দুটো সুপরিচিত বাংলাদেশী কোম্পানি - গ্রামীনফোন এবং বাংলালিংক।
গ্রামীণফোনঃ টেলিকমিউনিকেশন জগতে দাপটের সাথে দীর্ঘদিন যাবত শীর্ষস্থান দখল করে রাখা 'গ্রামীণফোন লিমিটেডের' গ্রাহক সংখ্যা সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৪০.৩৩ মিলিয়ন। ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করা কর্পোরেশনটির রেভিনিউ ৮৯৯ মিলিয়ন ইউএসডি। নেট ইনকাম ৬৪০৩.৮ মিলিয়ন বিডিটি এন্ড গ্রোয়িং। সার্বজনীনভাবে জিপি নামে পরিচিত অরগ্যানাইজেসনটি ৫০০০+ এমপ্লয়ি নিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে উচ্চ কর প্রদানের মাধ্যমে। গ্রামীণফোন লিমিটেড হলো 'টেলিনর' এবং 'গ্রামীণ টেলিকম কর্পোরেশনের' একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার। গ্রামীণ টেলিকম কর্পোরেশন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত মাইক্রো ফাইন্যান্স অরগ্যানাইজেসন এবং কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক 'গ্রামীণ ব্যাংকের' একটি নন প্রফিট সিস্টার কনসার্ন। নরওয়ের সর্ব বৃহৎ টেলিকম কোম্পানি টেলিনর, গ্রামীণফোনের ৫৫.৮% মালিকানা অংশীদার।
দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীনফোনের বিরুদ্ধে উচ্চ কল রেটের অভিযোগ চলে আসছে। সকল সার্ভিসে অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় অধিক চার্জ করা সত্ত্বেও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকার কারণে দেশের টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে এই পজিশন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে জিপি।
অক্টোবার ২০০৭, বিটিআরসি গ্রামীনফোনকে অবৈধ কল টার্মিনেসন বা ভিওআইপি করার জন্য অভিযুক্ত করে। সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত ল্যান্ড লাইন সার্ভিস, গ্রামীনফোন সরকারি নিয়ম-নীতি অগ্রাহ্য করে ব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বাংলাদেশ সরকারকে বঞ্চিত করে। বাংলাদেশ সরকার গ্রামীনফোনকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ২৪.৫ ইউএসডি জরিমানা করে। এরপরেই কেঁচো খুড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসে সাপ। তদন্তকালে দেখা যায়, গ্রামীনফোন শুধু অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় নয়, এক্সেসটেল নামক একটি আইএসপি কে ভিওআইপি ইকুইপমেন্ট ও সরবরাহ করে আসছিল। পূর্বে ধারণাকৃত অংকের চেয়েও অনেক বিশাল পরিমাণে অবৈধ লেনদেন হচ্ছিলো। ডিসেম্বর ২০০৭, সরকারি সংস্থার রেইডের পর জব্দকৃত দলিলাদি ও পরবর্তী সময়ে গ্রামীণফোনের বিবৃতি অনুযায়ী গ্রামীণফোন অবৈধ ভিওআইপি অপারেটরদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করে আসছিলো।
জানুয়ারি ২০০৮, বিটিআরসি জিপির দুই পূর্ববর্তী সিইও ও অন্যান্য অফিশিয়ালদের বিরুদ্ধে কেইস ফাইল করে। পরবর্তীতে গ্রামীণফোনকে বিটিআরসি ২৫০০ মিলিয়ন টাকা জরিমানা করে।
বাংলালিংকঃ সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হিসেবে টেলিকমিউনিকেশন জগতে দ্বিতীয় স্থান দখল করে রাখা বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৫ মিলিয়ন। গ্রামীনফোনের পরেই টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে এর স্থান। ১৯৯৬ সালে কার্যক্রম শুরু করা কর্পোরেশনটির রেভিনিউ ২৮৮ মিলিয়ন ইউএসডি এন্ড গ্রোয়িং। পূর্বে 'সেবা' নামে পরিচিত অরগ্যানাইজেসনটি বাংলাদেশের প্রথম পোস্টপেড এবং প্রিপেডে ফ্রি বিটিটিবি ইনকামিং ও আউট গোয়িং সুবিধা প্রদানকারী।
আবার সেই অক্টোবার ২০০৭, বিটিআরসি বাংলালিংক কে অবৈধ কল টার্মিনেসন বা ভিওআইপি করার জন্য অভিযুক্ত করে। তৎকালীন বিটিআরসি চেয়ারম্যান এই অভিযোগ নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে বাংলালিংক বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ জরিমানার নির্ধারিত ১.২৫ বিলিয়ন টাকা এককালীন মেয়াদে পরিশোধ করে।
স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তির সাথে আপ-টু-ডেট থাকা তরুণ প্রজন্মের একটি নিত্য চাহিদা। ব্রডব্যান্ড সংযোগ এখন আর বিলাসিতা নয়। ঘরের গৃহিণীও আউট সোর্স নামক সুযোগের সাহায্য নিয়ে হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী।অতি সম্প্রতি দুঃখজনক ভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিসের দাম কমানোর যথাযথ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দাম কমানোর ব্যাপারে উদাসীনতা। দাম কমানোর কারণ, যৌক্তিকতা, সম্ভাবনা, দাবি ও কিলোবাইট কষার অংকে যাবনা। এটি নিয়ে অনেকেই লিখেছেন ও মতামত রেখেছেন। দৃষ্টি আকর্ষণ অন্যদিকে।
তিনটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি - ভিম্পেলকম লিমিটেড, টেলিনর এবং ওরাসকম টেলিকম হোল্ডিং।
ওরাসকম টেলিকম হোল্ডিংঃ ওরাসকম টেলিকম হোল্ডিং (OTH) একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, কানাডা এবং এশিয়াতে জিএসএম নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। আমরা সবাই ওরাসকমের সাথে কম বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার বাংলালিংকের প্যারেন্ট কোম্পানি এটি। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্পোরেশনটি লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ এ OTLD নামে এনলিস্টেড। ২০০৯ সালের রেভিনিউ ৫.০৬৫ বিলিয়ন ইউএসডি।
এখন দেখব ওরাসকমের প্যারেন্ট কোম্পানি ভিম্পেলকমের বর্তমান পরিস্থিতি।
ভিম্পেলকম লিমিটেডঃ এপ্রিল ১৫, ২০১১। ভিম্পেলকম লিমিটেড ওরাসকমের সাথে তাদের কম্বিনেসন ক্লোজিং এর ঘোষণা দেয়। যার ফলাফল স্বরূপ এখন ভিম্পেলকম ওরাসকমের ৫১.৭% এর মালিকানা অংশীদার এবং একইসাথে বর্তমান বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম মোবাইল টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত অরগ্যানাইজেসনটি ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ এ ভিআইপি টিকার নিয়ে এনলিস্টেড হয়। পূর্ববর্তী রাশিয়ান ওজেএসসি ভিম্পেলকম এবং কিয়িভস্টার; বর্তমান নেদারল্যান্ডের ভিম্পেলকম ৬৬০০০ এমপ্লয়ি নিয়ে রেভিনিউ অর্জন করে ২৩.১ বিলিয়ন ইউএসডি।
টেলিনর গ্রুপঃ টেলিনর গ্রুপ একটি নরওয়েজিয়ান মাল্টি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ অত্র ইন্ডাস্ট্রিতে। টেলিনর স্ক্যান্ডেনেভিয়া, ইস্টার্ন ইউরোপ এবং এশিয়াতে জিএসএম নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এছাড়াও ৪টি নরডিক কান্ট্রিতে টেলিনরের এক্সটেনসিভ ব্রডব্যান্ড এবং টিভি ডিস্ট্রিবিউসান নেটওয়ার্ক আছে। ১৮৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্পোরেশনটির অসলো স্টক এক্সচেঞ্জ এ এনলিস্টেড মার্কেট ক্যাপিটালাইজেসন ১৯৭ বিলিয়ন ক্রোনার - মে, ২০১৩; যা শীর্ষ তিনে নিয়ে গিয়েছে টেলিনরকে। ৩৩,২২০ জন এমপ্লয়ি নিয়ে কোম্পানি রেভিনিউ ৯৮.৫১৬ বিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ক্রোনার। নরওয়েজিয়ান সরকার এই কোম্পানির ৫৪% মালিকানা অংশীদার।
কোম্পানি হিসেবে টেলিনর খুব একটা সুখ্যাত নয়। বাংলাদেশে অবৈধ ভিওআইপি কানেকশন ছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে টেলিনরের অংশ পরিচয়ে গ্রামীণফোন চাইল্ড লেবারের জন্য অভিযুক্ত। একটি ড্যানিশ টিভি ডকুমেন্টারি চাইল্ড লেবার, অস্বাস্থ্যকর এবং মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকি সম্বলিত কর্ম পরিবেশের জন্য টেলিনরকে অভিযুক্ত করে। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা বেড়া না থাকার কারণে, এসিড ভর্তি জলাশয়ে একজন কর্মী নিহত হন।
দৃষ্টি আকর্ষণঃ এই পাঁচটি কোম্পানি সম্পর্কে এত বিশদ আলোচনার কারণ স্মার্ট রাজপুত্র (smart rajputro) নামক ফেসবুক ইউজারের 'আমরা ব্লগার' পেজে একটি পোস্ট। দৃষ্টি আকর্ষণ করি ৪৩% ভোটিং রাইট এবং ৩৩% ইকোনমিক রাইট নিয়ে ভিম্পেলকমের মালিকানা অংশীদার টেলিনর এর দিকে!
আমি তো বোকচোদ হয়া গেলাম রে! ওরাসকম হইল ভিম্পেলকমের সাবসিডিয়ারি, আর ভিম্পেলকমের মালিক হইল টেলিনর। কিন্তু ওরাসকম তো বাংলালিংকের প্যারেন্ট কোম্পানি! তার মানে দাঁড়াইল - গ্রামীণফোন হইল বাংলালিংকের মালিক! আমি ঠিক জানিনা গ্রামীণফোন আর বাংলালিংক কে এই মুহূর্তে একে অপরের প্রতিযোগী হিসেবে আইডেন্টিফাই করা যায় কিনা। খুবই কনফিউজড আমি। কি হইতেসে আমাদের দেশে, আমাদের নিয়া। বাঙালি কি পুতুল খেলার পাত্র-পাত্রী শুধু মাত্র? বিজনেস স্টাডিজের স্টুডেন্ট হিসেবে আমি যদি ধরে নেই গ্রামীণফোন আর বাংলালিংক ভাই ভাই; হয়ত একমত পোষণ করবেন, একটা জিনিষ খুব স্পষ্টতই দেখা যায় - শুরুর দিকে গ্রামীণফোন নিশ মার্কেটিং, আর বাংলালিংক কস্ট লিডারশীপের আশ্রয় নিয়েছে।
গ্রামীণফোন বা বাংলালিংক - কারোই বাংলাদেশে আইন-কানুন মেনে কাজ করার কোন অভিপ্রায় আমি খুঁজে পাইনি। আন্তর্জাতিক কোম্পানি পরিচয়ে টেলিনর নিজেও খুব একটা সুনামের অধিকারি নয়। বহুল আলোচিত গ্রামীণ ব্যাংক জেন্টলম্যানস এগ্রিমেন্ট কেও টেলিনর সম্মান করার প্রয়োজন বোধ করে নি। নরওয়েজিয়ান ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ সংক্রান্ত ঘটনাবলী টেলিনর ধোঁয়াশা করে রেখেছে।