“কাটে না সময় যখন আর কিছুতে
বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না
জানালার গ্রীলটাতে ঠেকাই মাথা
মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না
আয় খুকু আয়….”
আমরা যখন হেমন্তের এই গানটা শুনি তখন নিজের অজান্তেই মন কেঁদে উঠে বাবার বুকে সেই ছোট্ট বেলার মতো পরম নিশ্চিন্তে মুখ লুকোবার জন্য । কেননা সন্তানের জন্য মায়ের যেমন ভালোবাসা অফুরন্ত তেমনি বাবার ভালোবাসাও অফুরন্ত । পৃথিবীর সকল সন্তানের কাছে বাবা মানে একটা আদর্শ, প্রথম হাত ধরে চলতে শেখা, বাবার তুলনা বাবা নিজেই । বাবা শাশ্বত,চির আপন এবং চিরন্তন ।
পটভূমি:
আনা জার্ভিস মা দিবস প্রচলনের ক্ষেত্রে সফল হওয়ার পর বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই বাবা দিবস প্রচলনের কথা ভাবছিলেন। ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম বাবা দিবস পালিত হয়।
গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন প্রথম ব্যক্তি যিনি বাবা দিবসের প্রচলন শুরু করেন। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টবাসী গ্রেস প্রথম বাবা দিবস পালনের জন্য আবেদন করেছিলেন১৯০৭ সালের ডিসেম্বর। ভার্জিনিয়ার মোনোনগাহ্য় ভয়াবহ খনি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩শ’ ৬০ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। ফলে প্রায় এক হাজার শিশু পিতৃহারা হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটনকে পীড়া দেয়।
তিনি স্থানীয় মেথোডিস্ট গির্জার যাজককে শহীদ বাবাদের সম্মানে ১৯০৮ সালের ০৫ জুলাই রোববার বাবা দিবস হিসেবে উৎসর্গ করার অনুরোধ করেন। ০৫ জুলাইকে বাবা দিবস করার দাবি জানানোর কারণ, এটি ছিল গ্রেসের মৃত বাবার জন্মদিন।
তথ্যসূত্র: সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
তবে সনোরা স্মার্ট ডড-কে এক্ষেত্রে কৃতিত্ব দেয়া হয়। তার বাবা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ ফেরত সৈনিক যিনি একাই তার ছয় সন্তানকে বড় করে তোলার কজটি করেন। সনোরা স্মার্ট ডড মা দিবসের কথা শুনে মনে মনে স্থির করেন তাঁর বাবার মত অন্য বাবার অবদানকেও স্বীকৃতি দেবার জন্য একটি দিন প্রয়োজন। বাবা দিবস পালনের আবেদন জানিয়ে তিনি স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সে বছরের ০৫ জুন নিজ বাবার জন্মদিনের দিন বাবা দিবস ধার্য করার অনুমতি চান। তিনি সে দিনটিকেই বাবা দিবস হিসেবে উদযাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গীর্জা কর্তৃপক্ষের হাতে প্রস্তুতির সময় না থাকায় জুনের তৃতীয় রবিবার প্রথমবাবের মত বাবা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। দিনটি ছিল ১৯শে জুন, ১৯১০।
তথ্যসূত্র : Wikipedia.
শুরুতে এটি বিশেষ সফলতা পায়নি। ১৯২০ সালে তিনি পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন, বাবা দিবস উদযাপনও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ১৯৩০ সালে নিজ শহর স্পোকারে ফিরে তিনি আবার বাবা দিবস উদযাপন ও এর প্রসারে প্রচারণা শুরু করেন।
এসময় তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সহায়তা পান। ধূমপানের পাইপ, টাইসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রীর নির্মাতারা সুযোগটি লুফে নেয়। এর মধ্যে বাবা দিবস নিয়ে তীব্র সমালোচনাও শুরু হয়। একে ব্যবসায়ীদের ফায়দা লোটার একটি ব্যবস্থা বলে চিহ্নিত করা হয়। সংবাদপত্রে সমালোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্রুপাত্নক কৌতুক প্রকাশিত হয়। তবে ব্যবসায়ীরা হাল ছাড়েনি। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বাবা দিবসকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবার উদ্যোগ নিলেও বাণিজ্যিকীকরণের আশংকায় কংগ্রেস বাদ সাধে। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন।এরপর নানা চাড়াইউৎরাই পেরিয়ে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাবা দিবসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। পশ্চিমা গণমাধ্যমের প্রভাবে ধীরে ধীরে সব দেশেই বাবা দিবস পালন শুরু হয়েছে।
বাবা দিবস দেশে দেশে
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বছরের বিভিন্ন সময়ে বাবা দিবস পালিত হয়। তবে অধিকাংশ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালিত হয়
বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশি শিল্পী জেমস্ জেমস্ এর গান
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৭:১০