নিমগ্ন অতীতের সুরে সহজিয়া বিষন্নতার ডাক ছেলেটিকে অবিরাম ডেকে চলেছে। শঙ্খশুভ্র মেঘের ভীড়ে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া অথবা দৃশ্যমান দিগন্তের বাঁকে আবার ফিরে আসা অব্যক্ত কথামালার দূর্বিষহ যন্ত্রণা ছেলেটির ফুসফুসে অক্সিজেনের প্রবাহ কমিয়ে দেয়। কয়েক সেকেন্ড পরে তার ঘোলাটে চোখের দৃষ্টি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলে ঐ সময়ের মধ্যেই - কাছে কোন গাছের পাতা ঝরে পড়ে... রাস্তায় কিছু নুড়ি গড়িয়ে যায়... দল বেঁধে একঝাঁক পাখি হারিয়ে যায় কোথাও এবং একটি নিঃসঙ্গ চিলের গতিপথে আরেকটা অর্ধবৃত্ত সম্পূর্ণ হয়ে আসে প্রায়।
শীর্ণ পা, মাথাভর্তি ফ্যাকাশে কাল চুলের ছেলেটা এসবের কিছুই খেয়াল করে না। আরেকটু ভাল বোধ করলে ময়লা চটের থলেটা কাঁধে ঝুলিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে হাঁটতে শুরু করে। সামনের দীর্ঘ পথ তাকে মনে করিয়ে দেয় দূরের মজা পুকুরের কচুরিপানার ফুল, আষাঢ়ের উঠোন ছেয়ে যাওয়া কৃষ্ণচূড়ার বিছানো চাদর নয়ত বয়সী হেমন্তের সকালে ন্যাড়া জমিনের আল ধরে ধবলডাঙার বাজারে নতুন খেজুড় রসের হাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে নাকে লেগে থাকা ভেজা খড়ের গন্ধ। ফেলে আসা রোমাঞ্চকর সময়ের টানে চলার গতি দ্রুত হয় তার। একসময় কাঁধ থেকে থলেটা খসে পড়লে সে দৌঁড়ুতে শুরু করে... চোখ মেলে রাখতে কষ্ট হয়, ভিজে আসে উজানবাতাসের ধাক্কায়। মাথার উপরে উড়তে থাকা চিলটা এ ফাঁকে বর্ধিত ব্যাসের কয়েকটা বৃত্ত পুরো করে ফেলে। দম ফুরিয়ে আসছে টের পায় সে... তবু থামে না... দ্রুততর হতে থাকে গতি...
তার মতই নামগোত্রহীন, দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া টুকরো ইট, ভাঙা ডাল অথবা ওরকমই অন্য কিছুতে হোঁচট খেয়ে ছেলেটা পড়ে যায় একসময়। বরাবরের মত দিগন্তটা ধরাছোয়াঁর বাইরে থেকে গেল এবারও; যথারীতি ব্যর্থ এবং অসফল। তার উদ্ভ্রান্ত দৌঁড়, সিক্ত মুখের ঘাম, চোখের পানি কিছুই আলাদা করা যায় না আর... সেই স্থবির মুহূর্তে ছেলেটার ধূলিমলিন মুখে এক টুকরো অনুভূতিশূণ্য জড় হাসি খেলে যায়; ক্লান্ত চোখের মণি ছোট হয়ে আসে ক্রমশঃ...
সেই ভর দুপুর রোদে অলক্ষ্যে একটা উল্কাপতন হল। কেউ কেউ জানল, কেউ জানলোই না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০০৭ ভোর ৬:৫৬