এমন প্যাকেট হয়ে আছে কেন, শীত কি একটু বেশিই পড়ল! একটু ভাবেও আছে মনে হয়, হবে না কেন, ঘন কালো এলোকেশ আর স্নিগ্ধ চেহারার সুন্দরীদের একটু ভাবে থাকতে হয়। আরিফের ডাকে চমক ভাংলো,
- কি সমস্যা?
- সুন্দর।
- হুম, এবার ভুলে যা। তোর ভাবীর বান্ধবী, এদিক সেদিক কিছু হলে তুই তো ভেগে যাবি, আমার সংসারটাও বিয়ের আগেই ডিভোর্স।
- হুম।
সপ্তাহখানেক পর টিএসসিতে দাঁড়িয়ে আছি। সুরেলা কন্ঠের ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকালাম,
- হাই, কেমন আছেন?
- ভালো। আপনি?
- চিনতে পেরেছেন?
- হুম। শীতের প্যাকেটে এলোকেশি।
- মানে!
- কিছু না, সায়মার ফ্রেন্ড না আপনি?
- হুম।
- তারমানে আমরা বোধহয় ব্যাচমেট।
- হুম।
- সায়মা কোথায়?
- আসছে আরিফের সাথে। বললো এখানে আপনি আছেন, বোর হতে না চাইলে একসাথে ওয়েট করতে পারি।
- হা হা হা হা
- হাসছেন কেন?
- আমার সাথে সময় কাটালে মানুষজন আনন্দময় সময় কাটায়, এটা কি ভালো লাগার মতো নয়?
- হুম, চার্মিং খুব তাই না?
হোঁচট খেলাম ছোট খাট। বিদ্রুপ ছিল কি? কনফিউজড হয়ে গেলাম। মেয়েদের ভালো বুঝতে পারি এ ব্যাপারে অদ্ভুত একটা সুনাম আমার রয়েছে। অনেকদিন পর কেউ সেই ধারণায় নাড়া দিয়ে গেল। মখা জিন্দাবাদ, তার থিওরীতে জনগণ পিলার নাড়ায় না শুধু, আত্মবিশ্বাস ও ইদানীং নাড়িয়ে দিতে শুরু করেছে। নীরবতাই সর্বোত্তম পন্থা।
কল দিয়ে কথা বলতে চাওয়াটা সব সময় ‘বিরক্তিকর’ ই মনে হয়েছে। অযথা কাউকে কল দিয়ে সম্পর্ক গড়ার চেস্টা নিজের ডেস্পারেসন আর অন্যের বিরক্তির উদ্রেক হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। তবুও অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে আত্মসম্মান কে আত্মহত্যা করতে রাজি করিয়েই ফেললাম। পরিচিতরা বলে আমি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারি, তাদের অর্চি নামের পাখিটার সাথে কথা বলিয়ে দিতে পারি, এবার বুঝ সুন্দর করে কথা বলা কাকে বলে!
- হ্যালো
- হাই, কেমন আছেন?
- ভালো। কে বলছেন?
- দি চার্মিং প্রিন্স!
- এহেম এহেম, ও আচ্ছা, আপনি!
- হুম। কি অবস্থা?
- আছি। আমি আসলে একটু বিজি।
- পড়ালেখা?
- উহু। এতো রাতে বয়ফ্রেন্ড ফোন বিজি দেখলে রাগ করবে।
- ওহ, আচ্ছা, স্যরি টু ডিস্টার্ব ইউ।
- ইট’স ওকে। বা বাই।
খারাপ লাগলো নাকি? বুঝলাম না ঠিক। ব্যাপার না। সকালে থেকে সারাটা দিন ভালোই কাটলো, রাতে শুয়ে শুয়ে মাহির সাথে কথা বলছিলাম। মনটা ঠিক মনের যায়গায় ছিলো না। একটু পরই মাহি রেগে গিয়ে বললো,
- হোয়াট’স রং উইথ ইউ? আমি তোমাকে কতক্ষণ ধরে বলছি স্যাড সংটা বন্ধ করো, অসহ্য লাগছে!
- দেখো স্ট্যাটিসটিক্স বলে পৃথিবীর ৯৯.৯৯% গায়ক গান গেয়েছেন মন ভরতি দুঃখ নিয়ে।
- বাজে কথা বলবা না। তুমি হানি সিং এর লুঙ্গি ড্যান্স শুনছো?
- হুম ঐ যে পর্ণ সিঙ্গারটা না?
- মানে কি!
- কিছু না। ঘুম পাচ্ছে, কাল কথা বলি?
- আর ইউ চিটিং অন মি?
- হুম। বাই।
কেটে দিলাম। কেটে দিয়ে অর্চিকে কল দিলাম। রিং হলো, নো অ্যান্সার। ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাসখানেক পর। হেটে টিএসসির দিকে যাচ্ছিলাম, সায়মার সাথে অর্চিকে দেখে থমকে দাড়ালাম। হুম ভালোই আছে। তো? আমার কি! মনে হয় আমার মাথা খারাপ হয়ে যাছে, ডাক্তার দেখাতে হবে। সায়মার খোজ নিয়ে সামনে এগোলাম। বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। আড্ডা দিতে হবে। অর্চির সাথে কথা হলো না।
রাতে শহর বেড়ানোর আলাদা একটা ব্যাপার আছে। হলুদ নিয়নের নিচে কালো পিচ বেয়ে ছুটে চলা, শুধুই ছুটে চলা। পাশে বসা রাশানের ফোন বেজে উঠলো। আহ! মধু মধু। নিচু স্বরে ব্যাখ্যা করার চেস্টা কেন রাত দু’টো বাজে উচ্ছ্বন্নে যাওয়া বন্ধুর সাথে ঘোরা অপরাধ নয়। ফোনের ডিসপ্লের আলো জ্বেলে অযথাই সময় দেখলাম, ইশ! আমার যদি একটা কৈফিয়ত নাম্বার থেকে ফোন আসত?