আপনার যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তাহলে আপনি কী করবেন?
যাই করেন না কেনো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অন্তত করবেন না, ঘুরে দাঁড়ালে সামনে তো দেয়ালই পাবেন।
রাকিব কিশোর ভাইয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে চমকপ্রদ ব্যাপারটা জানার পর সবাইকে জানানোর জন্য ব্যকুল হয়ে গেলাম।
প্রথমেই বাসায় খালাতো ভাইকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম- ‘‘আচ্ছা ধর তোর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো, তুই কী করবি?’’ আমি তো রেডি, যখনই বলবে ‘ঘুরে দাড়াবো’’ তখনই আমার অর্জিত জ্ঞান ঝেড়ে দিবো। খালাতো ভাই উত্তর দিলো ‘‘ কী আর করবো, যেহেতু পিঠ ঠেকেই গেছে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিবো, সারাদিন পড়ার জ্বালায় ঘুমাতে পারি না।’’ আমি আমার জ্ঞান জাহির করার চেষ্টায় ব্যর্থ।
ঘরে ব্যর্থ হয়ে বাসার বাহিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। বের হতেই প্রথমে এক বড় আপুর সাথে দেখা হলো। তাকে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতেই বললো- ‘‘ আগে বল দেয়াল এর কালারটা কী? দেয়ালের কালারের সাথে আমার ড্রেস এর ম্যাচিং হলে কয়েকটা সেলফি তুলবো, ভালোই হবে- কী বলিস? আচ্ছা ভালো কথা, তোর কি ভালো ফ্রন্ট ক্যামেরার মোবাইল আছে? আমারটা তেমন ভালো না।’’
না আপু, পরে কথা হবে- এই কথা বলে কোনোরকমে বেঁচে আসলাম। মনে মনে প্রচন্ডভাবে হতাশ হয়ে গেলাম। এ জাতি দিয়ে কিছু হবে না- এই মর্মে নিশ্চিত হয়ে গেলাম।
কিছুদূর যেতেই আমাদের কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান স্যারের সাথে দেখা। যাক, অবশেষে একজন যোগ্য লোককে পাওয়া গেলো। স্যারের কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে প্রশ্নটা করতেই দেখি স্যার অনেক সিরিয়াস হয়ে গেলেন। আমি ভাবলাম, অবশেষে বড়শিতে মাছ আটকা পড়েছে। চেহারায় বিজ্ঞ বিজ্ঞ একটা লুক নিয়ে আনার চেষ্টা করলাম। স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘‘ আচ্ছা, দেয়াল কি মসৃণ থাকবে নাকি অমসৃণ? ঘর্ষণ এর একটা ব্যাপার আছো তো, অমসৃণ হলে সুবিধা হবে। পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। আর একটা কথা, আমার পায়ের জুতার আর মেঝের মধ্যকার ঘর্ষণ গুণাংকই বা কত সেটাও জানা লাগবে। তাহলে বুঝতে পারবো, আমাকে কী পরিমাণ বল প্রয়োগ করা লাগবে, যাতে সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারি।. আরো কী যেনো বলতেছিলো....
কিন্তু শ্রোতা কে? আমি তো নিজের মুখের ভৌগলিক অবস্থান অক্ষুণ্ণ রেখে পুরোনো ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে কাঁথা,তুলো বের করা বালিশ হাতড়ে চলেছি ! কোনোরকমে সালাম দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেলাম।
তারপর আমাদের এলাকার বড় ভাই এর সাথে দেখা হলো। তাকে জিজ্ঞেস করতেই সে হুংকার দিয়ে উঠে বললো- ‘‘ আগে বল, কে আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকাইবো, কার এত বড় সাহস!! ওরে পাইলে ওর হাড্ডি ভাইঙ্গা আমি সাতচারা খেলুম।’’ না ভাই, এমনিতেই জিজ্ঞেস করছি- বলে কোনোরকমে পালিয়ে আসি।
সামনে যেতেই অপরিচিত একজন মানুষের সাথে দেখা হলো। তাকে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করার পর সে যা জানালো তার সারসংক্ষেপ হলো- সে প্রথমে দেয়ালের সাহায্যে তার হাইট মেপে নিবে, তারপর শার্টের পিছনের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে সামনে চলে যাবে।
অবশেষে ব্যর্থ মনোরথে বাসার দিকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফিরার পথে একজনের সাথে দেখা হওয়ার পর তাকে একটু বুদ্ধি করে জিজ্ঞেস করলাম- ভাই, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল আপনি কি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন? সে উত্তরে বললো- আরে না, ঘুরে দাঁড়ালে তো দেয়ালই পাবো। আপনি কি বেক্কল নাকি? শেষপর্যন্ত আমি নিজেই বোল্ড আউট হয়ে বাসায় চলে আসলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:০৫