আড্ডা দিচ্ছিলাম উদ্যানের মাঠে বসে, গ্লাস টাওয়ারের কাছেই। আড্ডা দিতে দিতে একসময় তা তর্কে রুপ নিলো। গ্লাস টাওয়ারের উচ্চতা নিয়ে। কেও বলছে ৮ তলা উচ্চতা হবে, কেও বলছে ১২ তলা, কেও বা আবার বলছে ১৫ তলা। তর্কের সমাধান পেতে আর্কিটেকচ্যার এক বন্ধু কে ফোন দেওয়া হল, যে বললো এর উচ্চতা হচ্ছে ছয়তলা। কিন্তু আমরা কেওই মানতে রাজি ছিলাম না যে এর উচ্চতা এত কম হওয়া সম্ভব। ওর যুক্তি ছিল এই যে, যেহেতু খোলামেলা আশে পাশে তাই এর উচ্চতা এত বেশি মনে হচ্ছে আমাদের কাছে। আসলে এর উচ্চতা পনের তলা ভবনের সমান বা কাছাকাছি( যদি ফ্লোরের উচ্চতা ১০ ফুট ধরি তবে সমান, আর যদি ১২ ফুট ধরি তবে একটু কম) । অবশেষে এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে কোন কিছু সন্ধান পেতে যার দারস্থ হই আমরা, সেই গুগল মামার কাছে খোঁজ লাগালাম। মেজাজ টা খারাপ হতে শুরু করলো, খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ঘুরে ফিরে পেলাম একটা ফরেইন ওয়েবসাইটে। ভাবলাম, একটা পোস্ট দিলে কেমন হয়, হাতের কাছে সবসময় থেকে গেলো তথ্যটা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, আদি নাম রেসকোর্স ময়দান। আমাদের দেশের ইতিহাসের অন্যতম ধারক ও বাহক। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতির সঙ্ঘবদ্ধতা নিয়ে যে গর্বিত স্থান নিয়ে অবস্থান করছে ঢাকার মধ্যমণি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেই। সেই উদ্যান যেখানে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেলন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। সেই উদ্যান যেখানে কাগজে কলমে পরাজয় মেনে নিয়েছিল পাকি বাহিনী। বাংলাদেশের ইতিহাসের মূল দুটি ঘটনা, যেখান থেকে এই দেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু এবং যেখানে এসেই জয়ী হওয়ার স্বাদ, মুক্ত হাওয়ার স্বাদ নেওয়া। সেই ইতিহাসের সাক্ষী কে বিশ্বদরবারে এবং দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বিজয়ের প্রতিক স্বরুপ সদা জাগ্রত রাখার উদ্দেশ্যে নীর্মিত হয়েছে ঢাকা গ্লাস টাওয়ার।
ঢাকা গ্লাস টাওয়ার মূলত স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পের মূল কাঠামো। একে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এই স্বাধীনতা স্তম্ভ, যে প্রকল্পের আওতায় আছে>>
>একটি ভূগর্ভস্থ গ্যালারী
>একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
>একটি গবেষণা কেন্দ্র
>একটি ২০০০ জনের ধারণক্ষমতা সম্মত মাল্টিমিডিয়া অভিক্ষেপ প্রদর্শণশালা
>একটি এম্পিথিয়েটার ( মুক্তিমঞ্চ )
স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয় ১৯৯৭ সালে। যার অন্তর্ভূক্ত মূল কাঠামো আলোকস্তম্ভ বা লাইট টাওয়ার যা ঢাকা গ্লাস টাওয়ার নামেও পরিচিত।
১৯৯৭ সালেই একটি জাতীয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত Urbana নামক প্রতিষ্ঠানের আর্কিটেক্ট মারিনা তাবাস্সুম এবং কাশেফ মাহমুব চৌধুরী ঢাকা গ্লাস টাওয়ারের ডিজাইন করার দায়ীত্ব পান। স্বাধীনতার ধারক ও বাহক হিসেবে, স্বাধীন দেশের প্রতীক হিসেবে নীর্মিত হয় এই ঢাকা গ্লাস টাওয়ার। গ্লাস টাওয়ারের ভিত্তিটি ১৬ ফুট বাই ১৬ ফুটের ( ৪.৮৮ বাই ৪.৮৮ মিটার) একটি কাঠামো যা সম্পূর্ন স্বচ্ছ কাচের পাতের সুবিন্যস্ত স্তূপ দিয়ে নীর্মিত। এর উচ্চতা ১৫০ ফুট বা ৪৫.৭৩ মিটার। গ্লাস টাওয়ারের আলোর উৎসের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সিঙ্গাপুরের একটি লাইট ডিজাইন স্টুডিও Light Collab (লাইট কলাব) নামের প্রতিষ্ঠানের তৈরি ডিজাইন। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে ৭০০০ ওয়াট ক্ষমতা সপন্ন চারটি KOLORJET 7000 WHITE লাইট। গ্লাস টাওয়ারের চার কোনায় ব্যবহার চারটি KOLORJET 7000 WHITE লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।
অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে গ্লাস টাওয়ারের ভেতরে আলোর কোন উৎস ব্যবহার করা হয়নি। চারটি KOLORJET 7000 WHITE লাইট এমন ভাবে গ্লাস টাওয়ারের বেইজে স্থাপন করা হয়েছে যা গ্লাস টাওয়ারের গ্লাসে এমন ভাবে প্রতিফলিত হবে যেন গ্লাস টাওয়ার পুরোটা খুব সুন্দর ভাবে দর্শিত হয় এবং যার আলো অনেক উঁচু পর্যন্ত একটি একক আলোক উৎস হিসেবে দেখা যায়। যেন অনেক দূর দূরান্ত থেকে আকাশে এই আলো দেখা সম্ভব হয়। প্রতিটি লাইট এক ডিগ্রী কোণে লাইট টাওয়ারের দিকে চারটি চার কোনায় স্থাপিত করার ফলে এরুপে গ্লাস্ট টাওয়ারের পুরোটা আলোকিত করার পাশাপাশি সুউচ্চ আলোক উৎস হিসেবে উপস্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছে।
এই স্বাধীনতা স্তম্ভ এর পুরো প্রকল্প মূলত শুরু করা হয়েছিল মুক্তযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। যার মাঠপর্যায়ের কাজের দায়িত্ব ছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাঁধে।
অনেককিছুই অজানা ছিল গ্লাস টাওয়ার নিয়ে। তর্কে তর্কে জানলাম। চেষ্টা করলাম আপনাদের ও জানাতে, যারা পুরোপুরি জানেন না গ্লাস টাওয়ারের বিস্তারিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর তথ্য নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে মন্তব্যে জানাতে পারেন।
তথ্যঃ http://www.griven.com
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৫