সাম্প্রতিক কালে আমাদের পাশের দেশ ভারতে এক ধর্ষনের ঘটনা ঘটার পর ধর্ষন নিয়া যে বিতর্কটি খুব বেশি হইতাছে ব্লগে, ফেসবুকে কিংবা মিডিয়ায় হেইডা হইল “ধর্ষনের পেছনের মূল কারন হল নারীর অশালীনভাবে পোশাক পড়া”। এই ব্যাপারে ব্লগ বা ফেসবুকে এত মানুষ একমত পোষন করছেন দেইখা খুবই টাস্কিত হইলাম। অবাক করা বিষয় হইল, এমন কি অনেক মেয়েরা ও বলছে যে “ওয়েষ্টার্ণ কালচারে দিনে দিনে অভ্যস্ত মেয়েরা তাদের ব্যবহার, তাদের পোশাক দিয়ে ভুল বার্তা দিচ্ছে, যার কারনে রেপ বাড়ছে দিনে দিনে”। (লিংকঃ Click This Link ) মজার ব্যাপার হল এমন বক্তব্যের পেছনে কিছু ডেটা খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। অনলাইন ভিত্তিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার একটা চার্ট উল্লেখ করা যেতে পারে (লিংকঃ Click This Link )। যেখানে দেখা যাচ্ছে উন্নত বিশ্বে তুলনামূলক ধর্ষনের হার অনেক বেশি। অনেকেই তাই বলার চেষ্টা করছেন অবাধ যৌনতা/অশালীন পোশাক পড়া/ড্রিংক করা ইত্যাদির কারনে ওইসব দেশে ধর্ষন বেশি হচ্ছে।
একটা অবাক করা বিষয় হচ্ছে মেয়েদের শালীন পোষাক পড়া না পড়া নিয়ে দেখি শিক্ষিত আর অশিক্ষিত অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি একইরকম। তাদের বক্তব্য অনেকটা এ রকম যে, “তুই দেখিয়েছিস বলেই তো আমি উত্তেজিত হয়েছি। না দেখালেতো হতাম না”। তাই মেয়েরা বুঝেশুনে কাপড় পড়তে হবে। মানে মেয়েরা কি পড়বেন না পড়বেন সেটা নির্ধারন করে দিতে চাইছেন তারা!!!! অতএব মেয়েদের ইজ্জত রক্ষা করতে হলে পোষাক পড়ার স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হবে!!??? স্বাধীনতা নাকি ইজ্জত রক্ষা, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা নির্ধারন করার দায়িত্ব নারীর।। একটা তুচ্ছ নারী স্বাধীন হওয়া এবং ইজ্জত রক্ষা দুটাই চাইতে পারেনা । নারীরা খারাপ খারাপ পোশাক পড়ে ঘুরবে, আর তাকে আমরা নিরাপত্তা দেব, এমন মহান দায়িত্ব আমরা নেই নাই। তাই না?
আচ্ছা, এখন যদি নারীরা স্বাধীনতা ত্যাগ করে ইজ্জত রক্ষা করতে চায় তো যেসব “মহান পুরুষ এবং নারী” পোশাকের শালীনতা নিয়ে এত চিৎকার করছেন, তাদের কাছে এক্ষনে আমার এই প্রশ্ন যে শালীনতার সংজ্ঞা কি?? কতটুকু পোশাক পড়লে সেটা শালীন বলে আপনারা মনে করবেন?? আমার ধারনা এ বিষয়ে আমি হাজার ধরনের কথা শুনতে পাব!!
এ বিষয়ে একটা ঘটনা মনে পড়ল। একবার সন্ধ্যার দিকে বাসে করে বাসায় ফিরছিলাম। তো দাড়িয়েছি দরজার সাথে। পাশ দিয়ে যখন একটা সিএনজি যাচ্ছিল (যেখানে জিন্স আর ফতুয়া পড়া একটা মেয়ে ছিল) তখন হঠাৎ আমাদের বাসের হেল্পার একটা খারাপ কমেন্ট করে বসল। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম এমন করার কারন তখন সে বলল জিন্সের প্যান্ট আর ফতুয়া কোন ভাল মেয়ে পড়ে না। তার মানে কারো কারো কাছে জিন্সের প্যান্ট আর ফতুয়া পড়া খারাপ, কারো কাছে আঁটসাঁট পোশাক পড়া খারাপ, কারো কাছে মিনি স্কার্ট পড়া খারাপ। তো আপনার কাছে কোনটা খারাপ, কোনটা অশালীন?? আগে আপনারা ঠিক করেন যে একটা মেয়ে কি কি ড্রেস পড়তে পারবে । তারপর বলেন যে এই ড্রেসটা অশালীন, তুমি এটা পড়বা না।
তাহলে কি দাড়াল এখন?? মেয়েরা কি ধরনের শালীন পোষাক পড়বে সেটা আপনি ঠিক করে দিলেন এবং এই নিশ্চয়তা দিলেন যে শালীন পোষাক পড়লে আর কেউ ধর্ষিত হবে না। তাই কি?? ভাল কথা, আপনি যে আরেকজনের ড্রেস ঠিক করে দিচ্ছেন, আপনার নিজের পোশাক আরেকজনের কাছে কতটুকু গ্রহনযোগ্য?? অনেকেই তো ভাই লাল রঙ সহ্য করতে পারে না। আপনি লাল রঙ এর কাপড় পড়া তাহলে বন্ধ করে দেন। এখন কিন্তু আবার আপনি নানারকম যুক্তি দাঁড় করিয়ে দিয়েন না, নিজের ঘাড়ে পড়ল দেখে।
চলেন একটু গুগল সার্চ মেরে কিছু জিনিস দেখি। “রেপ ইন বাংলাদেশ” লিখে একটু সার্চ দিন। এবার আমাকে বলেন কয়টা সার্চ রেজাল্ট এ এসেছে যে রেপটা হচ্ছে ঢাকায় আর কয়টা গ্রামে?? বাজি ধরে বলতে পারি গ্রামে বেশি রেপ হচ্ছে, এটাই আপনি দেখবেন। এখন জনাব আপ্নেই বলেন বাংলাদেশের গ্রামের মেয়েরা কি ধরনের অশালীন পোষাক পড়ে!!!???
আপনি যদি বলেন যে গ্রামের মেয়েরা অশালীন পোষাক পড়ে তাহলে আবার সার্চ দিয়ে দেখেন অনেক গুলা রেপ ভিক্টিমই হচ্ছে ১৪/১৫ বছরের নিচের বাচ্চা। তাহলে ম্যাক্সিমাম ১৪/১৫ বছর বয়সের একটা বাচ্চা যদি অশালীন পোষাক পড়ে এবং সেটা দেখে যদি কেউ উত্তেজিত হয়ে যায় তবে আমার আর তেমন কিছুই বলার নাই!!! এবার আপনাকে প্রশ্ন করি, গ্রামের একটা মেয়ে কোন অশালীন পোষাক পড়ার কারনে রেপড হয়!!!?? আমি জানি আপনি উত্তরটা দিতে পারবেন না। আমি বলব আসলে সে পোষাকের কারনে যতটা না রেপড হয় তারচেয়ে বেশি রেপড হয় আপনার/আপনাদের মত কিছু চিন্তাশীল মানুষের বিকৃত চিন্তা-ভাবনার কারনেই, যারা মনে করেন “রেপড তো হইবই, যেই ড্রেস পড়ছে, মরা মানুষের ও লোম খাড়ায় যাইব, আর অয় তো আস্তা বেডা। অর আর দোষ কি??”
আমাকে এবার বলেন তো বাচ্চা ছেলেরা কেন রেপড হয়!!!??? অশালীন পোষাকের কারনে??
চলেন আবার একটু গুগল মামুর শরনাপন্ন হই। “রেপড বাই পাদ্রী, হুজুর, হিন্দু ধর্মগুরু কিংবা মঙ্ক” লিখে সার্চ দিয়ে দেখেন তো কি পান?? কি অবাক হলেন??? অনেক অনেক ঘটনা পাচ্ছেন?? সার্চ বন্ধ করে এবার আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দেন। এসব ধর্মগুরুরা তো সন্ন্যাসী টাইপ। তারা হিন্দি খুললাম খুল্লা নাচও দেখে না, আবার পর্ণ ও দেখেনা অথবা ওয়েষ্টার্ন কালচার (নাইট ক্লাব/অবাধ যৌনতা/ড্রিঙ্ক) এ ও অভ্যস্ত নয়। তাই না?? তাহলে তারা কেন রেপ করে!!??? কি ভাই আসমানের দিকে উদাস হইয়া চাইয়া রইলেন কেন?? বললেই তো পারেন উত্তরটা আপ্নে দিতে পারবেন না।
আসলে ভাই উত্তর একটাই। জানোয়াররা রেপ করে, কারন তারা জানোয়ার, তারা বিকৃত মনের মানুষ। ওয়েষ্টার্ন কালচার/ফ্রি মিক্সিং/অশালীন পোষাক পড়া/ড্রিংক করা ইত্যাদি কথা বলে আপনি একটা জানোয়ারের পক্ষ না নিয়া আসেন এর প্রতিবাদ করি, নিজেদের গায়ের ময়লা পরিষ্কার করার চেষ্টা করি। জানোয়ারের সাপোর্টার জানোয়ার ই হয়, মনে রাখবেন।