা অনেক বেশী অর্থবহুল। এখন আমার নিজের সমাজের কেউ যদি মনে করে সে তার মত চলবে, বিবাহবহির্ভূত যৌনসম্পর্ক করবে তবে সেটা তার ব্যাপার। আমি এ ধরনের লোককে পছন্দ করি না। তবে এর মানে এই না যে আমি তাকে আমার মত অনুযায়ী চলতে বাধ্য করব। আবার এর মানে এই না যে যৌনসঙ্গমকারী লোক বলবে আমি তাকে পছন্দ করতে বাধ্য এবং তার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে বাধ্য। আর আপনি যে নাস্তিকদের নিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন, হিসাব করলে দেখবেন, নাস্তিকরা বরং বেশী আদর্শবাদী হয়, তারা অন্তত দু চারটা বইটই পড়ে, একটা আদর্শ ঠিক করে নিজের জন্য, একটা নৈতিকতা ঠিক করে সেই জন্য এবং ভালভাবে চলার চেষ্টা করে। এদের অনেককেই দেখা যায় মদটদ খায় কিন্তু নারীসঙ্গমের ব্যাপারে এরা অনেক খুতখুতে। এরা নারী বলতেও একধরণের আদর্শমূলক সম্পর্ককে বোঝে, গরু ভেড়ার মত যত্রতত্র সঙ্গম বোঝে না। এর বেশ সাহিত্য টাহিত্য দিয়ে, অনেক বিচার বিবেচনা করে নিজেদের জন্য আদর্শ নারীর একটা কাল্পনিক রুপ তৈরী করে। উল্টোদিকে আমাদের আস্তিকেরাই, "শেষ জীবনে তওবা করে সব গুনাহ মাফ" তত্ত্ব মাথায় নিয়ে দুনিয়ার নানা খাছরামি করে বেড়ায়। বর্তমানে যে সব লাফাঙ্গা ডিজুস দেখবেন, যারা পাচটা দশটা গার্লফ্রেন্ড, সারারাত মোবাইলে আলাপ করে, গার্লফ্রেন্ডের সাথে যৌন সম্পর্ক করে এরা প্রায় সবাই আস্তিক। এদের কথা হল প্রেম করব যেথা সেথা কিন্তু বিয়ে করব সতী স্বাধ্বী। সারা দুনিয়া লন্ডন, নিউইয়র্ক ধুরে, নাইট ক্লাব চষে দেশে এসে একজন সতী সাধ্বী নারী বিয়ে করে বাসর রাত্রে বৌয়ের সতীত্ব পরীক্ষা করে সঙ্গমের আগে পর্দা ঠিক আছে কিনা দেখে। অতএব নাস্তিকদের এইভাবে ঢালাওভাবে একটা যৌনপিপাসু একটা চেহার দাড় করাতে গেলে ভুল করবেন। আপনার বাবা যদি আগামীকাল কোন জায়গা থেকে কোনভাবে একজন দাসী খরিদ করে এনে যৌনসঙ্গম করা আরম্ভ করে, এদেশের মুসলিমরা, আপনার পাড়া প্রতিবেশী মুসলিমরাই কিন্তু মানবে না। ঠিকই লুচ্চা বদমাশ বলে আপনার বাবাকে গালি দিবে, আপনি নিজেই হয়তো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবেন, আপনার পরিবারই এটা মেনে নিবে না, তা এখানে যতই ধর্ম আর শরীয়া রক্ষা করা হোক না কেন। এমনকি প্রথম স্ত্রী বর্তমান থাকতে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন মানে দ্বিতীয় বিয়ে করাও আমাদের সমাজ ভাল চোখে দেখে না। লোকে নানা মন্দ কথা বলে। এই যে হুমায়ুন আহমেদ শাওনকে বিয়ে করলেন, সেখান কিন্তু ধর্ম ও শরীয়া সবই ঠিক আছে। তারপরেও দেখুন আমাদের দেশের এই মুসলিমরাই কিন্তু তার সম্পর্কে, শাওনের সম্পর্কে অনেক খারাপ কথা বলেছে, হুমায়ুনের অনেক পাড় ভক্ত তার বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে। কেন? আসলে ধর্ম দিয়ে মানুষকে বিচার করা যায় না। এইখানে সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ও সংস্কৃতির একটা ব্যাপার আছে। আপনি যদি উচ্চশিক্ষিত ও মননশীল কোন পাশ্চাত্যের পরিবারের দিকে তাকান, তাহলে তাদের মধ্যেও কিন্তু আপনার বলা এই অবাধ যৌনতার এতটা প্রকোপ দেখবেন না। একটি উচ্চশিক্ষিত ও মননশীল পাশ্চাত্যের পরিবার প্রায় একইভাবে তাদের সন্তানদের মানুষ করে বা বড় করে যেভাবে বাংলাদেশের একটি উচ্চশিক্ষিত, মননশীল পরিবার তাদের সন্তানদের মানুষ করে। সংস্কৃতির কিছুটা পার্থক্য থাকার কারনে কিছুটা হেরফের হয়, কিন্তু মূলসূর একই। একজন মননশীল পশ্চিমা মেয়েকে যেমন হিসেব করে সঙ্গী বাছতে দেখবেন, একজন মননশীল বাংলাদেশী মেয়েকেও সেইভাবে পছন্দের ছেলে বাছতে দেখবেন। দুই ক্ষেত্রেই মেয়েরা অনেক হিসেব নিকেশ করবে, দেখলাম, কথা বললাম, বিছানায় গেলাম এই জাতীয় আচরণ কেউই করবে না। এইখানে প্রশ্নটা মনশীলতার, ধর্মের নয়। যার গরু ভেড়ার মত যত্রতত্র যৌনতা করার ইচ্ছা আছে সে সব জায়গাতেই করবে, তার ধর্ম কি বা তার জাতীয়তা কি সেটা মূখ্য নয়।
আর আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের কাপড়চোপড়ের কথা আর কি বলব। উপরের কথা এই ক্ষেত্রেও খাটে। নারী কোন পণ্য নয়। একজন মানুষ পণ্য হতে পারে না। যারা নারীকে পণ্য মনে করে শরীর বিক্রি করে পয়সা উপার্জন করে আর যারা নারীকে ভোগ্যবস্তু মনে করে নিজের কামনা বাসনাকে সংযত করার জন্য আপাদমস্তক বোরখায় ঢেকে রাখে তারা আসলে একই মানসিকতার এবং একই জাতের লোক। শুধু একজন খাবার খাচ্ছে, আরেকজন খাবার লুকিয়ে রাখছে, যাতে দেখা না যায়, কারণ দেখা মাত্রই তার ক্ষুধা এত বেড়ে যাবে যে সে খাবারের উপরে ঝাপিয়ে পড়বে। দুটি দলের কাছেই নারী মানেই খাবার। আমি এদের কাউকেই পছন্দ করি না। দুটি দলই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা ভাবনা দ্বারা আক্রান্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:৩২