এক ফেসবুক সেলেব্রিটির স্ট্যাটাস, “ওহ সাকিব, তুমি ভুল দেশে জন্মেছ।এই বালের দেশ(?) তোমাকে কিছুই দিতে পারবে না। তুমি বালের দেশ ফেলে অন্য কোথাও চলে যাও।”
সাকিব কে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং দেড় বছরের জন্য সব ধরনের খেপ লিগ যথা আইপিএল, বিগব্যাশ, সিপিএল এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শাস্তি দেয়া ঠিক হয়েছে কিনা কিংবা শাস্তি বেশি হয়ে গেছে কিনা তা বিতর্ক সাপেক্ষ ব্যাপার।
কিন্তু কি কারণে সাকিব কে এই শাস্তি দেয়া হল? এটা মোটামোটি আমরা সবাই জানি।
কিন্তু ফেসবুক সেলেব্রিটিদের ক্ষোভ দেখে মনে হল যে বোর্ড মহা অন্যায় করে ফেলেছে। কিংবা পাপন ইচ্ছে করেই সাকিব কে শাস্তি দিয়েছে। কেও কেও আবার এর মাঝে ষড়যন্ত্রের গন্ধও খুঁজে পাচ্ছে।
৯০ র দশকে বাংলা চলচিত্রে আমরা একটি কমন ডায়লগ শুনতাম। “আইন সবার জন্য সমান।”
কিন্তু ব্লগ ও ফেসবুক সেলেব্রিটিদের কাছে আইন সবার জন্য সমান নয়। তারা সাকিবের কোন অন্যায় খুঁজে পায় না। কোন সন্দেহ নেই সাকিব বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্টার, বেস্ট পারফর্মার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক জয়ের পেছনে তার অবদান সব থেকে বেশি। কিন্তু তার বেলায় কি রুল খাটবে না?
ফেসবুক সেলেব্রিটিরা স্বীকার করুক আর নাই করুক, সাকিবের আচরণ যে উদ্ধতপূর্ণ, এটি দেশের আমজনতা ঠিকই জানে।
এ ফেসবুক সেলেব্রিটিদের বলছি, ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিসর সাথে বাংলাদেশ ৫৮ রানে আলআউট হয়েছিল। এত কম রানে আলআউট হবার কারণ জিজ্ঞেস করলে সাকিবের উত্তর ছিল, আসলে ডিনার টা খুব ভাল ছিল, তাই হয়ত তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।
What a speech. Bravo sakib, bravo.
নানা সময় নানা উদ্ধতপূর্ণ বিহেভ করলেও স্টারডামের কারণে বার বার মাফ পেয়ে গেছেন সাকিব।
বাংলাদেশের মানুষ একটু বেশেই আবেগি। অল্পতেই হাসে, অল্পতেই কাঁদে। এ কারনেই এশিয়া ব্লকের ক্রিকেটাররা দ্রুত স্টার হয়ে যায়। মডেলিং করে কোটি কোটি টাকা কামায়। কারণ ইমোশান বিজনেস ইস দ্যা বেস্ট বিজনেস। তবে খারাপ করলে ভয়ানক সমালোচনা করতেও ছাড়ে না। তবে সেই জন্য দেশের সাবেক ক্রিকেটার দের নিয়ে টিটকারি দেয়া একমাত্র সাকিবের পক্ষেই সম্ভব।তার “আগের সাবেক কোন ক্রিকেটার কি পারফর্ম করেছে তা জানা আছে” এ বক্তব্য কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি।
ফিরে আসি সাকিবের শাস্তির ব্যাপারে।
বাইরের দেশে খেলতে গেলে বোর্ডের অনুমতি নিতে হয়, এটি সবার জানা। অনেকেই বলবে যে সাকিব ত আকরাম খানের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়েছে।
কিন্তু মৌখিক অনুমতি নিয়ে যে বাইরে খেলা যায় না, তা সাকিবের থেকে ভাল কেও জানে না। আসলে সাকিব এ অনুমতির ব্যাপার কে গুরুত্তই দেয়নি। স্টার দের এত ভাবলে চলে???
তার পরও এটি কোন ব্যাপার হত না। কিন্তু সাকিবের মন মেজাজ বোঝা যে দায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ট্যুর র জন্য হেড কোচ যখন সাকিব কে ৩১ জুলাই র মাঝে দেশে প্র্যাকটিসের জন্য দেশে ফিরে আসেতে বলল, তখনি সাকিব যথারীতি উত্তর দেয়,
“দেখেন, আপনিও টাকার জন্য এসেছেন, আমিও টাকার জন্য খেলতে যাচ্ছি, দরকার হলে টেস্ট, ওয়ান দে ছেডে দিব”।
কিন্তু সাকিব ভুলে গিয়েছিল যে এক মাঘে শীত যায় না। এও ভুলে গিয়েছিল যে তার বিরুদ্ধে অনেক গুল অভিযোগ আগেই জমা হয়েছিল। যথা ঃ
• খেলা চলাকালীন ড্রেসিং রুম ছেঁড়ে যাওয়া। গিয়ে দর্শকের গায়ে হাত দেয়া। সহজ কথায় পেটানো। স্ত্রী কে বাজে কমেন্ট করে থাকলে লিখিত অভিযোগ করা যায়। গায়ে হাত দেয়া যায় না। সাকিব প্লেয়ার, মাস্তান না।
• সিরিজ চলাকালীন রুম বদলানো। অনেকেই বলে থাকবে যে রুম বদলালে সমস্যা কি?
আছে। সমস্যা আছে। আকসু(আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী অঙ্গ সংঘটন) পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে সিরিজ চলাকালীন কেও তার রুম বদলাতে পারবে না।
এশিয়া কাপ চলাকালীন সে কি করেছিল তা কি আমরা ভুলে গিয়েছি।না। দুই তিনবার ক্যামেরা দেখানোর জন্য তার সেই নোংরা কাণ্ড কোন প্লেয়ার করতে পারে তা আমার জানা ছিলোনা।
অনেকেই ভয় পেয়ে গেছেন। সাকিব কি তাহলে রাগ করে অবসর নিয়ে ফেলবে। না, অবসর নিয়ে ফেলবে না। সাকিব খুবই বুদ্ধিমান। সে খুব ভাল করেই জানে যে দেশের আইডেন্টিটি ছাড়া কোন প্লেয়ার এক পয়সাও দাম নেই। ক্রিকেট আইপিএল, বিগব্যাশ, সিপিএল র স্কোর মনে রাখেনা। ওয়ানডে, টেস্টের পারফর্মেন্স ই মনে রাখে।
এ শাস্তির ফলে প্লেয়ারদের কাছে একটি মেসেজ যাবে।
কেও শাস্তির উপরে না। আইন সবার জন্য সমান।
শুভরাত্রি।