০৮.০৪.২০২০
বুধবার
আবহাওয়া গুমোট,সকাল ৯ টায়ও সূর্যিমামার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। গুমোট আবহাওয়ার মত আমাদের সবার মনেও এক ধরনের গুমোট আতংক বিরাজ করছে। সকালে কয়েক পশলা বৃষ্টিও হয়েছে যা কিছুটা গরম বাড়িয়ে দিয়েছে। আজও অন্যদিনের মত বাসার ব্যালকনিতে বসে আছি। আজ আমার মেয়েও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমার পাশে বসেছে। রাস্তায় মানুষের আনাগোনা খুবই কম, ধীরে হলেও মানুষ বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়।
সামনের রাস্তায় একজন বৃদ্ধ ও ৫/৬ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে ভিক্ষা করছে। এরা দুজন একসাথে এসেছে তবে বেশি ভিক্ষা পাওয়ার আশায় বৃদ্ধ লোকটি বাচ্চা মেয়েটাকে একটু দুরে দাড় করিয়েছে। মেয়েটা বৃদ্ধের চেয়ে একটু বেশিই ভিক্ষা পাচ্ছে। মানুষের মততা ছোট বাচ্চাদের প্রতি একটু বেশিই, এ কারণেই ঢাকার অনেক ভিক্ষুকরা অন্যের বাচ্চা ভাড়া নিয়েও ভিক্ষা করে যা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানমুলক অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে। যে বাচ্চাটা ভিক্ষা করছে সে আমার মেয়েরই বয়সী। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আমাদের বাচ্চাদের যেখানে খাবার খাওয়ানো রীতিমতো সংগ্রাম সেখানে ওই মেয়েটাকে তার বাবা মা এই করোনা ঝুঁকির মধ্যেও রাস্তায় পাঠিয়েছে ভিক্ষা করার জন্য। হয়তো ওর বাবা মা জানেও না করোনা কতটা ভয়াবহ অথবা জানে কিন্তু কিছুই করার নেই, বেচে থাকার তাগিদেই নিজের বাচ্চাকে রাস্তায় দাড় করিয়েছে। মেয়ের হাত দিয়ে কাগজে মুড়িয়ে কয়েকটা টাকা নীচে ফেলে দিলাম, টাকাটা পেয়ে মেয়েটার মুখের হাসি দেখার মতো ছিল।
সামনের কাঠাল গাছে গত কয়েকদিন ধরেই ডিমে তা দিচ্ছিল একটা কাক। আজ সকাল থেকে দেখছি সেই ডিম থেকে কয়েকটি বাচ্চা ফুটেছে। দুটি কাক বাচ্চাগুলোকে তাদের ঠোঁট দিয়ে পরম মমতায় খাবার খাওয়াচ্ছে। আমার মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো
-বাবা কোনটা মা কাক আর কোনটা বাবা কাক?
এরই মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি শুরু হল মা কাকাটি পরম মমতায় নীজের ডানা দিয়ে তার বাচ্চাদের বৃষ্টি থেকে আগলে রাখার চেষ্টা করছে । অন্য কাকটি কিছুক্ষণ পর পর খাবার এনে বাসায় রেখে আবার উড়ে যাচ্ছে একটু পর আবার ফিরে আসছে । তবে মাঝে মাঝে দুটি কাক একসাথেও ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে তাই কোনটা মা কোনটা বাবা সেটা মেয়েকে বোঝাতে কষ্ট হল না । এভাবেই মা আমাদেরকে তার স্নেহের ছায়ায় আগলে রাখেন আর বাবা সর্বোচ্চ শ্রম দেন আমাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য। আসলে প্রকৃতিতে কত রকম প্রাণী আছে তবে মা বাবার বৈশিষ্ট্য সব ক্ষেত্রে একই রকম।
করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে, সবাই সাবধানে থাকুন এবং ঘরে থাকুন। সকলের জন্য ভালবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭