বাহমান ঘোবাদী:
ইরান-ইরাক সীমান্তবর্তী ইরানীয়ান কুর্দিস্থান প্রদেশে ১৯৬৯ সালে বাহমান ঘোবাদীর জন্ম। ঘোবাদী ইরান ব্রডকাস্টিং কলেজ হতে ছবি পরিচালনার উপর পড়াশোনা করেন। তার Life In Fog নামের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচিত্রটি ইরানে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। মূলত একজন সংখালঘু কুর্দি রক্তের বাহক হিসেবে বাহমান ঘোবাদী সবসময়ই চেয়েছেন ইরান-ইরাকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা উপজাতির অবহেলিত মানুষগুলোর সুখদুঃখের ছবিগুলো সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দি করতে। তার উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম হল-
• Caméra d'Or at the Cannes Film Festival
• Gold Plaque from the Chicago International Film Festival
• Glass Bear and Peace Film Award at the Berlin International Film Festival
• Golden Shell at the San Sebastian International Film Festival
Turtles Can Fly (2004)
IMDB রেটিং-7.9
এই ছবির প্রেক্ষাপট ইরাক-তুর্কি সিমান্তলগ্ন সংখালঘু কুর্দি রিফুজী ক্যাম্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর ইরাক হামলা প্রায় সমাগত। সাদ্দাম হোসেনের আসন্ন পতন নিয়ে অত্যাচারিত কুর্দিদের রিফুজী ক্যাম্প-এ তাই মিস্র প্রতিক্রিয়া। ইরাকি টিভি চ্যানেলে কোন সত্য সংবাদ পাওয়া যায়না। ক্যাম্পের একমাত্র ভরসা তাই ১৩ বছরের কিশোর বালক “সেটেলাইট”। এমন অদ্ভুত নামকরনের কারন, ক্যাম্পে বিদেশী টিভি চ্যানেলে প্রকৃত সংবাদ জানার জন্য ডিস অ্যানটেনা স্থাপন এবং ইংরেজি সংবাদের ভুল-চু্ল, উল্টা- পাল্টা অনুবাদ কেবল “সেটেলাইট”-ই পারে। এর পাশাপাশি সেটেলাইটের আরেকটি পরিচয় হল, সে ক্যাম্পের সব অনাথ শিশু-কিশোর, যাদের দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটেনা তাদের নেতা। এইসব শিশু-কিশোরদের অনেকেরই স্থলমাইন-এ হাত-পা উড়ে গেছে। তারপরও তারা সেটেলাইটের নেত্রিত্তে স্থানীও কৃষকদের অনুরধের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন আবাদি জমি থেকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্থলমাইন অপসারণ করে, সংগৃহীত এইসব স্থলমাইন পরবর্তীতে তারা কালো বাজারে বিক্রি করে। এই রিফুজী ক্যাম্পএর নতুন অতিথি তিন অনাথ ভাইবোন, যথা আগ্রিন (বলাবাহুল্য, সেটেলাইট এই মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায়), তার পিঠেপিঠী দুহাত বিহীন কিন্তু ভবিষ্যৎ বানী বলার অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ভাই হেনগভ, এবং সর্বশেষ ৪-৫ বছরের অন্ধ ভাই রিগা। প্রকৃতপক্ষে রিগা তাদের ভাই নয় বরং এর আগের গ্রামে আগ্রিন যখন ইরাকি বাহিনীর সদস্যপদের দ্বারা গনধর্ষণের স্বীকার হয় তারই ফসল। প্রতিদিন আগ্রিন ভাবে এই রিগা নামক কলংকটিকে যদি পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া যেত, নাকি নিজেই মরে যাবে? যাহোক, শেষপর্যন্ত সেটেলাইট কি তার ভালবাশার দেখা পেয়েছিল? আগ্রিন কি ভুলে যেতে পেরেছিল তার অতীত দিনের গ্লানি? কিংবা হেনগভ, রিগার মত শিশু-কিশোরদের গন্তব্য কোথায় গিয়ে মিশেছে?
অনেক বেশি লিখে ফেললাম এই মুভিটি নিয়ে। কি করব বলুন? আমার নিজেরও যে খুব প্রিয় মুভি এটি!
যারা এখনও এই “গ্রেট মাস্টার পিস” মুভিটি দেখেননি এবং যারা যুদ্ধের মুভি ভালবাসেন তাদের প্রতি অনুরধ, প্লীজ এই মুভিটি দেখে ফেলুন। তবে অবশ্যই “নিজ দায়িত্তে”, এই ছবিটি দেখে যখন আপনি কাঁদবেন তখন আমাকে দায়ী করতে পারবেননা।
টরেন্ট লিংকঃ
Click This Link)_XviD_[Eng_subs]
A Time for Drunken Horses (2000)
IMDB রেটিং- 7.5
অনাথ তিন কুর্দি শিশু-কিশোর- আইয়ুব, তার বোন এবং তাদের বিকলাঙ্গ ছোট ভাই মাদি যার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। পরিবারের বড় হিসেবে আইয়ুব-কে বেছে নিতে হয় ইরাক-ইরান সিমান্তে চোরাচালানের কাজ। গাধার পীঠে টায়ার বেঁধে তুশারময় সীমান্ত দিয়ে একদিন আইয়ুব, তার বোন এবং তাদের বিকলাঙ্গ ছোট ভাই যখন একদল চোরাচালানীদের সাথে সীমান্ত অতিক্রম করছিলো তখনি বাঁধে বিপত্তি। টের পেয়ে যায় সীমান্ত রক্ষীরা। কি লিখা ছিল তাদের ভাগ্যরেখায়? জানতে হলে দেখুন A Time for Drunken Horses।
টরেন্ট লিংকঃ
Click This Link
Marooned in Iraq (2002)
IMDB রেটিং- 6.9
হয়তো ভাবছেন রেটিংতো খুব বেশিনা তবুও কেন উল্লেখ করলাম? আচ্ছা, আপনাদের কি মনে আছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম একটি ডকুমেন্টরি ফিল্ম “মুক্তিরগান”-এর কথা? কেন যেন এই ছবিটি দেখে মুক্তিরগান-এর কথা মনে পড়ে গেল। তাই আর লোভ সামলাতে পারলাম না।
তখন ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলছে। এরই মাঝে একদল ইরানীয়ান কুর্দি বাদক দল এক বিপদজনক অভিযানে নেমে পড়ে। আর তা হল, তাদের সাথের এক জাদুকরিকণ্ঠী শিল্পী যে কিনা সীমান্ত পার হয়ে ইরাকী কুর্দিস্থান-এ হারিয়ে গেছে তাকে খুঁজে বের করা। সত্যিই তাই, সংস্কৃতি কি কোন নির্দিষ্ট ভউগলিক পরিমণ্ডলে বেঁধে রাখা সম্ভব বলুন? সংস্কৃতি তো সার্বজনীন তাইনা?
টরেন্ট লিংকঃ
Click This Link)_[_Extra]
আসগর ফারহাদিঃ
১৯৭২ সালে ইরানের ইস্ফাহান প্রদেশে আসগর ফারহাদির জন্ম। তারপর পর্যায়ক্রমে থিয়েটারে গ্র্যাজুয়েট সহ নাট্যকলায় বিএ, এবং সর্বশেষ মঞ্চ নির্দেশনায় যথাক্রমে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় এবং তারবিয়াত মোদারেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। শুরুতে শর্ট ফিল্মে ও টিভি সিরিজ নিয়ে মনযোগী থাকলেও Dancing in the Dust ছবিটির মাধ্যমে চলচিত্র জগতে প্রথম পদার্পণ। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে তৈরি করে গেছেণ বক্তব্যধর্মী চলচিত্র আর যথারীতি তার সাফল্যও ঘরে তুলেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হচ্ছে-
• Asia Pacific Film Festival (2003)
• Warsaw International Film Festival (2004)
• Berlin International Film Festival (2011)
• Golden Globe Awards (2012)
• Academy Awards (2012)
ইত্যাকার , ইত্যাকার ।
A Separation (2011)
IMDB রেটিং-8.5
নাদের এবং সিমিনের ১৪ বছরের দাম্পত্য জীবন। ১১ বছরের একমাত্র কন্যা তারমেহ এবং নাদের-এর আলঝাইমার রোগাক্রান্ত বাবা সহ তেহরান শহরে এই পরিবারটির বসবাস। সিমিনের একান্ত ইচ্ছা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে চলে যাওয়া। সে চায়না এই পরিবেশের মধ্যে দিয়ে তাদের মেয়ে বেড়ে উঠুক। অন্যদিকে নাদের আপাতত তার বৃদ্ধ বাবা ভিন্ন অন্যকিছু ভাবতে নারাজ। ভাঙনের সূত্রপাত এখানেই। সিমিন বিবাহ বিচ্ছেদের চিন্তা ভাবণা শুরু করে এবং এর ফলশ্রুতিতে তার বাবা-মার কাছে চলে যায়। অপারগ নাদের তাই বৃদ্ধ বাবার দেখাশোনার্থে বাধ্য হয় রাজীয়া নামক একজন আয়া নিয়োগে। অনেকটা রগচটা রক্ষণশীল স্বামীকে না জানিয়েই ছোট মেয়েটিকে নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা রাজীয়া কাজ করতে আসত। যাহোক, কিছু টাকা চুরি যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজীয়াকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এবং বাসার সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে রাজীয়ার গর্ভপাত ঘটে। আদালতে নাদের দোষী সাব্যস্ত হয়। রাজীয়ার স্বামী এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোটা অংকের অর্থ দাবী করে কিন্তু ধর্মভীরু রাজীয়া সন্দিহান যে এ ধরণের দাবী কটটুকু যৌক্তিক? বিপদের এই দিনে অবস্থা সামাল দিতে সিমিন আপাতত ফিরে আসে। শেষ দৃশে দেখা যায় বিবাহ বিচ্ছেদ আদালতের বাইরে নাদের ও সিমিন অপেক্ষমাণ আর ভেতরে অশ্রুসজল দ্বিধাবিভক্ত তারমেহ ঠিক বুঝতে পারেনা সে কার সাথে যাবে? বাবা না মা ?
টরেন্ট লিংকঃ
Click This Link
About Elly (2009)
IMDB রেটিং-8.0
তেহরানের মধ্যবিত্ত সমাজের একদল বন্ধুবান্ধব তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে চলে যায় সমুদ্রতীরে। তাদেরই একজন Sepideh তার কন্যার শিক্ষক এলি-কেও সাথে নিয়ে আসে। উদ্দেশ্য সদ্য বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া জার্মান ফেরত বন্ধু আহমেদ-এর সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে দেয়া। পরদিন সকালে দলের অন্যান্য মহিলারা যখন শহরে শপিং করতে চলে যায় তখন এলি জানায় যে তার মাকে হার্ট সার্জারির জন্য হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাকেও ফিরে যেতে হবে। কিন্তু বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য এলিকে রয়ে যেতে হয়। এরমাঝে একটি শিশু সাগরে পড়ে গেলে দলের পুরুষরা তাকে সাগর থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু একি! এলি কোথায়? তবেকি সেও শিশুটিকে উদ্ধার করতে যেয়ে সমুদ্রে হারিয়ে গেল নাকি মায়ের অপারেশনের জন্য ইতিমধ্যেই শহরে ফিরে গেছে? অজানা এক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয় পরিবার তিনটি। শেষ পর্যন্ত কি হল?
টরেন্ট লিংকঃ
Click This Link
“বিখ্যাত ইরানীয়ান পরিচালক এবং তাদের চলচিত্র কর্মগুলো” - (১ম পর্ব )- Click This Link
“বিখ্যাত ইরানীয়ান পরিচালক এবং তাদের চলচিত্র কর্মগুলো” - (৩য় পর্ব )
Click This Link