কান ধরা নিয়ে চলছে তুমুল প্রতিবাদ! এটা কি নৈতিকতা থেকে? নাকি কোন ধর্মীয় ফায়দা হাসিল? নাকি বামদের রাজনৈতিক খেলা?
অনেকদিন পর অনলাইনে এসে বুঝলাম দেশে "কান ধরা" নিয়ে তুলকালাম হয়ে যাচ্ছে! পরিক্ষার কারনে পত্রিকা/টিভি দেখা হচ্ছেনা। তাই দেশে কি হচ্ছে তার তেমন কিছুই জানা ছিলো না।
আসুন একটু পেছনে ফিরে যাই
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কথা মনে আছে? পূর্ণিমা রানী নামে এক কিশোরীকে কথিত ধর্ষনের অভিযোগ এনে কি পরিমান প্রতিবাদ হয়েছিলো? "জনকণ্ঠ" পত্রিকা তো শিরোনাম করেছিলো 'বাঙ্গালির শৌর্যবীর্যে আক্রমণ'!
সম্প্রতি, তনুকে হত্যা(ধর্ষণ/যেকোন উপায়ে) করা হয়েছে,
ফলে তুমুল আন্দোলন হয়েছে! দেশে প্রতিদিন এমন অনেক ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে প্রতিবাদ হচ্ছে না কেন?
এক শিক্ষককে কান ধরে উঠ - বস করানো হয়েছে,
ফলে তুমুল প্রতিবাদ হচ্ছে! এর আগেও দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। সেক্ষেত্রে কোন জোড়ালো প্রতিবাদ হয়নি কেন?
যায়গা নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া হয়েছিলো পুর্নিমা রানীদের! এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে পুর্নিমা রানীকে দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছিলো। বিনিময়ে রানীর পরিবার এককালীন ২০হাজার টাকা পেয়েছিলো। সাথে প্রতিমাসে ১হাজার টাকা ও রানীর চাকুরীর অফার ছিলো!
সেই ঘটনায় তৎকালীন সরকারকে (বিএনপি) প্রায় বিপাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো! দেশে বিদেশে সরকারকে অনেক জবাবদিহি দিতে হয়েছিলো! বাংলাদেশী মিডিয়ার(হলুদ) প্রচার, প্রচারণা ও প্রতারণায় বিশ্ব মিডিয়া লুফে নিয়েছিলো পুর্নিমা রানী ধর্ষণের সংবাদটি! যদিও পরবর্তীতে পুর্নিমা রানীর স্বীকারোক্তিতে সত্য বেড়িয়ে আসে তা আর সংবাদে আসেনি!
কি ছিলো তনু যে তাকে হত্যার পর এতো আন্দোলন হলো অথচ অন্য হত্যার পর তা হচ্ছে না? তনু ছিলো একজন নাট্যকর্মী, সে "হিজাব" পড়তো আর ঘটনাটি ঘটেছে সেনানিবাস এলাকায়! ব্যাস, তনুর হত্যার প্রতিবাদে এই তিনটি উপাদান যতেষ্ট ছিলো!
নাট্যকর্মী হওয়ায় সে সাংস্কৃতিমনা ও কথিত প্রগতিশীল ছিলো বলে;
"হিজাব" পড়ায় দাবি হলো হিজাব ইজ নাথিং, এক অধ্যাপক তো পত্রিকায় কলাম লেখে ছিলো যে, তনুর হিজাব তনুকে রক্ষা করতে পারেনি; (সো হিজাব পড়ার দরকার নেই)
আর সেনাবাহিনী বিরোধী(দালাল ও দেশবিরোধী চর) গোষ্ঠী পেয়ে গেলো মোক্ষম হাতিয়ার!
এবার আসি কান ধরা নিয়ে
ঐ শিক্ষককে কান ধরানোর ফলে যে প্রতিবাদ হচ্ছে তা কি নৈতিকতা নাকি তা ধর্মীয় পরিচয়কে ব্যবহার?
কি অভিযোগ ছিলো ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে? এক ছাত্রকে মারধর আর আল্লাহকে গালি(নাউযুবিল্লাহ)দিয়েছিলো!
বাংলাদেশের আইনে সাজাটি যৌক্তিক না কিন্তু ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্য ক্লাস রুমে কূটুক্তি কতটা স্পর্ধা হলে সম্ভব এটা কি ভেবে দেখেছেন?
তাকে কান ধরানোয় যারা প্রতিবাদ করছে তারা কি ধর্মকে গালি দেওয়ার ব্যাপারে কিছু বলছে?
অনলাইনে এসেেই ৭১টিভির এক প্রতিবেদন দেখলাম। যেখানে তারা দেখালো যে, ঐ শিক্ষক নাকি ধর্ম নিয়ে কোন কিছু বলেনি! আর ৭১টিভি বলেই আমি নিশ্চিত ছিলাম ঐ শিক্ষক ধর্ম নিয়ে কিছু একটা নিশ্চয়ই বলেছে! কারণ ৭১টিভি যদি রাতকে রাত বলে আমি সেটাকে দিন হিসেবে ধরে নেই!
হ্যাঁ, কিছুক্ষন পরেই ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নাম পরিচয়সহ আরেকটি ভিডিও দেখতে পেলাম! যেখানে ছাত্ররা স্পষ্ট স্বীকার করছে যে, ঐদিন ঐ শিক্ষক ধর্ম নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলো!
এবার আসি কান ধরে ছবি আপলোড করে প্রতিবাদ নিয়ে
হয়তো এখানকার আবহাওয়াটাই এর জন্য দায়ী! আমরা খুব আবেগ প্রবন জাতি। তাই আমরা সহজেই যেকোন বিষয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে যাই! যদি তাই না হতো বাংলাদেশে প্রমানিত ধর্ম বিদ্ধেষী লেখক "থাবা বাবা"(রাজিবকে) দেখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেন ছুটে গিয়েছিলেন? প্রধানমন্ত্রী সেখানে তার ধর্ম বিদ্ধেষী লেখার সমর্থন দিতে যায়নি বরং মিডিয়ার রং ডং (ছেছড়াকে বীর বানানো) দেখে আবেগ থেকেই গিয়েছিলেন।
তনুকে হত্যার প্রতিবাদ নিয়েও সারা দেশের স্কুল কলেজ পর্যায়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে! আমাদের রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজেও মানব বন্ধন হয়েছে(আমি যাইনি)!
অনেকেই দেখছি যারা এসব কথিত "আন্দোলনকারীদের" প্রচারনায় পা দিয়ে ছিঃছিঃ করছে। নিজের কান ধরে ছবি তুলে আপলোড দিচ্ছে! যেমনটি করেছিলো তনুর জন্য মানব বন্ধনে গিয়ে। যদিও এরা "ঐ গোষ্ঠীর " আদর্শ, চরিত্র বা চেতনায় বিশ্বাসী নায়। কিন্তু না বুঝে ওদের সাথে সুর মিলাচ্ছে শুধুমাত্র আবেগ থেকে! যেই আবেগ থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শের হয়েও আমাদের প্রধানমন্ত্রী "থাবা বাবাকে "দেখতে গিয়েছিলেন!
তাই বলছি, শিক্ষককে কান ধরিয়েছে তাই শিক্ষকের অসম্মানে আপনি লজ্জিত হয়ে নিজেকে আবেগে ভাসিয়ে দিবেন না! শিক্ষক "ফেরেশতা নয়"! ভিকারুন্নেসা স্কুলের পরিমেল রায় সেও "শিক্ষক" ছিলো! অনেকে দেখছি জয় বাংলা স্লোগান থাকায় প্রতিপক্ষকে গায়েহলুদ করতে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন!
সব কথার শেষ কথা কান ধরে ছবি ছবি আপলোড করার আগে বলবো "ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবেও না "
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৩:০৫