একটা বিষয়ে পরামর্শ বা এডভাইস চাইছি---
ঘটনা হলো আমার মেয়ে কে নিয়ে। বড় য্ন্ত্রনায় ফেলেছে সে আমাদের!..ও এখন টুয়েলভ গ্রেডে পড়ে, এ বছর কলেজে যাবে। বেশ কটা ইউনিভারসিটি তে এ্যপ্লাই করেছে, তাও আমাদের জোড়াজুড়িতে..সে ঘাড় ত্যাড়া করে বলছে বাংলাদেশে গিয়ে মেডিকেলে পড়বে! ভালো কথা, কিন্তু আর আমেরিকা ফিরে এসে প্র্যাকটিস করার জন্য লাইসেন্স পরীক্ষা দিবেনা-- মোট কথা সে বাংলাদেশেই গিয়ে সেটল করবে!..
ব্লগে আমার প্রথম দিকের লেখায় আমার মেয়ের পাগলামির কথা লিখেছিলাম, ওর (যার জন্ম কিনা আমেরিকাতে!)বাংলাদেশের জন্য অদ্ভুত, প্রচন্ড টানের কথা ..কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন!, এখানে আমার আর আমার স্বামীর কাজ, ছেলের স্কুল (এইটথ্ গ্রেডে), বাড়ীঘর...সব ছেড়ে এই বয়সে চলে যাওয়া এত সোজা?
গেলেও আবার নতুন করে জীবন শুরু করা..নতুন কর্মস্থলে এডজাস্ট করা, সর্বোপরি, আমার ১৩ বছরের ছেলেটা তো আমার মেয়েটার মত নয়! ও এখান থেকে যাবেনা, বেড়াতে যাওয়া পর্যন্তই! দু নৌকায় পা দিয়ে দিয়ে মেয়ে আমার খাবি খাচ্ছে!..ওর দিকে তাকালে আমার কস্ট হয়, কিন্তু ও দেশে গিয়ে পড়লে আমার সংসার দু ভাগ হয় যাবে!.. ছেলেকে নিয়ে আমার প্রবাসে থাকতে হবেই, ওর হাইস্কুল শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
দেশ আমার বোনেরা আছে, তবুও ফুটফুটে মেয়েটি আমার থেকে হাজার হাজার মাইল দুরে থাকবে!, তার উপরে কত সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ!
হ্যা, আমি সেলফিস, আনপ্যাট্রিয়ীক আচরন করছি!...আমার অবস্থা বড় জটিল, বড় আনপ্রেডিকটেবল!
....পরামর্শ চাই, অবশ্যই হেলপফুল, গঠনমূলক!
পরিশেষে, আমার পাগলী মেয়ের একটা রচনার কিছু অংশ(যেটা ওর গত সামারে ইংলিশ এডভান্স রাইটিং ক্লাসের এসাইনমেন্ট ছিল- 'Dancing fairy on the rain' আর ওর টীচার এটা পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছিলেন,--oh Lord!, please go back to Bangladesh, the place you love..) বাংলায় অনূবাদ দিচ্ছি---ওর বাংলাদেশের প্রতি অস্বাভাবিক টান কিছটা হলেও বুঝতে পারবেন!
"..আমি এখন এই মুহূর্তে, এই প্রানবন্ত- কিন্তু গুমোট, নিঝুম দুপুরে পারুলদের ছোট্ট মাটির দাওয়ায় বসে আছি!..আমার দীদার বাসা ওদের ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটা থেকে মাত্র কয়েক গজ দুরে..আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি, দীদা আমাকে পাহাড়া দেবার জন্যই হাসনাহেনা, আর কি কি ফুল গাছে ছাওয়া বারান্দার, সবুজ প্লাস্টিকের বসে ঝিমাচ্ছে- হাতের তসবীটা দূর থেকে স্পস্ট দেখতে পাচ্ছি!..পারুলের মা মাটির চুলায় কি যেন রান্না করছে- নরম, মশলার গন্ধ ভরা ধোঁয়ায় ভরে উঠেছে চারপাশটা! পারুলের ছোট্ট ভাইটা ন্যাংটো হয়ে ধূলায় শুয়ে শুয়ে খেলছে, আর পাশের কচুরীপানায় ভরা ডোবায় কানাই নামের কিশোর ছেলেটা ডিঙি নৌকাটাকে এমনি এমনিই স্থির করে রেখে, অলস ভঙিতে বসে আছে...কি একটা গানের অস্পস্ট সুর দুরের কোথাও থেকে ভেসে আসছে!....কি অপূর্ব, কি সুন্দর এই দেশ!..আর এই দেশ ছেড়েই কিনা আমাকে চলে যেতে হবে ঠান্ডা, অস্বাভাবিক শান্ত, যান্ত্রিক ঐ দেশটা তে!..কান্না পাচ্ছে, আমার বড্ড কান্না পাচ্ছে!..কিন্তু লজ্জায় কাঁদতে পারছিনা, কেউ দেখে ফেলে যদি?..আমার এই মুহূর্তের অনুভূতিটা আত্মহত্যার সামিল, আমার এতোই কস্ট হচ্ছে!
..চারিদিকটা কেমন কালো হয়ে এলো, ঝুপঝুপিয়ে বৃস্টি নেমে আসলো হঠাৎ করেই--পারুলের মা দৌড়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে, চুলা নিভায়ে আমাকে ডাকলো ওদের কুঁড়ের ভেতরে আসার জন্য...দীদা ব্যকুল হয়ে আমাকে ডাকছেন, পারুল ভিজতে ভিজতে আমার কাছে চলে আসলো--"ইস্রে! ভিজ্যা গ্যাছো আপমনি! নানী ডাকতেসে, বাসায় চল!"..পারুলের কথা আমার কানে যায়না, চোখ দিয়ে অবিরল ধারায় কান্না গড়িয়ে পড়ছে আমার অভিমানী গাল বেয়ে...ওদের নড়বড়ে, পুরোনো কিন্তু মায়াভরা টীনের চালে রিমঝিম শব্দে বৃস্টি পড়ছে, যেনো এক ঝাঁক পরী আকাশ থেকে নেমে ওদের ছাতে নাচ্ছে..আমি কেঁদেই চলেছি, আর আমার সাথে পারুলও ফোঁপাচ্ছে--" ও আপামনি! এমন কইরা কাইন্দ না... দেহো তোমার লেইগ্যা আসমানও কানতেসে, আপামনিরে!"..আসলেই!, এই সু্ন্দর বাংলাদেশে প্রকৃতি আমার কস্ট বুঝতে পেড়ে আমাকে একঝাঁক পরী পাঠিয়ে দিয়েছে, ওরা নেচে নেচে আমার কান্না ধুয়ে দিচ্ছে!.."
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০০