সকালে পাবলিক ল পরীক্ষা দিয়া আসছি...বাজে একটা পরীক্ষা দিলাম। প্রিপারেশনটা খারাপ ছিল না।। নিজের উপর আস্থা ছিল। এই বিশ্বাস ছিল যে, পামেলা এন্ডারসন সাজেশন (অতিরিক্ত হট সাজেশন) ধরা খাবেনা। সারাজীবন যত না পাঠ্য বই পড়ছি, তারচে বেশি পড়ছি প্রশ্ন, এক্সামাইনারদের মতিগতি বুঝার জন্য। উনাদের মতিগতি বুঝতে যে আমি ব্যর্থ হই না তেমন একটা, সেটা আমার সাজেশনের ভক্তগন জানে এবং মানে। সারাজীবন লেখাপড়ার চেয়ে আউট বই (গল্প উপন্যাস!!!) বেশি পড়ছি, আর খালি সিনেমা দেখছি।। তাই পামেলা এন্ডারসন সাজেশন ছাড়া আমার গতি কি??? যাইহোক, পরীক্ষা শেষে প্রচন্ড গরমে হেটে যখন পায়ের নিচে ফোস্কা পড়ার দশা, তখন মাথায় খালি গালাগালি ঘুরতে ছিল।। বুঝতাছিলাম না, কারে গাইল দিব।। বাসায় আইসা মাথাডা ঠান্ডা হইল না। ভাবলাম কিছুক্ষন ব্লগাউগি করি।। তাইলে মন খানা ঠিক হবে।। ব্লগাউগি করতে গিয়া মনে হইল আমিতো সাধারনত লেখি না, আজকে আমার ... মার্কা পরীক্ষার সাবজেক্ট খানা নিয়া একটু গালাগালি করি।। তাইলে গালাগালি ও হবে আবার একটু ভাব ও নেয়া হবে। মাঝে মাঝে ভাব নেয়ার ও দরকার আছে।। আমেরিকা, লন্ডনের পার্লামেন্ট নিয়া লেখলে মাইনষে বলবে, বাহ, এই বেটা দেখি আন্তর্জাতিক জ্ঞানসম্পন্ন!! ভাববাদীয় বিষয়ে আমার আগ্রহের কারন হইল, আমি ভাব নেয়া বিষয়ে নিতান্তই শিশু।। সেটা একবার এক ছোট বোন লজ্জা দিয়া বুঝায় দিছিল।। সে আমাগ কয়েকজনের ছবি তুলতে গিয়া বলছিল, এইবার একটু ভাব নেন দেখি।। আমার ভাব দেইখা, চোখ কপালে তুইলা বলছিল "এইটা আপনের ভাব নেয়া??" তারপর থিকা মাঝে মধ্যে ভাব কেমনে নেয় শিখতে মন চায়।।
যাইহোক, এইবার কামের কথায় আসি।।
ইউনাইটেড কিংডমের পার্লামেন্টের সদস্যগনদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রকম কনসাল্টেন্সীসহ অন্য অনেক কাজ করে থাকেন তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্যে।। এইসব কাজ করাকে আইন স্বীকৃতি দেয় এই জন্যে যে, যদি তারা এগুলোতে জড়িত না হয় তবে এম,পি হওয়ার জন্যে বিভিন্ন পেশার লোকদের আগ্রহ সৃষ্টি হবেনা। আর বিভিন্ন পেশার লোক না এলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর দক্ষ লোকের সমন্বয় ও হবেনা। বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ লোক পার্লামেন্টের গুনগত মানকে উন্নত করবে ভেবেই এই নিয়ম রাখা হয়।। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় কন্সাল্টেন্সী করার ফলে নানান রকম সমস্যার উদ্ভব হয়। যেমন, ব্রাউন নামে এক এম,পি এক ট্রেড ইউনিয়নের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এই শর্তে যে, সে ইউনিয়নের স্বার্থ সংরক্ষন করবে।। পরবর্তীতে তার শর্ত পূরনের ব্যর্থতার কারনে ট্রেড ইউনিয়ন তার চুক্তি বাতিল করার হুমকি দেয়।। অপর এক মামলায় দেখা যায়, ইউনিয়নের পলিসির পক্ষে ভোট না দিলে স্পন্সরশিপ তুলে নেয়া হবে বলে অনেক এম,পি কে হুমকি দেয়া হয়।। এসব কারনে এম,পি দের স্বাধীনভাবে কাজ করার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।।
ফলশ্রুতিতে একটি নিয়ম করা হয় যে, এম,পি দের বহিরাগত ইন্টারেষ্টের বিষয়টি পার্লামেন্টে রক্ষিত একটি রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।। মানে হল, তাদের পার্লামেন্টের বাইরে যত রকম অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে তা উক্ত রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করা হবে।। যার ফলে, তাদের সকল অর্থনৈতিক স্বার্থের ব্যাপারে সবাই জানতে পারবে এবং পার্লামেন্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। পরবর্তীতে পার্লামেন্টারী কমিশনার ফর স্ট্যান্ডার্ড গঠিত হয় যার অন্যতম কাজ ছিল উক্ত রেজিষ্টারের তদারকি করা এবং সকল সদস্যের বহিরাগত অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয়টি রেজিষ্টারে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
পাবলিক ল পড়ার সময় আমার মাথায় এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছিল যে এদেশে এখন সংবিধান নিয়ে যে তেলিসমাতি খেল খেলা হচ্ছে তার ফাকে ইউকে সংসদের এই বিষয়টি কি আমাদের সংবিধান এ যুক্ত হতে পারেনা?? আমাদের অধিকাংশ আইন ই যখন ব্রিটেন বংশদ্ভুত তখন এই বিষয়টি যুক্ত করা নিশ্চয়ই দোষের হবে না। সংবিধানে যুক্ত করা না গেলে আলাদা আইনের মাধ্যমেও রেজিষ্টার এবং পার্লামেন্টারী স্ট্যান্ডার্ড কমিটি করা যেতে পারে।। পার্লামেন্টারী স্ট্যান্ডার্ড কমিটি আরো যেসব কাজ করতে পারে তা হল সংসদের যাবতীয় অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর নজরদারী, সংসদদের বেতন ভাতা নিয়ন্ত্রন, সংসদের যাবতীয় অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি।। একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, ওই কমিটি কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে??? এ কমিটির নিয়ন্ত্রন নিশ্চয়ই সরকারী দলের সংসদের কাছে থাকা উচিত হবে না।। সংসদ সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে করা কমিটি এই ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে।। তবে একটি ভাল বিকল্প হল, ৩ জন সরকারী দলের সাংসদ, ৩ জন প্রধান বিরোধী দলীয় সাংসদ, এবং ৪ জন অন্য দলসমুহের সাংসদ নিয়ে কমিটি গঠিত হলে।। আরেকটি প্রশ্ন হতে পারে যে, উক্ত রেজিষ্টারটির অবস্থান কোথায় হতে পারে।। অবশ্যই উক্ত রেজিষ্টার এর এক কপি জাতীয় সংসদের প্রধান ফটকে রাখতে হবে।। তাহলে, সাধারন মানুষ অতি সহজেই সেটি দেখতে পারবে।। প্রযুক্তির এ যুগে, ইন্টারনেটে তার কপি থাকা বাধ্যতামুলক হওয়া উচিত।। আরেকটি গুরুত্ত্বপূর্ন বিষয় হল, এই রেজিষ্টার অতি অবশ্যই তাৎক্ষনিক ভাবে আপডেটেড হতে হবে। মানে হল, যদি কোন সংসদ সন্ধ্যা সাতটায় নতুন কোন ব্যবসা আরম্ভ করেন তবে যেন তা রেজিষ্টা্রে সাতটা পাচের মধ্যে আপডেট হয়।। অন্যথায় আমাদের মহান সংসদেরা বিভিন্ন কাজের দোহাই দিয়ে তা যথাযথভাবে আপডেট না করে ফাকিবাজি করে এই রেজিষ্টারের মুল উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিতে পারেন।।
বাংলাদেশের পার্লামেন্টে যদি এমন একটা রেজিষ্টার থাকে তবে আমরা অন্তত মানষিক শান্তি পেতাম যে তেনাদের ছেলে-পুলে, নাতি-পুতিরা যাই করুক, তেনারা অন্তত অর্থনৈতিক ব্যাপারে স্বচ্ছ।। অথবা এটা ভেবেও অনেকে এই আইনের পক্ষে মত দিতে পারেন যে, এই আইন করা হলে আমাদের রাজনীতিক নেতারা বৈধভাবে বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় স্থান পেয়ে আমাদের সম্মান বৃদ্ধি করবেন।। এছাড়া আমাদের স্পিকার ও বৈধভাবে নিজের ঘরের বাজার সংসদের ক্যাফেটেরিয়ার বাজার বলে চালাতে পারতেন!!!