মালয়েশিয়ার পাশার মালাম উচ্চারণ ভেদে পাসার মালাম/পাছার মালাম। বাংলায় বলা যায় “রাতের বাজার”। এটি আসলে সাপ্তাহিক বাজার, কোনো একটি এলাকায় খোলা রাস্তায় বাজার বসে যার সময়সীমা বিকাল থেকে রাত অবধি হয়ে থাকে, অনেকটা আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলের হাটবারের মতো। আমাদের দেশের হাটবার অবশ্য সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি হয়। রাতের বাজার এক এক এলাকায় সপ্তাহের এক এক দিন হয়। রাতের বাজার থেকে বাজার করে এক ধরনের আনন্দ আছে আর স্থানীয় নানা ধরনের অত্যন্ত মুখ রোচক মজাদার রান্না করা খাবার পাওয়া যায়। আমার ধারণা রাতের বাজার আসিয়ান দেশগুলোতেই হয়ে থাকে। দশটি দেশ নিয়ে গঠিত হয়েছে আসিয়ান ASEAN (Association of Southeast Asian Nation) সংগঠন। আমাদের সার্কের মতো হলেও তাদের কার্যক্রম আমাদের সার্কের মতো নয়, খুবই শক্তিশালী এই সংগঠন। আসিয়ান দেশ সমূহঃ ইন্দোনেসিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই দারুসসালাম, মিয়ানমার (বার্মা) ও লাওস। আমার দেখা ও জানাশোনায় যদি ভুল না থাকে তাহলে এ ধরনের আঞ্চলিক রাতের বাজার শুধুমাত্র আসিয়ান দেশ সহ মরিশাস ও নিউজিল্যান্ডে আছে এছাড়া আর কোথাও আছে বলে আমার সঠিক জানা নেই।
আমি কাজের বিনিময়ে খাদ্য গোছের মানুষ। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের অন্ধগ্রাম থেকে গিয়েছি শহরে, শহরান্ত থেকে দেশান্তরে। এমন এমন যুদ্ধ বিগ্রহ দেশে যেতে হয়েছে বেঁচে দেশে ফিরে আসবো সে আশা ছিলো না। আবার এমন দেশে যেতে হয়েছে বিমান বন্দর থেকে বার হয়েই মনে হতে পারে এই দেশে আজীবন থেকে গেলে কেমন হতো? আমার প্রচুর পিছুটান আছে - বাড়িঘর জমিজমা ফেলে দূরে থাকা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব বিষয়। অসম্ভব বিষয় আত্মীয় পরিজন ছেড়ে দূরে থাকা। অসম্ভব বিষয় শীতের দিনের সকালে চালের গুড়ির তৈরি গরম গরম রুটি খেজুরের ঝোলা গুড়ে ডুবিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকা। শুধু জলপাই টেংরা মাছের ঝোল দিয়ে সাদা ভাত খাওয়ার জন্য নিউজিল্যান্ড যাত্রা ক্যান্সেল করেও মনে আনন্দ থাকবে। আত্মীয় পরিজন নিয়ে খাবারের মাঝে যে আনন্দ আছে তা পৃথিবীর কোথাও কোনো হোটেল রেষ্টুরেন্টে আছে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
যাক সে কথা। আজকের বিষয় রাতের বাজার। মালয়েশিয়ার রাতের বাজার। পোস্টের ছবিতে মালয়েশিয়ার বাজারের কিছু দৃশ্য সংযুক্ত করেছি। প্রবাসীরা এই বাজারে অনেক আনন্দের সাথে বাজার করেন সপ্তাহে একদিন। স্থানীয়রা এ বাজারে খুবই আনন্দ সহকারে পরিবার পরিজন নিয়ে যান। বাংলাদেশীরাও আনন্দের সাথেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটা করেন। পাশার মালামে যে সকল মালয়েশিয়ান ও অন্যান্য দেশে সে দেশের স্থানীয়রা বিক্রিবাট্টা করে থাকেন। বেশীরভাগ দোকানে নারী বিক্রয় কর্মী - এরা খুবই ভদ্রমহিলা, কারো সাথে উচ্চবাচ্য হাসি তামাশা বা এ ধরনের কাজে নেই - আজকে হাটবার আজ বেঁচা বিক্রির দিন - সম্ভবত এটি তাদের মূল নীতি।
উপসংহারঃ আবার নিজের কথায় ফিরে আসি, জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে যে দেশেই গিয়েছি স্থানীয় খাবারের সন্ধান করেছি। আজ পর্যন্ত কোনো দেশে কোনো স্থানীয় খাবার আমাকে হতাশ করেনি। আসিয়ান দেশগুলোতে স্থানীয় খাবারের সন্ধানে বেস্ট হচ্ছে পাশার মালাম বা রাতের বাজার। সবার কাছে দোয়া চেয়ে আজকের লেখা এখানেই সমাপ্ত করছি।
কৃতজ্ঞতা স্বীকরঃ সামহোয়্যারইন ব্লগ। নির্বাচিত পোষ্টে “উক্ত লেখাটি” স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ছবির এলাকাঃ বালাকং পাশার মালাম, বালাকং, চেরাস, মালয়েশিয়া।
ছবি তুলেছেনঃ কাজী গোলাম মোস্তফা (বাংলাদেশী মালয়েশিয়ান প্রবাসী। একজন সাধারণ কর্মী)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:০০