বরাবরের মতই আরেকটি বিজয় দিবস...
মা এর বুকে একের পর এক লাখো লাখো ছুরি চালিয়ে রক্তাক্ত করার মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘটলো এই মায়েরই বিজয় উদযাপন দিয়েই...
পতাকা আসলে কি ?
এই বাংলা মায়েরই প্রতীক। যে প্রতীক দিয়ে আমরা এই বাংলা মা কেই গোটা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরি। যে প্রতীক দিয়েই এই বাংলা মায়ের বস্তুত উপস্থাপন হয়ে থাকে। আর এই প্রতীকের বুকে একের পর এক ছুরি চালিয়ে আজ উদযাপিত হল বিজয় দিবস... তাও এই মায়ের বিজয়ের দিন।
ছোট্ট একটা ঘটনা বলি,
বের হয়েছি হাঁটতে... এক চা এর দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হাল্কা উচ্চস্বরে কথা চালাচালি হচ্ছে যেখানে বারবার পতাকা শব্দ টা কানে আসছিল। থেমে কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা শুনলাম। কিছুক্ষণ শুনে যা বুঝলাম,
একজন আওয়ামিলীগ সাপোর্টার, অপরজন বি এন পি। আওয়ামিলীগ সাপোর্টার বলছেন ইদানিং মানুষের দেশপ্রেম কমে গিয়েছে, আগে অলিতে গলিতে,দোকানপাটে সবাই এই দিনে পতাকা টাঙ্গিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতো কিন্তু এখন করে না।
বি এন পি সাপোর্টার বলছেন, বললেই হল? পতাকার ব্যবহারের নিয়ম আছে। যে কেও চাইলেই পতাকা ব্যবহার করতে পারেনা। শুধুমাত্র মন্ত্রি পর্যায়ের লোকেরা পতাকা ব্যবহার করার অনুমতি আছে। খুব বেশি হইলে সচিব পর্যায়ের লোকেরা পারবে ব্যবহার করতে।
আমি এতটুকু শুনেই চুপচাপ হেঁটে চলে এসেছি। তাদের দুজনের বয়স কাছাকাছি ছিল। দুজনেই ষাটোর্ধ হবেন। আচ্ছা আজকে কততম বিজয় দিবস উদযাপিত হল?
তাদের বয়স তখন কত ছিল?
মনে মনে এই দুটো প্রশ্ন ভাবতে ভাবতে আর ভাবার প্রয়োজন বোধ না করে চলে এসেছি। নিয়ম না জানাটা অস্বাভাবিক কিছুনা... কিন্তু...
আমরা বাংলাদেশি। আমাদের এই পরিচয় কোত্থেকে এসেছে?
বাংলাদেশ যেদিন জন্মেছে সেইদিন আমরা নিজেদের দেশ পেয়েছি। পেয়েছি এই বাংলাদেশ। তারপরেই না আমরা বাংলাদেশি হয়েছি। তার আগে ছিলাম পাকিস্তানি, তার আগে? ভারতীয় উপমহাদেশ। তার আগে?
কিন্তু আমাদের এই বাংলাদেশি সত্তার জন্ম হয়েছে কিন্তু সেই একাত্তর এ এসেই, যার প্রত্যক্ষ সূচনা হয়েছিল বায়ান্ন তে। আমি এই প্রজন্মের একজন বাংলাদেশি জোর গলায় বলতে পারিনা যে আমি বিস্তারিত পুরো ইতিহাস জানি। যদি জানতেই হয়, আমরা এখন আশ্রয় নেই ইন্টারেন্টের। কিন্তু ইন্টারনেটে যথাযথ তথ্য তো এই দেশেরই কারো না কারো প্রদান করতে হবে। ছোটবেলা থেকে পাঁচবছর এক ইতিহাস, পরের পাঁচবছর আরেক ইতিহাস পড়ে পড়ে বড় হয়েছি। বাবা এক ইতিহাস বলেছেন তো চাচা বলেছেন আরেকটি। এক শিক্ষক এক ইতিহাস শিখিয়ে গিয়েছেন তো আরেক শিক্ষক এসে শিখিয়েছেন আরেকটি। এভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে করে কোন ইতিহাস যে মাথায় টিকে গিয়েছে তা জানিনা। নিজের বোধ হওয়ার পর থেকে হয়তো নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে তথ্য খুঁজে নিয়ে শিখতে শুরু করেছি। কিন্তু একটি তথ্য কেন নিজের বোধশক্তি দিয়ে বিচার করতে হবে যে সেটা কতটুকু সত্য?
তথ্য মানে তথ্য, যা একবার লিখিত হয়েছে। তা তেমনই রুপে থাকবে সংরক্ষিত। কিন্তু তার উপর যদি বারংবার কলম ঘষা হয়, সে কলম যদি বারংবার হাতবদল হয় তবে সঠিক ইতিহাস জানার মাধ্যম কি?
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তান তো পুরোটা ইতিহাস বিকৃত করে দিয়ে গিয়েছেই। বর্তমানে দেশের কোন মাথা কে বিশ্বাস করবো সেটা নিয়েও আমাকে নিজে থেকেই ভাবতে হচ্ছে, সেটা নিয়েও আমাকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। আচ্ছা, সবগুলো মাথার কি দেশ একটাই ?
নাকি এক এক মাথা এক এক দেশ থেকে এসে এক এক রকম তথ্য নিয়ে এই দেশ কে ছিড়ে খাচ্ছে?
দেশের সাধারণ জনগণ তখন কি সত্যি স্বাধীন হতে পেরেছিল? অথবা এখন কি সত্যি স্বাধীন আছে?
আমি আমার নিজস্ব বোধবিচার দিয়ে একটি মতামত হয়তো দিতে পারি কিন্তু নিশ্চয় ভুল তথ্য শুধরে নেওয়ার অথবা নিজের ভুল স্বীকার করার মানসিকতা থাকা কি দরকার না আমার?
সাধারণ জনগণ হয়তো সাধারণ ভাবেই ভাববে, তাদের কে মাথারা, জ্ঞানীগুণীজনেরা যা শিখাবে তাই তারা প্রাধান্য দিবে। কিন্তু জ্ঞানী গুণীদের মাথা অনেকগুলো তাদের চিন্তাধারাও অনেকরকম হওয়াটা স্বাভাবিক। কোন সাধারণ জনগণ কাকে ফলো করবে সেটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। কিন্তু সবগুলো মাথা এই একটা জায়গায় কি এক হওয়ার কথা না?
সবগুলো মাথা কি এই একটা জায়গায় এসে সঠিক তথ্য ও নির্ভুল শিক্ষা দেবার প্রয়াস পায় না?
দেশ তো একটাই, তার একই জিনিসের বিভিন্ন তথ্য কেন হবে? দেশ তো একটাই, সেখানে কেও ৮৭ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধা হলে কেন প্রকৃত কোন মুক্তিযোদ্ধা যোগ্য সম্মান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে? দেশ একটাই, বাংলাদেশ। এখানে এসে তো সব এক হয়ে যাওয়ারই কথা, তাই কি নয়?
আবেগ হয়তো একটু বেশিই ঢেলে ফেলেছি, এবার থেমে যাওয়ার পালা।
তবে পোস্টের নামকরণের সাথে এতক্ষণের লেখাগুলোর সম্পর্ক হয়তো অনেকের মনেই ধোয়াটে করে তুলেছে। আসলে, পতাকা নিয়ে প্রথম যে অংশটুকু লিখেছি, সেটার জন্যই এই নামকরণ। আমি জানি, আজকে এভাবে অনেক পতাকার, আমাদের এই বাংলা মায়ের প্রতীকের অবমাননা করা হয়েছে। যার কারণেই আমার এই পোস্টের এমনটা নামকরণ করা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৫