ইন্টারভিউ বেপারটা সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় , ঠিক আমার কাছেও । গত কাল ছিল আমার একটি ইন্টারভিউ । সেটাই শেয়ার করবো আজ , তার আগে আমার প্রথম ইন্টারভিউ এর কথা বলি ।
প্রথম ইন্টারভিউ টা ছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তে ২০১০ সালে টেকনিক্যাল ডিভিশন এর । অনেক কঠিন একট পরীক্ষা ছিল । প্রাথমিক বাছাইয়ের ১৩০০+ এর মধ্যে শারীরিক , মানসিক , কাগজপত্র যাচাই শেষে আমরা মোট ১০৬৩ জন মূল লিখিতি পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করলাম । ৫০ নম্বর এর পরীক্ষা , ছোট প্রশ্ন ৫০ টি ( এক লাইন এ উত্তর দিতে হবে ) ১ ঘন্টা সময় । পরীক্ষার শুরুতেই এক অফিসার আমাকেই প্রথম ওয়ার্নিং দিল আশ পাশে কি দেখি , আর একবার দেখলে পাছার উপর লাথি মেরে বের করে দেবে । আর কোন দিক না তাকিয়ে উত্তর দেওয়া শুরু করলাম । প্রথম প্রশ্ন তেই বাধলো খটকা । প্রথম প্রশ্ন ''ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক কে ?'' বইয়ে পড়েছিলাম এমন '' বঙ্গবন্ধুর হয়ে স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন জিয়াউর রহমান '' । ব্যাস এই লাইন টায় লিখেদিলাম । আস্তে আস্তে সব গুলো উত্তর দিয়ে গেলাম চিন্তা ভাবনা করে । আবার বেধে গেলাম ইংরেজির ৫ টা প্রশ্ন , কি দিয়েছে কিছুই বুঝলাম না । হাতে আর ১০ মিনিট সময় । পরীক্ষায় আবার নেগেটিভ মারকিং ছিল ১/১ , মানে একটা ভুলের জন্য একটা সঠিক উত্তর কাটা যাবে । ইংরেজি থেকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিলাম । এর পর সবার আগে খাতা জমা দিলাম আমি । এর পর ওই অফিসার আবার আমাকে বলে '' কি বেপার পরীক্ষা শেষ , পাইবা তো লাড্ডু '' । মনে মনে কইলাম হ লাড্ডুই জেন পায় আর সেই লাড্ডু তোমার মাথায় ভাঙ্গবো । হল থেকে বের হয়ে আসলাম , রেজাল্ট ২ ঘন্টা পর , অপেক্ষা করতে লাগলাম যদি টিকে যায় । ২ ঘন্টা পর রেজাল্ট এর পালা , আমাদের সবাইকে পুরাতন বিমান বন্দর এর মাঠে দাড় করালো । তার নাম ধরে ডাকবে কে কে টিকেছে , আর বলে দিল মাত্র ১৬ জন কে টিকিয়েছে । এইটা শোনার পর আর ওখানে থাকতে ইচ্ছা করলো না , বাধ্য হয়ে থাকতে হলো । ১৬ নম্বর থেকে নাম ডাকা শুরু করলো । প্রথম দশ জন কে ডাকলো , আমি তাদের মধ্যে নেই । ওই দশ তো খুব খুশি , হবারই কথা । কোন একটা কারনে পরের নাম গুলো ডাক ছিলনা । কিছুক্ষন পর ওই সেই অফিসার বাকি ছয় জন এর নাম ডাকবে । এই জন্য কিছুক্ষন ডাকা অফ ছিল । উনি আবার বললেন তিনি যে প্রথম হয়েছে তার নাম আগে ডাকবেন । ১ম জন কে ডাকলো , আমি সে না । ২য় , ৩য় চলে গেল । আমি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ খোজার চেষ্টা করছি । যায় হোক ৪র্থ নামটি ছিল আমার আমার নাম বলার সাথে সাথে অফিসার এর দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হেসে ফেললাম উনিও মুচকি হাসি দিল । নাম্বার পেয়েছিলাম ৪২ । এর পর মেডিক্যাল পরীক্ষা , আনফিট হয়ে বাদ গেল ৮ জন । যে প্রথম হয়েছিল সেও বাদ । এর পর আমাদের ৮ জন কে একটি ঘরে নিয়ে গেল , সাথে ৪ জন অফিসার । নানা রকম প্রশ্ন , প্রেম করি কিনা, নেশা করিনা , চাকরি পাওয়ার জন্য কাউকে টাকা দিয়েছি কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি । দুই জন তো ভয়ে বলেই দিল '' একজন সিগারেট খায় , আর এক জন এর মামা নাকি কোন অফিসার এর সাথে লিংক করেছে । দুই জন কেই বাদ করে দিল । থাকলাম ছয়জন , এবার ভাইভা । দুই জন এর পরেই আমাকে ডাকল । আবার সেই অফিসার এর সামনে পরলাম । তবে এবার আর শেষ রক্ষা হলো না । আমার প্রশ্ন করলো বাংলাদেশ এ ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর কয়টা ? বললাম ৩ টা , উনি দুইটার নাম জানতে চাইলেন আমি বললাম দুইটার নাম । উনি বললেন 'গুড' । এবার উনি জানতে চাইলেন ''সে ভাত খায় '' ইংরেজি কি হবে ? আমি খুব দ্রুত বলে দিলাম ''He eat rice'' । প্যাচ টা লেগে গেল । উনি জিজ্ঞাসা করলেন ঠিক বলেছি কিনা ! আমি মাথা নেরে বললাম 'হ্যা' । উনি জানালেন ভুল , হবে ''He eats rice'' . Third person singular number এর শেষে ''S'' যুক্তি হয় । এইটা একদম মাথায় ছিলনা তখন । আমি বাদ ,সাথে আর ৪ জন , টিকেছিল ১ জন যে লিখিত পরীক্ষায় ৩য় হয়েছিল । পাইলট হবার আশা শেষ ।
এবার আসি দ্বিতীয় ইন্টারভিউ এর কথায় । দ্বিতীয় ইন্টারভিউ হয়ে গেল গতকাল । একটি বায়িং/ সেলিং অফিস এর বায়িং ডিপার্টমেন্ট এর একাউন্ট সেকশন এ । তবে এবার আর কোন পরীক্ষা দিতে হয় নি । মামার সাথে লিংক করেছি , মামার বন্ধুর অফিস । তাই সরাসরি ভাইভা তে ডেকেছে । উনি সাধারণ কয়েকটি প্রশ্ন করে জিজ্ঞাসা করলেন অবসর সময়ে কি করি ? বললাম ফেসবুকিং করি । এইটা শোনার পর উনি আমার দিকে ১ মিনিট চোখ বড় করে তাকিয়ে রইলেন । আমি কিছু বুঝলাম না । উনি আমাকে আসতে বললেন আমি উঠে চলে এলাম । বাইরে এসে মামা কে ফোন দিলাম , মামা জিজ্ঞাসা করলো কি কি জিজ্ঞাসা করেছে আমাকে ? মামা কে বললাম উনি তেমন কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি , সুধু জিজ্ঞাসা করলেন আমি অবসর সময়ে কি করি ?
মামা - তা তুমি কি বললে ?
আমি - যা করি সেটাই বললাম । ফেসবুকিং ।
মামা - তুমি কই এখন ?
আমি - অফিস এই বসে আছি । কবে জইন করতে হবে শুনবো না ?
মামা - শুনতেও হবে না জইন ও করতে হবে না । ওখান থেক চলে আসো ।
আমি - কেন মামা ?
মামা - কারন উনি ফেসবুক পছন্দ করেন না । ২ বছর আগে উনি একটা ফেইক আইডির প্রেমে পরে ছ্যাকা খাইছে ।
আমি - বলো কি মামা ?
মামা - কেন তুমি কি অফিস এ ঢোকার আগে দেখোনি বড় করে লেখা আছে ''Facebook not allowed'' ।
শেষ মেস এইটাও হইলো না -_-
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪২