somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তরুন ইউসুফ
কাব্যগ্রন্থ : ট্রাফিক সিগন্যালে প্রজাপতি, না গৃহী না সন্ন্যাসী; nরম্যগল্পগ্রন্থ : কান্না হাসি রম্য রাশি। nছোটদের বই : রহস্যে ঘেরা রেইনফরেস্ট nইতিহাস গ্রন্থ: শেরে বাংলা ও যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন কিছু দুষ্প্রাপ্য দলিল

বাঁচতে ইচ্ছে করে

০৩ রা মে, ২০১৬ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকাল পত্রিকা খুলতে খুব ভয় হয়। পড়তে গেলে আরও ভয় করে। বুকের বা পাশে হাত দেই। মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখি বেচে আছি কি না। কিংবা হিসেব করার চেষ্টা করি কতক্ষণ বেঁচে থাকব। ভয় হয়, খুব ভয় হয়। আবার প্রবল ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে।
পত্রিকায় যেসব মুখগুলো দেখি, যাদেরকে খুন করা হয়েছে গুলি করে, কুপিয়ে, বালিশ চাপা দিয়ে, পিটিয়ে কিংবা সিলিং এ ঝুলিয়ে তাদের মুখের উপর নিজের মুখটা বসাই। দেখি গুলি খেয়ে মরে গেলে আমার মুখটা কেমন দেখা যাবে। কেউ যদি আমাকে কুপিয়ে বীভৎস ভাবে খুন করে তবে আমার মুখের আদলটা কেমন হবে। অথবা বালিশ চাপা অবস্থায় কিংবা সিলিং এ ঝুলান অবস্থায় আমার মুখ। আমার প্রিয় জিবন্ত মুখটা কেমন হবে সেটা ভাবতে গেলে খুব ভয় হয়। কষ্ট হয়।
ইদানিং কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। সবার মুখের দিকে তাকাই। খুব নিখুঁত ভাবে পরীক্ষা করি। বুঝতে চেষ্টা করি কেউ আমার উপর রেগে আছে কি না। আমার কোন কথায় কারো কপালে ভাঁজ দেখা গেলে আমার ভয় করে। প্রবল ইচ্ছে জাগে তাঁর পা চেপে ধরে বলি ভুল করে ফেলেছি মাপ করে দেন। কিংবা মেরে না ফেলে শাস্তি দিন। যেকোন শাস্তি আমি মাথা পেতে নিব। কিন্তু আমাকে মারবেন না। আমাকে বাঁচতে দিন। আমার বাঁচতে খুব ভাল লাগে।
আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে আমার অফিস হাঁটাপথ। তবু মাঝে মাঝে যখন খারাপ লাগে ক্লান্ত লাগে রিকশা নেই। কিংবা প্রচণ্ড রোদ্দুর তখন। রিকশা ওলাদের জিজ্ঞেস করি মামা যাবেন। কেউ রাজি হয়। কেউ না করে। বেশি ভাড়া চায়। কেউ শীতল দৃষ্টিতে তাকায়। কেউ কঠিন দৃষ্টিতে তাকায়। কারো কারো দৃষ্টিতে ক্ষোভ ঘৃণা। মনে হয় তাদের রিকশাওলা হওয়ার পেছনে আমার কোন হাত আছে। আমি অনুভব না করলেও বুঝতে পারি রোদে তাদের রিশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। খারাপ লাগে। আমি এও বুঝতে পারি খুনে দৃষ্টি। আমি ভয় পাই দৃষ্টি নত করি । চুপচাপ চলি।
আমার একমাত্র ছোট বোন কলেজে পড়ে। খুব আদরের ছোট বোন। মাঝে মাঝে ফোন করি খোঁজ নেই। ওর কণ্ঠ স্বাভাবিক থাকলে ভাল লাগে স্বস্তি পাই। কিন্তু কণ্ঠ একটু অন্যরকম হলেই আমার ভয় হয়। খুব ভয় হয়। বারেবারে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে, অসুখ না অন্য কিছু, না….. । মাঝে মাঝে ছোটবোনকে বলি, খবরদার কোথাও যাবি না, কারো সাথে মিশবি না কিংবা কাউকে বিশ্বাস করবি না। কাউকে বিশ্বাস করবি না এই কথাটা বলতে আমার খুব খারাপ লাগে। ইচ্ছে করে না বলতে। তবু বলি প্রায়শই বলি। যে মেয়েটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি কিংবা আমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে তাকেও বলি। কোথাও যেও না। ঘরে থাক। সিটিয়ে থাক। কেউ কিছু বললে প্রতিবাদ করবে না। চুপচাপ চলবে, চুপচাপ থাকবে। আমার বোন কিংবা তাঁর সহপাঠী, প্রেয়সি কিংবা তাঁর সহপাঠী সবাইকে বলি সমঝে চল, সমঝে চল। কাউকে বিশ্বাস কর না। বেঁচে থাক।
আমার পরিচিত গণ্ডিটা খুব বড় না হলেও খুব ছোট নয়। কেউ ভাই কেউ বন্ধু, ছোট ভাই, ছোট বোন, সহকর্মী তারা সবাই খুব প্রিয় না হলেও তাদের হাসিখুসি জীবন্ত মুখটা দেখতে আমার ভাল লাগে। আরাম বোধ হয়। মনে হয় বেঁচে আছি। আমি চাই না পত্রিকার বীভৎস খুন হয়ে যাওয়া সেই মুখগুলোর কোন একটা তাদের হোক। সবাই বেঁচে থাকুক, বেঁচে থাকুক, বেঁচে থাকুক। না হয় কম্প্রোমাইজ করুন, চুপচাপ থাকুন, বেঁচে থাকুন। অনেক সময় বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় সফলতা।
আজকাল কে যে কারে মারছে, কোপাচ্ছে, গুলি করছে কিছুই বুঝতে পারি না। কেন যে এসব করছে তাও বুঝি না। তাই ভয় হয় কখন কার শর্ত ভঙ্গ করলাম, কার মনমত চলা হল না ব্যাস আমাকে কুপিয়ে দিল, মেরে দিল। তাই আমি বলি কি আপনারা যে শর্তই দিন না কেন কোন সমস্যা নেই, আমি প্রত্যেকের শর্ত মেনেই বেঁচে থাকতে চাই। আমার প্রিয় মানুষগুলোর বেঁচে থাকা দেখতে চাই। কারন বেঁচে থাকতে আমার ভাল লাগে। বেঁচে থাকা দেখতে আমার ভাল লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ সকাল ১০:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×