আমার দেখা মাত্র ত্রিশ বছর আগেও কাঁদামাটির দেশ এই বাংলাদেশে কোনো ধর্ম নিয়েই তেমন কোনো সমস্যা ছিলো না। তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশিত হওয়া দিয়ে ঝামেলা শুরু। এই তসলিমা নাসরিনের বইয়ের নাম্বার ওয়ান প্রচারক ছিলো আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ যার পৃষ্ঠপোষকতায় কতিপয় গাঁজাখোর সাংবাদিক সহ অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মুসলিম সমাজ বিনা পয়সায় উক্ত লেখিকার বই প্রচার করে গিয়েছেন। বই বাজারে বই বিক্রি বাট্টার হার বাড়িয়ে দিনের পর দিন বইয়ের মূদ্রন বাড়িয়েছেন। নইলে উক্ত তসলিমা নাসরিনের বই পলাশীর রদ্দি কাগজের বাজারে চলে যেতো - কাগজের ঠোঙ্গা তৈরি হতো। বই মেলা আর বই বাজারে বিক্রি অনেক দুরের স্বপ্ন ছিলো!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো চালু হওয়ার পর থেকে গুণিতক হারে ধর্ম, অধর্ম, নাস্তিক ও ধর্ম বিদ্বেষ বেড়ে গিয়েছে। ধর্ম প্রচার যেইভাবে বেড়েছে একই ভাবে বেড়েছে ধর্ম বিদ্বেষ। অক্ষরজ্ঞান শিক্ষিতজনদের জন্য লেখালেখির নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে, নইলে পকেটের পয়সা খরচ করে এইসব লেখা সম্ভব হতো না, আর কোনো পত্রিকা ম্যাগাজিনও এইসব কলেরা রোগীর বমি ছাপাতো না। - আজকের আলোচনার বিষয়-“ধর্ম বিদ্বেষ”।
কিছুদিন পর পর বাংলাদেশে সহ পাশের দেশে মুসলিম বিদ্বেষমূলক কোনো না কোনো কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ চাউর হয়ে উঠে। এই দেশগুলোতে মুসলিম ব্যতীত ভিন্ন ধর্মও ছিলো-আছে-থাকবে। কিন্তু মুসলিম ধর্ম নিয়ে/মুসলিম ধর্মের পয়গম্বরদের নিয়ে/নবী রাসুল নিয়ে কুটুক্তি করার কারণ কি? অথবা বিশেষ করে আখেরী নবী ও আখেরী রাসুল নিয়ে কুটুক্তি করার কারণ কি? মুসলিম কোনো ব্যক্তি কি ভিন্ন ধর্মের বিশেষ ব্যক্তি ও কিতাব; তথা - শিব নারায়ণ/দূর্গা/মা কালী/ভগবত গীতা/ঈসা মসিহ/বাইবেল নিয়ে খারাপ মন্তব্য কুটুক্তি করেছেন বা করেন? - আমার জানা নেই এমন কখনো হয়েছে কিনা। তবে মুসলিম ধর্ম ও কিতাব নিয়ে খারাপ মন্তব্য ও আখেরী নবী ও রাসুল নিয়ে কুটুক্তি হচ্ছে এবং হয়েছে, হয়তো ভবিষ্যতেও হবে।
কোনো মুসলিম বা মুসলিম সমাজ যদি ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তি/বিশেষ ব্যক্তি/ঈশ্বর ভগবান নিয়ে কুটুক্তি না করেন তাহলে ভিন্ন ধর্মের কেউ কি কারণে মুসলিম সমাজের বিশেষ ব্যক্তি/পয়গম্বর/নবী/রাসুল/আল্লাহ নিয়ে মন্দ কথা বলেবেন? মুসলিম ধর্মের পয়গম্বর নিয়ে কুটুক্তি করে বাংলাদেশ আইনে কারো যদি জেল জরিমানা হয় তাহলে ঈশ্বর ভগবান/দূর্গা/শিব/মা কালি নিয়ে মন্দ কথা বললেও জেল জরিমানা হবে। আমার মনে হয় না বাংলাদেশে দূর্গা/শিব/মা কালি নিয়ে কুটুক্তি করার জন্য রাবনের দশ মাথার মতো দশমাথাওয়ালা এমন দুঃসাহসী কোথাও কেউ আছেন! - কার ঘাড়ে মাথা কয়টা? সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু ধর্মের গুরু কর্তৃক সমগ্র বিশ্বে প্রচার হবে তারপর কমপক্ষে ১০টি মামলা হবে। মামলার জের টেনে টেনে দোষী ব্যক্তি ও তার পরিবারের জীবন বরবাদ হয়ে যাবে।
তথাকথিত কতিপয় মুসলিম সমাজের ধর্ম বিদ্বেষীরা নিজের ধর্ম ও নবী রাসুল নিয়ে যা যা বলেন আমার মনে হয় না ভিন্ন ধর্ম নিয়ে কখনো কিছু বলতে পারবেন! আসলে ধর্ম, অধর্ম, ধর্ম বিদ্বেষ ছড়াতে ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলার জন্য তেমন কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না, নুইসেন্স প্রকৃতির লোকজন এই ধরনের বিবাদ কলহ তৈরি করে আনন্দ পায়। কারণ এরা পারিবারিক ভাবে ও সামাজিক ভাবে অসুখী মানুষ। ভারত উপমহাদেশে হিন্দু মুসলিমের বড় ধরনের রায়ট হয়েছে, রক্তে রক্তে ভেসে গিয়েছে বাড়ি ঘর, পালাতে গিয়ে রক্তাক্ত প্রান্তর হয়েছে যানবাহন সহ সড়ক মহাসড়ক এমনকি রেল ও রেলপথ। এইসবই ছিলো অসৎ বৃটিশ ও পাক ভারতের অসুখী মানুষের ক্ষমতা দখলের নোংরা রাজনীতি।
আত্মকথা: আমি নিজে দেখেছি, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি “কোনো ভালো কাজ করতে পেরে, জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে, জীবনে সফলতার দ্বারে পৌছে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন ঈশ্বর-আল্লাহ-ভগবানের”। ঠিক তেমনই যিনি বা যারা বার বার অসফল হয়েছেন অকৃতকার্য হয়েছেন বারংবার দোষ দিয়েছেন ঈশ্বর-আল্লাহ-ভগবানের। আরেকটি বিষয় না বললেই নয় - “সমাজে নিজেকে জ্ঞানী” প্রচার করার খুবই নিম্নমানের প্রচার মাধ্যম হচ্ছে অধর্ম ও ধর্ম বিদ্বেষ!
শেষ কথা: অপরাধ ও অপরাধী অতীতে ছিলো, বর্তমানে আছে ভবিষ্যতেও থাকবে পাশাপাশি থাকবে সেই অপরাধ ও অপরাধী সমর্থনকারী। আর এই অপরাধ ও অপরাধী সমর্থনকারীর কারণে কোনোদিন অপরাধ শেষ হবে না। চলতে থাকবে অনন্তকাল।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটি কোনোভাবে কোনো প্রকার ধর্ম প্রচার/ধর্মীয় আলোচনা বা ধর্মীয় পোস্ট নয়।
ছবি: কভার ছবি এডোব ফটোশপে তৈরি করা।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সামহোয়্যারইন ব্লগ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৫১