গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ির মত আমাদের বাড়িতেও উঠানের এককোনায় বড় একটা মুরগীর ঘর ছিল। ঘরের একটি অংশে রাখা হতো মুরগী অন্য অংশে হাঁস। বেশ কয়েকটি মুরগী একসাথে ডিম পাড়তো। এই মুরগীগুলো প্রতিদিন আমাদের পরিবারের ডিমের চাহিদা পুরণ করতো। কিছু ভাল ডিম বাছাই করে আম্মা আলাদা করে রাখতেন বাচ্চা ফুটানোর জন্য। সাইনপেন দিয়ে ডিমে নম্বর লিখে রাখতেন যাতে বোঝা যায় কোন ডিমটা কবে পাড়া। ১০/১২ টা ডিম জমে গেলে একটা মুরগীকে বসিয়ে দেওয়া হতো ডিমে তা দেওয়ার জন্য। মুরগিটি ৩/৪ সপ্তাহ নিরালসভাবে ডিমে তা দিতো, এসময় মুরগীর শারিরীক ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যেতো।আসলে যেকোনো ছানা জন্ম দেওয়াই মায়ের জন্য অনেক কষ্টের। আমরা মাঝে মাঝে মুরগীকে সরিয়ে দেখতে চেষ্টা করতাম ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়েছে কিনা,মুরগী তখন রেগে ভয়ংকরভাবে তেড়ে আসতো।
মুরগির ডিমের পাশাপাশি আম্মা কিছু হাসের ডিমও আলাদা করতেন বাচ্চা ফুটানোর জন্য। তবে সেই ডিমগুলো হাঁস তা দিতো না, তা দিতো মুরগী। মুরগীটা জানতোই না যে সে কিসের ডিমে তা দিচ্ছে? যখন ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতো তখন দেখা যেতো বেরিয়েছে ফুটফুটে হাঁসের ছানা। বিষয়টি মুরগীর জন্য তেমন আনন্দদায়ক ঘটনা হওয়ার কথা নয় কিন্তু আমরা ছোটরা দারুণ আনন্দ পেতাম ফুটফুটে হাসের ছানা দেখে। হাঁস সম্প্রদায়ও হয়তো এতে আনন্দিত হতো তাদের বংশবিস্তার ঘটছে দেখে। প্রথম প্রথম হাঁসের ছানা মুরগীর ছানাদের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করলেও একসময় ঠিকই তাদের স্বজাতী চিনতে পারতো, হাঁসেদের সঙ্গে মিশতে শুরু করতো এবং মুরগী মাকে ভুলে যেতো। শুনেছি একইভাবে কোকিলও কাকেদের বাসায় ডিম পেড়ে রেখে যায় বোকা কাক বুঝতেও পারেনা যে এটা তার ডিম নয়। বাচ্চা ফোটার পর চতুর কোকিল ঠিকই তার বাচ্চা নিয়ে সরে পড়ে।
সাম্প্রতি ইন্ডিয়ান একজন সেলিব্রিটি মা হয়েছেন। জেনে ভালই লেগেছিল কিন্তু যখন জানলাম তিনি নিজ গর্ভে সন্তান জন্ম দেননি গর্ভ ভাড়া নিয়ে সারোগেসির মাধ্যমে মা হয়েছেন তখন হাঁস কিংবা চতুর কোকিলের সঙ্গে ঘটনার সাদৃশ্য পেলাম। প্রানীকুল নির্বোধ হওয়ায় তাদের বোঝার বা প্রতিবাদ করার সাধ্য নেই। যে দরিদ্র মা অর্থের বিনিময়ে এইসব সেলিব্রিটিদের সন্তানদের জন্ম দিচ্ছেন তিনি কোনদিনই এই সন্তানের অধিকার পাবেন না। শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে দশ মাস দশ দিন তীব্র কষ্টের যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানের জন্ম দেবেন, একসময় সুবিধাবাদী ধনীরা নিয়ে যাবে মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন। এই সন্তান বড় হবে, হয়তো একদিন সেও সেলিব্রিটি হবে কিন্তু গর্ভধারিনী মায়ের কথা সে জানতেও পারবে না কোনদিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫১