পাড়ার ক্রিকেট কি লীগ কিংবা জাতীয় দলের ম্যাচ সব ক্রিকেট ম্যাচের উত্তেজনায় প্রায় একই রকম।ভাল করলে আনন্দ খারাপ করলে মন খারাপ বকাঝকা।খেলার অংশ এটাই।এবং এটাই স্বাভাবিক ।
কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটি মেনে না নেওয়াদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবালের জুড়ি নেই।
২২জানুয়ারীর দর্শককে মাদার*দ গালি দিয়ে আবারও আলোচনায় তামিম।তামিম শুধু গালি এবং ব্যাট দিয়ে পিটানোর হুমকি দিয়েই ক্লান্ত হয়নি ।তামিমের আক্রমনাত্বক মনোভাবের কারণে নিরাপত্তাকর্মীরা বিসিবির নিরাপত্তা উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) মেজবাউদ্দিন সেরনিয়াবাতের কক্ষে এক তরুনকে ধরে নিয়ে গেছে । সেখানে তরুণ নিজেকে কেবল নির্দোষই দাবি করেননি, দাবি করেছেন তামিমের বড় ভক্ত হিসেবে। সেরনিয়াবাত নিজেই বলেছেন তা, 'ওই তরুণ নাকি তামিমকে বলেছিলেন, আরো সময় ধরে ব্যাটিং করলে ম্যাচটি দুরন্ত রাজশাহী জিততে পারত। কিন্তু তামিম নাকি সেটিকে ভুল বুঝে মনে করেছিলেন তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে।
শুধু দর্শকদের না মাঠে,মাঠের বাইরে অনেক নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছে তামিম বহুবার।কখনো অহংকারী আচরণের জন্য কখন প্রতিপক্ষকে আক্রমনের জন্য।বাজে আচরণের কারণে নিষিদ্ধ পর্যন্ত হয়েছিল তামিম।
৩.১.২০১২ ওল্ড ডিওএইচএস ও ভিক্টোরিয়ার ম্যাচ চলার সময়কার ঘটনা। ওল্ড ডিওএইচএসের ক্রিকেটার ফয়সাল হোসেনের এলবিডব্লিউ আউট নিয়ে আপত্তি করেন সতীর্থরা। এ সময় ভিক্টোরিয়ার তাঁবু থেকে লুত্ফর রহমান তাঁদের উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেন। আশরাফুল বিষয়টা মাঠের আম্পায়ার আনিসুর রহমানের নজরে আনলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তামিম।ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আনতে বেশ বেগ পেতে হয় আম্পায়ারদের ।শেষে পরের ম্যাচে নিষিদ্ধ করা তামিম ইকবালকে ।
চিকিৎসার প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য বিমানের বিজনেস ক্লাস না দিয়ে ইকোনমি ক্লাসের টিকিট দেওয়া হলে ভিসা ফর্ম ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। আকরাম খান এবং মাশরাফির চেষ্টায় পরে ব্যাপারটা সামাল দেওয়া হয়।
ইনজ্যুরড অবস্থায় আন্তর্জাতিক সিরিজ চলাকালে স্কোয়াডে না থেকেও ।অন্যায়ভাবে ড্রেসিংরুমে প্রবেশের অ্যাক্রিডিটেশনের জন্য করেছিলেন হম্বিতম্বি।
বিপিএলে গতবার চিটাগাং কিংস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলায় সুস্থ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে খেলানো হয়নি।
ভারতীয় টিভির স্টিং অপারেশনে তামিম 'হুন্ডি' করে বিদেশে টাকা নিয়ে যান বলে জানিয়েছিলেন তাঁর এজেন্ট।
তামিমের এমন আরো অনেক কুকীর্তি আছে যা খবরের শিরোনাম হয়েছে ।
আকরাম খান,আমিনুল ইসলাম বুলবুলরাও সুপারস্টার।কোনদিন শুনেছেন কোন নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হতে ?আকরাম,বুলবুলরা কি তারকা ক্রিকেটার না?
অনেকেই তামিমকে সেভ করতে গিয়ে বলছে যে দর্শকরা তামিমের সাথে খারাপ আচরণ করেছে ।
একটা প্রশ্ন করি ।আপনি টিকেট কেটে কোন কনসার্টে গেলেন।ঘাটের টাকা খরচ করে গিয়ে দেখলেন শিল্পীর গান আর কাকের কা কা একইরকম।তখন আপনি কি করবেন?টমোটো পঁচা ডিম পানির বোতল কি ছুঁড়ে মারবেন না?যদি না মারেন তাহলে আপনার ভাই অনেক টাকা।
কিন্তু যে দেশে আমার মত কোটি কোটি আমজনতা অনেক কষ্টের মাঝে একটু বিনোদনের জন্য ঘাটের পয়সা খরচ করি তখন যদি দেখি কাকের মত কা কা করছে শিল্পী তখন আমি টমেটো,ডিম হাতের কাছে থাকলে ছুঁড়ে মারবই ।
কনসার্টের ব্যাপারটা দিয়ে উদাহরণ দিয়েছি সহজ করে বুঝানোর জন্য।কারণ,কনসার্টে দর্শক আশানুরূপ বিনোদন না পেলে এমন কান্ড দর্শক প্রায় ঘটায়।ঠিক তেমনি মাঠে গিয়ে দর্শক প্রিয় খেলোয়াড়ের কাছ থেকে আশানুরূপ পারফর্মেন্স না পেলে ভূয়া,ধুয়োধ্বনি দিতে পারে।বলতেই পারে `তামিম ভাই আপনি আরো সময় ধরে ব্যাটিং করলে ম্যাচটি দুরন্ত রাজশাহী জিততে পারত' ।এমনটা বলার জন্য মাদার*দ গালি দেওয়া কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।কোন যুক্তি দিয়েই গালিটাকে সমর্থন করাটা কি আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ?
শেষকথা।
বাংলাদেশের একজন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়ের নামের আগে বেয়াদব শব্দটি লিখতে হবে এমনটা ভাবিনি ।কিন্তু তামিমের একের পর এক আচরণের কারণে না লিখেও পারা গেল না।ভারতীয় ,পাকিদের আচরণের কারণে আমরা যদি ওদের বেয়াদব বলতে পারি তাহলে আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের আচরণের কারণে বেয়াদব লিখলে সেটা মেনে নেবার মানসিকতাও আমাদের থাকা উচিত।
সূত্র:আমার দেশ,কালের কন্ঠ,প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৫