অনলাইন পত্রিকাগুলো ভুয়া মৃত্যুর খবর দেওয়ার ওস্তাদ,তাই আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবরটা প্রথম যখন দেখলাম তখন বিশ্বাস করিনি।আর আইয়ুব বাচ্চু আমাদের জেনারেশনের এতটাই কাছের মানুষ যে প্রিয়জনের মৃত্যু যেমন মেনে নিতে ইচ্ছে করে না আইয়ুব বাচ্চুর বেলায়ও তাই।
স্কুল পড়ুয়া এক কিশোর স্কুল থেকে ফিরে ড্রেস চেঞ্জ করার আগেই ক্যাসেট প্লেয়ারের বোতামে টিপে দিতো আর তখনই আইয়ুব বাচ্চু গেয়ে ওঠতেন,
'সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে
এই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম'।
এভাবেই ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজতে থাকতো একের পর এক আইয়ুব বাচ্চুর সব হিট গান। কিশোর ছেলেটি তার গোসল,খাওয়া দাওয়া,ঘুম সব কাজই সারতো আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনতে শুনতে। সেই কিশোর ছেলেটি আজকের এই আমি।
ছেলেবেলার বন্ধুরা যেমন আমার বেড়ে ওঠার সাথী আমার কাছে আইয়ুব বাচ্চুও তেমনি একজন কাছের বন্ধু,তার গানগুলো শুনতে শুনতেইতো বড় হয়েছি। আমার আব্বা আইয়ুব বাচ্চু ও অন্যান্য ব্যান্ড শিল্পীদের গান শুনলে খুবই রেগে যেতেন তাই আব্বা যতক্ষণ বাসায় থাকতেন ততক্ষণ ভয়ে আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনতাম না,যখনই আব্বা বাসার বাইরে যেতেন ব্যাস ফুল ভলিউমে বেজে উঠতো,
'আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি
তাই তোমার কাছে ছুটে আসি'
অথবা
'এই রূপালী গিটার ফেলে একদিন চলে যাবো দূরে বহুদুরে'
ছেলেবেলার আমাদের বিনোদনের মাধ্যম ছিল, গল্পের বই এবং গানের ক্যাসেট। গল্পের বইয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে সেবা প্রকাশনী তিন গোয়েন্দা,মাসুদ রানা এবং পরবর্তীতে হুমায়ুন আহম্মেদ,সুনিল গঙ্গোপাধ্যায় আর গানের ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দই ছিল আইয়ুব বাচ্চু,পরে জেমস, মাকসুদ, হাসান ও অন্যরা।একসময় এদেশের মানুষের মুখে মুখে শুধুমাত্র সিনেমার গানই থাকতো কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুই প্রথম ভিন্নধারার একটি গানকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। গতকাল খবরটা শোনার পর থেকেই মনটা খারাপ আর শোকবার্তায় ছেয়ে যাওয়া ফেসবুকে ঢুকলে মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।
সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত দরাজ গলায় আর কোনদিন নতুন কোন গান গাইবেন না বাচ্চু ভাই, বাজবেন না সেই জাদুকরী গিটার। কিন্তু বাংলার মানুষের হৃদয় থেকে কোনদিনই মুছে যাবেন না আমাদের প্রিয় বাচ্চু ভাই। পরপারে ভাল থাকুন আমাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গী আইয়ুব বাচ্চু। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বেহেশত নসীব করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯