ছাগল কাঁঠাল পাতা খুব পছন্দ করে। কাঁঠাল পাতা দেখলে ছাগলের আর হুঁশ থাকে না।
ছাগলের সাথে কাঁঠাল পাতার সম্পর্ক অনেক প্রাচীন। হাদীস সংগ্রহ করতেন এমন একজন মনীষীর কথাতেও নাকি আছে ছাগল আর কাঁঠাল পাতার গল্প। মনীষী নাকি একবার খবর পেলেন যে এক লোক একটা হাদীস জানে। মনীষী ছুটলেন সেই মহামূল্যবান বানী শোনার জন্য। তিন দিন তিন রাত হেঁটে তিনি পৌঁছুলেন লোকটার বাড়ীর কাছে। তিনি লোকটার জন্য তার বাড়ীর কাছে অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ দেখলেন লোকটা আসছে। লোকটার হাতে কাঁঠালপাতা সহ একটা ডালা, আর পেছন পেছন একটা ছাগল পাতার লোভে লোকটার পিছু পিছু আসছে। মনীষী লোকটির কাছ থেকে সেই মহা-হাদীস না শুনেই ফেরত চলে এলেন।
ইদানিং সেরকম একটা ছাগল কাঁঠাল পাতা খেয়ে বেশ নাদুস-নুদুস হয়ে উঠেছে। কাঁঠালপাতা দেখলে তার আর হঁশ থাকে না, ছুটে যায় পাতা্সুদ্ধ গাছ দখল করার জন্য। ছাগলটা আমাদের প্রতিবেশী রাজ্যের বাসিন্দা। অনেক দিন ধরে পাতা খেতে খেতে তার নিজের দেশের কাঁঠাল পাতা শেষের পথে। কারন ছাগল তো ডগা সুদ্ধ খায়, তাই ডালে আর নতুন পাতা গজায় না, গাছটা মরে যায়। নিজের দেশের স্টক শেষ, তাই ছাগলটা পা বাড়ালো অন্যান্য দেশে। ছাগল বলে তার কি আর জাতে ওঠার সখ হতে পারে না? তাই তার খুব সখ হলো সে ছাগল থাকবে না, সে পাঁঠা হবে। তাই সে পাতা খোঁজার জন্য দাদা-ভাইদের ধনী দেশে পা বাড়ালো। সেখানকার পাতা খেয়ে তার খুব তৃপ্তিও হলো বেশ, কিন্তু সে পাঁঠা হতে পারলো না, সে হয়ে এলো রাম ছাগল। তাই সে বার বার সেখানকার পাতা খেতে যাবার জন্য চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু গোল বাঁধালো সেই সব দেশের কাঁঠাল পাতা ও গাছ সংরক্ষন নীতি। ছাগলে মুখ দিলে গাছ মরে যায়, তাই এবার সেই সব রাজ্যের সীমানায় কাঁটা ঝোপ দিয়ে ছাগল প্রতিরোধক বেড়া দিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু নাছোড়বান্দা ছাগল বেড়া ভেঙ্গে ঢুকবেই। শেষে বাধ্য হয়ে তারা ছাগলটাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাড়িয়ে দিল।
মনের দুঃখে ছাগল চিন্তা করতে লাগলো জাতে ওথার থেকে পেটের খিদেটাই বড়। কিন্তু কোথায় পাওয়া যায় কাঁঠাল পাতা! ভাবতে ভাবতে তার হঠাৎ মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। ছাগল লাফিয়ে উঠলো। তার মাথায় বুদ্ধির বাত্তি জ্বলে উঠলো। “এই তো পাওয়া গেছে পাতা”। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল যখন, তাহলে তো ওখানে কাঁঠাল পাতার অভাব নেই। সে দাদাদের দেশ থেকে কায়াদা কানুন শিখে এসেছে যে কোথাও গেলে আগে থেকে ওখানে জানিয়ে রাখতে হবে যে সে যাচ্ছে। সেই মতো রামছাগলটা বলে পাঠালো যে সে অমুক দিন আসছে।
আমরা বাঙ্গালী আর বাঙ্গালী অতিথীপরায়ন জাতি। আমাদের ঘরে অতিথী নারায়ন। নিজে না খেতে পেলেও অতিথীর খাবারে কখনো টান পড়ে না। এদিকে শীতকাল আসন্য, গাছের পাতা পড়ে যাচ্ছে। মাহামান্য রামছাগলটা এলে কাঁঠালপাতা কম পড়তে পারে। তাই আসুন আমরা এখন থেকেই কাঁঠালপাতা স্টক করা শুরু করে দিই। ছাগলটা আগামী ৩০শে নভেম্বর এসে ১১ই ডিসেম্বর চলে যাবেন। এই কয় দিনে উনি যেন অবিরাম কাঁঠাল পাতা চিবাতে পারেন আমাদের সেই ব্যাবস্থা করে রাখতে হবে। রামছাগলটা যেন তার দেশে ফিরে গিয়ে আমাদের দেশে কাঁঠাল পাতার অভাব এই কথা বলতে না পারে!