আবেগ বা অনুভূতি, সব প্রানীরই হয়তো আছে অথবা নেই। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব, আমাদের কথা ভিন্ন। রবোটিক্স সেক্টরে এখন পর্যন্ত অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিউরন আর নিউরনের এক্টিভিটি নিয়ে এখনো তেমন আশানুরুপ কিছু পাওয়া যায়নি। ক্লোনিং ও মোটামুটি ভালোই আশার পথ দেখছে ইদানিং কিন্তু আবেগ অনুভূতি, কিভাবে নিউরন আবেগ ও অনুভূতিগুলোর প্রতি সাড়া দেয় বা কাজ করে তার জটিলতা এখন পর্যন্ত ব্যাখ্যা করারই পদ্ধতি জানা যায়নি। গবেষণা যে চলছে না, তা নয়। পুরোদমেই চলছে। হয়তো কোন একদিন প্রযুক্তির ধারাবাহিকতায় তা সম্ভব হয়েও যেতে পারে। তেমনি এক যুগের গল্প নিয়ে এ মুভির কাহিনী।
Chappie(2015) মুভিটি দেখার পর আর নিজেকে থামিয়ে রাখা গেলো না রিভিউ লেখা থেকে। অনেকদিন পর রিভিউ লিখতে বসেই গেলাম। আমরা সেরা জীব কেন ? চার হাত-পা আছে, নাক,কান গলা, পাঁচটি ইন্দ্রীয় আছে, এ জন্যে? না! আমরা সেরা জীব আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়ের জন্য। আমাদের সচেতন মনটার জন্য। আমরা, মনুষ্য প্রজাতি আমরা খুব দ্রুত কঞ্জিউম করতে পারি। আমাদের সচেতন মন আর আমাদের বিশাল মেমোরি স্পেস এর কারণে আমরা অন্যসব প্রাণী থেকে আলাদা। আমরা কিছু দেখে বা শুনে সেটা নিয়ে ভাবতে পারি, পারি সেখান থেকে শিখতে। আমরা নিজেদের মেধা দিয়ে নিত্যনতুন বিন্যাস তৈরি করতে পারি। যদিও তা সাধারণ কম্পিউটারের মত ইজিলি এক্সেসেবল বা কন্ট্রোলেবল না। তা পুরোপুরি প্রাকৃতিক নিয়মেই করে থাকি। প্রাকৃতিক বললাম একারণে, যেহেতু এই ব্যাপার নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হয়নি।আমাদের এই বৈশিষ্ট্য আমাদের কে অন্য সবকিছু থেকে আলদা করে।
এতক্ষণ যা বললাম, ধরুন এটা যদি এখনই সম্ভব হত, তবে? একবার ভেবে দেখুন। সচেতন মন দিয়ে আমরা মূলত নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করি। অবচেতন মন বলে যেটা আছে, তার উপর আমাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই, কিন্তু সেটাও আমাদের সচেতন মনের যোগাড় করা স্মৃতি বা মেমোরি অথবা বলতে পারি ডাটা দিয়েই চলে। যদি সচেতন মনটাকে চিরঞ্জিবী করা যায়, তবে কেমন হত? যদি এমন হত, মারা যাওয়ার মুহূর্তে আপনার সচেতন মনটাকে ট্রান্সফার করে অন্য একটা ফ্রি বডি তে মুভ করা যায়? তাহলে এভাবে হয়তো আপনি চিরঞ্জীবী হতে পারতে। বেঁচে থাকতে পারতেন যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি। আপনি একজন মানুষ, আপনার সচেতন মন,চিন্তাধারা,মানসিকতা পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়েছে আশপাশ থেকে শিখে, বুঝে, জেনে। আপনার সচেতন মনের মাধ্যমেই আপনি একজন আলাদা সত্তা হিসেবে পরিচিত। যদি আপনার সচেতন মন না থাকে তবে আপনি বলতে কেউ কি থাকবে? থাকবে না। এই সচেতন মনটিই মূলত আপনার সত্তা, বা আপনার সত্তার ধারক। বাহক তো যে কেউ হতে পারে?! যে কোনে একটা শরীর হতে পারে? ভেবে দেখুন।
যদি উপরের প্যারা পড়ে আপনার উত্তর হ্যাঁ আসে তবে, আপনি বুঝে গিয়েছেন। এই মুভির বিষয়বস্তু কি হতে পারে। না আসলে, আপনাকে শুধুমাত্র একটি সাধারণ একশন মুভি হিসেবেই বেছে নিতে হবে এই মুভিটিকে। পিকে মুভিটি যদি দেখে থাকেন, তবে সেখানে নিশ্চয় ব্যাপারটা দেখেছেন, যে একজন পূর্ণবয়স্ক বাচ্চার অবস্থান কি হতে পারে, এই পৃথিবীতে যদি হুট করে চলে আসে? আমরা যত দ্রুত শিক্ষা গ্রহণ করি, তার থেকে অনেক বেশি দ্রুত যদি শেখার সামর্থ্য থাকতো তবে আমরা হয়তো সবকিছু আরো দ্রুত করতে পারতাম, যেমন কথা বলা, মনযোগ দিয়ে শোনা অথবা কোন একটা জটিল বিষয় হয়তো আরো সহজে সমাধান করতে পারতাম? পিকে মুভির আমির খানের চরিত্রটির কথা ভাবুন, এবার তার সাথে দ্রুত সবকিছু শিখে ফেলার যোগ্যতাটিকে যুক্ত করুন, যা পেলেন, তাই হচ্ছে আমাদের এই মুভির মূল থীম, মূল চরিত্র "Chappie"। আর ঘটনাপ্রবাহ ? Chappie কি করে তৈরি হল, আর কি করে সে এতকিছুর সাথে জড়িয়ে গেলো, তার জন্য অবশ্য মুভিটি দেখবেন।
মুভিটির প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে আছেনঃ Dev patel, Hugh Jackman। মুভিটি নিয়ে আপনার ভাবনাগুলো জানালে খুশি হবো। আমি যে দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মুভিটি দেখেছি, যা বুঝেছি। আমার সচেতন মন, আমার চিন্তাধারা আমাকে মুভিটি যেভাবে গ্রহণ করতে সহযোগিতা করেছে, আপনার সচেতন মন হয়তো ভিন্ন কোন পন্থায় নিলো ? কিজানি, হয়তো নতুন কোন ধারণা বের হয়ে এলো এর থেকে? সবশেষে একটি কথা, " মানুষের মন বড় বিচিত্র"।
মুভিটির বিস্তারিত জানতেঃ আই এম ডি বি লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২৮