মধ্যযুগের কবি বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যমতে অজান্তে ছিদ্র ছিল লখিন্দর-বেহুলার সুরক্ষিত বাসর ঘরেও, আর প্রাণঘাতী সাপটি প্রবেশ করেছিল সে পথেই! হ্যাকাররা সানাই না বাজালেও কথা কিন্তু ইতিমধ্যে চাউর হয়ে গেছে যে ছিদ্র আছে খোদ আইগডের (স্টিভেন পল জবস তথা স্টিভ জবস) আইওএস-তরীতেও!!
সম্প্রতি চিহ্নিত এই ভাইরাসের জেরে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর – ৬ মাসে ভাইরাসাক্রান্ত হয়েছে অন্তত ২০ লক্ষ আইফোনসহ অন্যান্য আইওএস অপারেটিংচালিত ডিভাইস। ফলে, এতোদিন নিশ্চিন্ত থাকলেও এবার সচেতন হতেই হচ্ছে আই-লাভারদের।
আইওএস-এর নিরাপত্তা নিয়েই আমাদের এবারের টেক সমাধান।
মনসামঙ্গল কাব্যানুসারে- পূজা প্রচারে অনীহা প্রকাশ করায় মনসা দেবীর অভিশাপে ঘরবাড়ি সব হারায় জনৈক চাঁদ সওদাগর। এসময় সারাদেশে দেখা দেয় সাপের উপদ্রব। চাঁদের ৬ পুত্রের ধারাবাহিক মৃত্যুর পর ঘোষণা আসে অবশিষ্ট শিশুপুত্র লখিন্দরকেও মরতে হবে সাপের কামড়েই, আর তা হবে ওই সন্তানের বিয়ের দিন।
এদিকে, যথাসময়ে লখিন্দর বিয়ের উপযুক্ত হলে কারিগর ডেকে লোহার ঘর তৈরী করায় চাঁদ সওদাগর। কিন্তু, মনসা দেবী স্বপ্নে এসে কারিগরদের নির্বংশ করার হুমকি দিয়ে বলে যায় তাতে ছিদ্র রাখতে। সেই ছিদ্র দিয়েই সাপ লখিন্দর-বেহুলার বাসর ঘরে প্রবেশ করে কাটে নতুন বরকে।
উল্লেখ্য, বগুড়া শহর থেকে ১০কিঃমিঃ উত্তরে এবং মহাস্থান গড় থেকে ২কিঃ মিঃ দক্ষিণে গোকুল গ্রামের দক্ষিন পশ্চিম প্রান্তে এই বাসর ঘর অবস্থিত।
পরে অবশ্য দেবতাদের সন্তুষ্ট করে মৃত লখিন্দরের জীবন ফিরিয়ে এনেছিল বেহুলা, সে গল্প হবে অন্য কোনো দিন। চলে আসি আইওএস’এর ছিদ্রান্বেষণে!
বিবিসি, ফোর্বস ও ফক্স ম্যাগাজিনের সংবাদ অনুযায়ী সনাক্তকৃত ম্যালওয়্যারটির নাম ‘এক্সকোডগোস্ট’ আর তা ছড়িয়েছে স্বয়ং অ্যাপল স্টোর থেকেই। বাহক হিসেবে অনেকগুলি অ্যাপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উইচ্যাট, মিউজিক অ্যাপ, ক্যামকার্ড এবং ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের অন্যতম জনপ্রিয় গেম এংরি বার্ড ইত্যাদি।
তারা আরও জানায় - দায় স্বীকার করে নিয়ে অ্যাপল তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে যে হ্যাকাররা অ্যাপল স্টোর হ্যাক করতে ‘না পারলেও’ আইওএসভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন এক্সকোড-কে আক্রান্ত করেছে এবং তা থেকে কিছু প্রোগ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে ম্যালওয়্যারটি।
এদিকে, বাজারে আগে থেকে প্রচলিত এন্টিভাইরাস কোম্পানিসমূহের আইওএসের জন্য বিশেষায়িত কোনো প্ল্যাটফর্ম না থাকলেও সম্প্রতি ধুম পড়েছে আইফোনের জন্য পৃথক এন্টিভাইরাস তৈরির। এ খাতে উল্লেখযোগ্য কোম্পানিসমূহের মধ্যে আছে ইন্টেগো, অ্যাভাস্ট, অ্যাভেইরা, ট্রেন্ড মাইক্রো ও নর্টন।
যেহেতু ম্যালওয়্যারটি একবার কোনো আইফোন, আইপ্যাড বা ম্যাকবুকে স্থান করে নিতে পারলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর সকল ফাইল তথা তথ্য পাঠাতে থাকে হ্যাকারের কাছে, তাই আইওএস-এর জন্য এন্টিভাইরাস এখন সময়েরই দাবি।
অবশ্য, অ্যাপলের পক্ষ থেকে ম্যালওয়্যারটি অপসারণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করা হলেও সমসাময়িক ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে আমাদের পরামর্শ এই যে আপাতত কিছুদিন কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার না করে কেবল সরাসরি অ্যাপল উদ্ভাবিত অ্যাপ্লিকেশন (যেসব অ্যাপ-এর নিচে প্রোভাইডার হিসেবে ‘অ্যাপল’ দেয়া আছে) ব্যবহার করুন। এছাড়াও, সব সময়ের জন্য কোনো একটি অ্যাপ ইনস্টল করার আগে তার সাম্প্রতিক রিভিউগুলো লক্ষ্য করুন।
সেই সাথে মনে রাখবেন পাবলিক ওয়াইফাই-তে সংযুক্ত হতে অবশ্যই ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করতে হবে এবং বাড়তি কিছুটা নেট খরচ হলেও মোবাইল বা পিসি আপডেটেড থাকলে রক্ষা পাওয়া যায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা থেকে (তবে, ভ্রমণে থাকাকালীন বা বাইরে যেখানে সেখানে ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে কখনোই কোনো সফটওয়্যার আপডেট করতে যাবেন না)।
ভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনো জিজ্ঞাসা বা মতামত জানাতে মন্তব্যের পাশাপাশি আগের অন্যান্য পোস্টসমূহ পড়তে ‘অনুসরণ’ করতে পারেন টেক সমাধান।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০২