লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য ভেংগেচুড়ে পড়াশুনা করার কথা ছিলো, .....তা বাদ দিয়ে ভাগনির সাথে সময় কাটিয়ে আসলাম রৌদ্রজ্বল সানফ্রান্সিসকোতে দু সপ্তাহ আগে আসলে নিউ ইয়র্কের একটানা তুষারপাত আর নির্মম হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় অতিস্ঠ হয়ে যাচ্ছিলাম! ছেলেমেয়ে, বর, ঘর সব ফেলে ৯টি দিন একদম একাকি কোথাও গেলাম প্রথমবারের মত....একটু অনুশোচনাও হচ্ছিল অবশ্য!..আমার ভাগনির বর জার্মানিতে ছিলো সেইসময়, ছোট্ট বেবীটাকে নিয়ে ও একা থাকতে ভয় পাচ্ছিলো, এ জন্যই আমার ওর কাছে যাওয়া! ....
যা হোক, মূল কথায় আাসি, এই পুরুষবিহীন সংসারে (আমি, ভাগনি, আর ওর বেবীটাও মেয়ে!) দাপটে মজা করছিলাম--কখনো চলে যেতাম ডাউনটাউন সান হোজেতে লান্চ করতে, কখনো Google এ কর্মরত বাংলাদেশী জিনিয়াস দের আ্যপার্টমেন্টে গিয়ে আঁতেল আড্ডা দিতে, অথবা হাতপা ছড়িয়ে সারাদিন মুভী দেখতে!..ওই সময় একটা পুরোনো লাতিন আ্যমেরিকান মুভী দেখেছিলাম, অনেক আগেও একবার দেখেছি , আমার দেখা প্রেমের মুভীগুলোর মধ্যে এটা প্রিয় সারিতে এই মুভীটা "Como Agua Para Chocolate" বা "Like Water For Chocolate"
মেক্সিকান লেখিকা লরা এসকুইভেল এর লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে পরিচালক আলফনসো আরাউ 1992 তে এই ছবি বানান। ছবিটি স্প্যানিস লেখকদের প্রিয় একটি বিষয় "ম্যাজিক রিয়ালীজমে" এর উপরে ভিত্তি করে নির্মীত হয়েছে, যা আবেগপ্রবন মানুষদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে সবসময়! ভালোবাসার জন্য প্রেমিক/প্রেমিকা সর্ব্বোচ্চ কি করতে পারে, তা এই মুভী না দেখলে বোঝা যাবেনা!.....
একটা টিপিকাল মেক্সিকান ফ্যামিলী, যেখানে এক বিধবা মহিলা তিন তরুনী মেয়ে আর চাকর বাকর নিয়ে গ্রামের বিশাল খামার বাড়িতে দাপটের সাথে সংসার করেন---সেই বাড়ীর সবচেয়ে ছোট, সুন্দরী মেয়ে "তীতা" এক অদ্ভূত নিয়মে আবদ্ধ....ও কখনো বিয়ে করতে পারবেনা মায়ের মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত! তীতার সারাদিন রান্নাঘরে কাটে প্রস্তাব নামের বয়স্ক রাধুনির সাথে রান্না করে এবং মায়ের সেবা করে। তীতার জন্মও হয়েছিল ঐ রান্নাঘরের বেকিং এর কাজ করার টেবিলে!...সেই থেকে রান্নাঘরের উষ্নতা, চুল্লীর ধোয়া বা মশলার সুগন্ধী ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছিলো!....এভাবেই কাটছিলো দিনগুলি, হঠাৎ করেই ও প্রেমে পরে গেলো ঐ গ্রামের সুদর্শন, তরুন পেদ্রোর! দুজন দুজনকে ভালোবাসে পাগলের মত, পেদ্রোর বাবা তীতার মায়ের কাছে প্রস্তাব নিয়ে এলে রাগে ফেটে পড়েন উনি, তীতার আজন্ম মাতৃসেবার কথা বলে বড়মেয়ের সংগে প্রস্তাব দেন। কি ভেবে পেদ্রো রাজী হয়ে যায়! তীতা অপরিসীম দুঃখে ভেংগে পড়ে, তবে ওর কস্ট স্তিমীত হয়ে আসে যখন সেই বয়স্কা রাধুনির কাছে জানতে পারে পেদ্রোর মনের আসল কথা---পেদ্রো চালাকি করে বড়বোন কে বিয়ে করে আসলে প্রেমিকার কাছকাছি থাকতে পারবে বলে (সেই সময় মেয়েরা বিয়ের পরেও দীর্ঘসময় বাপের বাড়িতে থাকত) বিয়ের দিনে ওয়েডিং কেকটা বানাতে গিয়ে তীতা কান্নায় ভেংগে পরে, তার এক ফোঁটা জল কাকার খামীরের মধ্যে পড়ে যায়, .....আর সেই কেক খেয়ে সবার ভিতরে শূন্যতা, দঃখবোধ, এমনকি পুরনো ব্যর্থ প্রেম জেগে ওঠে (ম্যাজিক রিয়ালীজম!)---চোখের পানি মুছতে মুছতে সবাই পার্শবর্তী লেকের ধারে বমি করতে থাকে! এমনকি তীতার কঠোর মায়ের চোখেও জলের ধারা, তারও যে গভীর, গোপন প্রনয়ের ব্যথা আছে---যার অবৈধ ফসল তার মেজো মেয়ে!
এর পরে কত ঘটনা ঘটে যায়, ....তীতার বোনের ছেলে হয়, অদ্ভতভাবে
সেই শিশু শুধু তীতার কাছে থাকতে চায়! একদিন তীতা বাচ্চা টিকে আদর করছিলো জানালার সার্শি ভেদ করে গোধূলীবেলার সোনালী আলোয় প্লাবিত রান্নাঘরে বসে, হঠাত পেদ্রোর প্রবেশ সেখানে...নির্নিমেশে তাকিয়ে থাকে তীতার সৌন্দর্যে, তার অপূর্ব দেহবল্লরীর দিকে!, চোখ দিয়ে দুজনে অজানা সেই আনন্দ আকন্ঠ পাণ করতে থাকে!...এখানেও ম্যাজিক রিয়ালীজমের কারূকাজ, ..শুধু চোখ দিয়ে তীতার দেহসূধার আস্বাদ নিয়ে কুমারী স্তনে ফল্গুধারা বইতে থাকে, প্রাকিতিক ভাবেই শিশু মুখ বারিয়ে দেয়, দুঃখী তীতা অজানা আনন্দে অভিভূত হয়ে পরে!..স্প্যানীস সাহিত্যের এই জাদু বাস্তবতা/ সারিয়ালীজমের সাথে পরিচিতী না থাকলে কারো কারোও কাছে এই মুভী অবাস্তব মনে হবে!
পুরো মুভীর ঘটনা বলে দিলে চার্ম চলে যাবে বলে এখানেই ইতি টানছি!
অপূর্ব অভিনয়, পরাবাস্তবের মত তীতাদের গ্রামের ল্যানড্সকেপ, সর্বোপরি দুর্দান্ত ভালোবাসার ছবি এই Like Water For Chocolate! মুভী ইউটিউবে পেতে পারেন, অথবা আমাজন থেকে অরিজিনাল উপন্্রহসটা পড়তে পারেন, কথা দিচ্ছি ভালো লাগবে!!!!!!!!!!