শুধু যশোর নয়, এবার খুলনা বিভাগের আশপাশের কোনও জেলাতেই শারদীয় উৎসবের এতো বড় আয়োজন হচ্ছে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন মশিয়াহাটি পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার মশিয়াহাটিতে এবারের শারদোৎসবে গড়া হয়েছে ২০১টি প্রতিমা। গীতা, রামায়ণ আর মহাভারতের বেশকিছু চরিত্র ভাস্কর্যশিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে। তাদের মতে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেক কিছুই শেখার তাকবে এসব চরিত্র থেকে।
আগামী ১০ অক্টোবর মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা। ইতোমধ্যে যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় তৈরি করা হয়েছে দুর্গাপ্রতিমা। এখন রঙের আঁচড় দিচ্ছেন শিল্পীরা। তারা আশা করছেন, মহালয়ার আগেই সাজিয়ে গুছিয়ে সুসম্পন্ন করা সম্ভব হবে প্রতিমাগুলো।
মশিয়াহাটি আঞ্চলিক দুর্গাপূজা মন্দিরের বিশাল প্রাঙ্গণজুড়ে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিমাগুলো। পাশে হাইস্কুলের মাঠে তৈরি করা হচ্ছে বিশাল প্যান্ডেল। যেখানে স্বাগত জানানো হবে অভ্যাগতদের।
পূজা উদযাপন কমিটির সেক্রেটারি বুলবুল বৈরাগী বলেন, মা দুর্গা এবার ঘোটকে আসছেন। গতবারে জলের কারণে ছোট আকারে আয়োজন ছিল। এবার শুকনোর কারণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সুবিশাল আয়োজনের। যশোরের দুটি উপজেলা অভয়নগর ও মণিরামপুর ছাড়াও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মিলনস্থল এই মশিয়াহাটি। ৯৬ গ্রামের মানুষের মিলনস্থলে শুধু প্রতিমার সংখ্যাই নয়, সবচেয়ে বড় মেলাও করা হবে শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে। সেলক্ষ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা আলোকসজ্জা করা হবে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিষদে প্রতিদিন আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি দেশের গুণী শিল্পীরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
মশিয়াহাটির এই বিশাল আয়োজনের প্রাণ ভাস্কর দীনেশ চন্দ্র সানা বলেন, গত এক মাসধরে আমরা ৮জন শিল্পী ২০১টি প্রতিমা নির্মাণে কাজ করেছি। এখন চলছে রঙের ছোঁয়া। এবারে গীতা থেকে বকরাক্ষসবধ, তৃণবর্তা উদ্ধার, শ্রীকৃষ্ণের লীলা, গীরিগোবর্ধন পর্বত উত্তোলন, রামায়ণ থেকে রাবণবধ, সীতাহরণ,মাধব পাটনি, অযোদ্ধার সিংহাসনে রাম এবং মহাভারতের ভীষ্মের শরসজ্জা, জরাসিন্দুবধ, খিঁচকবধ, ভীম-দুর্যোধনের যুদ্ধ ইত্যাদি দৃশ্য। এছাড়া কর্মফলদাতা শনিদেব, মা কালীর প্রতিমা।
এসব আয়োজনের মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লোকশিক্ষা বা ধর্মবিষয়ে কিছু হলেও জ্ঞান বাড়বে বলে তিনি জানান।
এবার যশোরের ৬৭০টি স্থানে আয়োজন করা হয়েছে শারদোৎসবের। ভাস্কর শিল্পীরা সবাই এখন ব্যস্ত প্রতিমাগুলোয় রঙের প্রলেপ এবং মণ্ডপগুলো সাজাতে।
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য দীপংকর দাস রতন বলেন, আজ (১ অক্টোবর) দুপুরে জেলা কমিটিসহ যশোরের ৮ উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি ম-পে হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি, পুলিশি নিরাপত্তাসহ সিসি ক্যামেরা চাওয়া হয়। বৈঠকে যশোরের পুলিশ সুপার মহোদয় আশ্বস্ত করেছেন নিরাপদে শারদোৎসব সুসম্পন্নে প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে।
যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, প্রতিমা তৈরি থেকে বিসর্জন পর্যন্ত পুলিশ মণ্ডপগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেবে। ইতোমধ্যে উপজেলাভিত্তিক প্রত্যেক থানার ওসির নেতৃত্বে একটি নিরাপত্তা টিম গঠন করা হয়েছে। পোশাক, সাদা পোশাকে পুলিশ, গোয়েন্দাসহ আনসার ও অন্যান্য বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করবে। উৎসব যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেদিকে পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর যশোরের ৬৭০টি স্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে যশোর সদরে ১৪৫, ঝিকরগাছায় ৫১, শার্শায় ৪১, চৌগাছায় ৫১, বাঘারপাড়ায় ৮৯, অভয়নগরে ১২৫, কেশবপুরে ৯২ এবং মণিরামপুরে ৯৫টি স্থানে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
০১.১০.১৮
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:০৩