যশোরের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে থাকা মিলন সিংহের (৫৬) অবস্থা বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন সেখানকার ডাক্তার।
তার সঙ্গে থাকা ছেলে সর্দি, জ্বরের রোগী চন্দন সিংহ (২৫) পুরোপুরি সুস্থ এবং মিলনের স্ত্রী শিখা সিংহ (৪২) তো আগে থেকেই সুস্থ ছিলেন।
তবে, জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী কেশবপুর উপজেলার পাঁচপোতা গ্রামের মিলন সিংহকে এই চিকিৎসাসেবা নিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। চিকিৎসার জন্যে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে যশোর-খুলনা ভ্রমণ করতে হয় তাকে পরিবারসহ। সেসময় স্বজনদের কান্নাকাটি আর অসহায়ত্ব ছিল শেষ সম্বল!
অপরদিকে, এলাকার লোকজন তো আছেই, কোনোকিছু না পারলেও অসহায় একজন মানুষকে হেনস্থা করতে পিছপা হননি তারা।
পরিশেষে পুলিশই ভরসা! ডাক্তারদের মানবতা জাগাতে পুলিশ আর সাংবাদিকদের রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করা লেগেছে!
কেশবপুর থানার ওসি জসীম উদ্দীন, প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফুজ্জামান খানসহ অন্য সাংবাদিকদের 'নাছোড়বান্দা' অবস্থানের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ তাকে (মিলন) দ্বিতীয় দফায় ভর্তি করতে বাধ্য হন।
মিলন সিংহের ছেলে তিলক সিংহ বলেন, 'জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী আমার বাবাকে গত রোববার (২৯ মার্চ) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ভর্তির ১৫ মিনিট পরেই তাকে ছাড়পত্র দিয়ে খুলনায় নিয়ে যেতে বলেন ডাক্তাররা। এরপর বাবাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানকার ডাক্তাররা বাবাকে না দেখে ডায়াবেটিক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে যেতে পরামর্শ দেন। সেখানে গিয়ে আমরা একজন দারোয়ান ছাড়া কাউকে পাইনি। সেখান থেকে আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়, খুলনা আদ-দ্বীন হাসপাতালে যাওয়ার। আমরা সেখানে গিয়েও ব্যর্থ হই। তারা বাবাকে ভর্তি করেননি। বিকেল নাগাদ আমরা ফের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। আমাদের কান্নাকাটি দেখে একজন ডাক্তার ১০-১৫ হাত দূর থেকে সবকিছু শুনে একটি প্রেসক্রিপশন করে বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলেন। আমরা বাড়িতে ফিরে আসি।'
এদিকে, কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফিরিয়ে দেওয়া, এরপর খুলনা মেডিকেলসহ কয়েক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার কারণে প্রতিবেশীরা মিলনের পরিবারকে সন্দেহ করতে থাকেন। তারা এই পরিবারকে বাইরে যেতে নিষেধসহ সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক কেশবপুর ইউএনও-কে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি (ইউএনও) সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন, তার (মিলনের) বাড়িতে ডাক্তার পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পরে খবর নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে পারেন, ওই বাড়িতে কোনো ডাক্তার যাননি। এরপর তারা কেশবপুর থানার ওসি জসীম উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওসি এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় ৩০ মার্চ ফের কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় মিলন সিংহকে। একইসঙ্গে তার ছেলে সর্দি-জ্বরের রোগী চন্দন এবং তাদের সেবা করার জন্যে স্ত্রী শিখাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়।
কেশবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফুজ্জামান খান বলেন, 'বিনা চিকিৎসায় একজন মানুষ অসহায় অবস্থায় রয়েছেন, তাকে স্থানীয় লোকজনও সন্দেহের চোখে দেখছে- বিষয়টি অমানবিক। সেকারণে ইউএনও, ওসি সকলকে তা অবহিত করি। শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে ওসি জসীম উদ্দীনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তি করানো হয়।'
ওসি জসীম উদ্দীন বলেন, 'সাংবাদিকরাই বেশ তৎপর ছিলেন। আমি সাথে গিয়েছিলাম, রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাদের শারীরিক অবস্থা এখন বেশ ভালো।'
জানতে চাইলে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, মিলনের শারীরিক অবস্থা এখন বেশ ভালো। তিনি প্রায় ৭০ ভাগ কিউর। তার নাক ও গলা থেকে লালা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্ট নেগেটিভ হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তার ছেলে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
যোগাযোগ করা হলে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, মিলন ও তার পরিবারের সদস্যদের ডাক্তাররা খুব ভালোভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাদের অবস্থা এখন বেশ ভালো। নমুনাও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
প্রথমদিকে চিকিৎসাসেবা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন ডাক্তাররা- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এগুলো ঠিক না। কেশবপুর থানার ওসি রোগীদের ভর্তি করিয়েছেন। আপনার কাছে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা ফেব্রিকেটেড। ০১।০৪।২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯