ছবিঃ প্রতিবন্ধী মহিলাটি পেটের দায়ে করোনা ঝুঁকির মধ্যেও আমার বাসার সামনের রাস্তায় শুয়ে ভিক্ষা করছেন, এই মানুষগুলো আসলেই কষ্টের মধ্যে আছেন।
৭.০৪.২০২০
ফজরের নামাজ পড়েই নিজের বাসার ব্যালকনিতে বসেছি, সকালের আবহাওয়াটা সত্যি চমৎকার। প্রচুর পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। যান্ত্রিক ঢাকা শহরেও যে এত এত পাখি আছে সেটা সকালে না উঠলে বোঝা যায় না। আসলে মানুষগুলো সব ঘরে বন্দী সম্ভবত সেই কারণেই পাখিরা মনের সুখে গান গেয়েই চলছে। এই পাখিগুলোর জীবনকে এতদিন আমরা হুমকির সম্মুখীন করে রেখেছিলাম,কত কত প্রজাতির পাখি এই আমাদের কারণে বিপন্ন হয়ে গেছে তার খোঁজ কি আমরা কোনদিন রেখেছি?
ভোর ৫.৩০ মিনিট থেকে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে মসজিদের মাইকে হুজুরের কান্না মিশ্রিত দোয়ার শব্দ ভেসে আসছে। তিনি কেদে কেদে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে মহামারী করোনা থেকে মুক্তি চাইছেন। গতকাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশ এসেছে ওয়াক্তের নামাজে ৫ জনের বেশি লোক একত্রে নামাজ আদায় করা যাবে না। আমাদের মহল্লার মসজিদে এখনো সেই নিয়ম পালন শুরু হয়নি। হয়তো আজ থেকেই এই নিয়ম কড়াকড়িভাবে পালিত হবে। আপনি আমি চাইলেও আল্লাহর ঘরে গিয়ে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে পারবো না, এমনকি জুম্মার নামাজও মসজিদে গিয়ে পড়তে পারবো না। দিন দিন খোদার রহমতের সব দরজা আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গতকাল নাকি টোলারবাগ মসজিদের ইমাম সাহেব মারা গিয়েছেন ঘটনা কতটুকু সত্যি জানি না, তবে এর আগে একই এলাকার গনি মিয়া নামের এক ভদ্রলোক মারা যায় যিনি টোলারবাগ মসজিদের মুসল্লী ছিলেন। তার কয়েকদিন পরেই একই মসজিদের সেক্রেটারি সাহেবও মারা যান তাই খবরটাকে স্রেফ গুজব বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের মসজিদের মুসল্লীরা কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে গেলেন সংখ্যায় ২৫/৩০ জন হবেন বেশিরভাগই অল্প বয়সীও মধ্যবয়সীরা মসজিদ থেকে বের হচ্ছেন। বৃদ্ধ ও বেশি বয়স্করা ইতিমধ্যেই মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
গতকাল থেকে দেশে অঘোষিত কারফিউ জারি হয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে, সুপার শপগুলো সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে তবে ফার্মেসীগুলো ২৪ ঘন্টাই খোলা। আসলে করোনা পরিস্থিতি যে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌছাছে সেটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই, গততিনদিনে IEDCR যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান (৩ দিনে আক্রান্ত যথাক্রমে ৯-১৮-৩৫জন মোট ১২১ জন) দিয়েছে তাতেই স্পষ্ট সামনে শুধুই মৃত্যুর মিছিল অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। সারা পৃথিবীতে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার লোক মারা গিয়েছে, গোটা পৃথিবীটাই যেন একটা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
গতকাল দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে অফিশিয়ালি বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ালো ১২তে। এর আগে যারা মারা গিয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগেরই পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি তারা আমাদের কাছে ছিলেন শুধুমাত্র একটা সংখ্যা। তবে গতকাল যে ভদ্রলোক মারা গেলেন তার মৃত্যু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো আমরা সবাই জীবন মৃত্যু সন্নিকটে দাঁড়িয়ে আছি, কাল হয়তো আমার অথবা আপনার পালা। সকালের এই ঠান্ডা মৃদুমন্দ বাতাসেই হয়তো ভাসছে প্রাণীঘাতী করোনার জীবানু।
বিঃদ্রঃ
অনলাইনে মাঝেমধ্যে নিজের ভাবনাগুলো লিখে প্রকাশ করি। আপনি আমি দুজন ভিন্ন মানুষ তাই মত পার্থক্য থাকবেই আমার কোন লেখায় বা মন্তব্যে কেউ যদি বিন্দুমাত্র কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে আমরা কেউ জানি না। কেমন হবে করোনা পরবর্তী পৃথিবী তাও আমরা কেউই জানি না। আল্লাহ সকলের সহায় হোন, মহামারী করোনার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। শেষে একটাই কথা কষ্ট করে হলেও সবাই ঘরে থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৬