ক্যালেন্ডারের পাতা বিদায়ের সাথে সাথে কিছু মানুষ আমাদের কাছ হতে তথা পুরো পৃথিবীর কাছ হতে বিদায় নিয়েছে এই সালে। বছরের ক্রান্তিলগ্নে আমার প্রিয় কিছু হারিয়ে যাওয়া মানুষের নাম।
০১. হুগো চ্যাভেজ
পুরোনাম হুগো বাফায়েল চ্যাভেস ফ্রিয়াস। মহান বিপ্লবী এ নেতা ২৮ জুলাই ১৯৫৪ সালে সাবানেতা, ভেনেজুয়েলাতে জন্মগ্রহন করেন।
তিনি ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ থেকে ০৫ র্মাচ ২০১৩ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পশ্চিমাদের ঘোর বিরোধ সত্বেও এ সময় তিনি অর্থনিতীর সব খাত সরকারি মালিকানায় নিয়ে আসেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ভেনুজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ও বিপ্লবীদের চোখের মনি ছিলেন।
০৫ র্মাচ ২০১৩ তে ৫৮ বছর বয়সে রাজধানী কারাকাস, ভেনেজুয়েলায় স্থানিয় সময় বিকাল ০৪২৫টায় ক্যানসারের কাছে পরাস্থ হয়ে তিনি বিপ্লবীদের স্বরন করিয়ে দিয়ে যান, “বিপ্লবির মৃত্যু আছে,বিপ্লবের মৃত্যু নাই।”
০২.আবদুল জলীল
তিনি ২১ জানুয়ারি, ১৯৩৯ নওগাঁ ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বংলাদেশ) এ জন্মগ্রহন করেন।
বংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন(৭নং সেক্টর)। তিনি প্রাক্তন বানিজ্যমন্ত্রী ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বংলাদেশ আওয়ামিলীগ এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
মহান এই নেতা ০৬ মাচ,২০১৩ তারিখে সিংগাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে বৃক্কে ডায়লাইসিস জনিত জটিলতায় ৭৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
০৩. মোঃ জিল্লুর রহমান
তিনি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশিষ্ট রাজনিতীবিদ ছিলেন। তিনি ০৯ র্মাচ, ১৯২৩ সালে ভৈরব, কিশোরগন্জ অবিভক্ত ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) এ জন্মগ্রহন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে তিনি বাংলাদেশের সবকটি স্বাধিকার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি তার স্ত্রী আইভি রহমান (১৯৫৮-২০০৪) কে হারান।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি,২০০৯ সালে ততকালিন প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন তাকে বাংলাদেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে শপথ বাক্য পাঠ করান। ২০মাচ, ২০১৩ পর্যন্ত তিনি এ দ্বাইত্ব পালন করেন।
২০ র্মাচ ২০১৩ তারিখে তিনি সিংগাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ফুসফুসে সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।
০৪.বিনোদবিহারী চৌধুরিঃ-
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা বিনোদ ১০ জানুয়ারি ১৯১১ সালে বোয়ালখারি, চট্টগ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি বিপ্লবী নেতা মাস্টারদা সূর্য সেনের সহকর্মী ছিলেন।
১৯৩০ সালে ঐতিহাসিক অস্রাগার লুন্ঠন ও একই সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রামকে ৩ দিনের জন্য স্বাধীন করেছিলেন।
মহান এ নেতা ১০২ বছর বয়সে ১০ এপ্রিল ২০১৩ সালে বিপ্লবীদের চেতনার পাতায় নিজের অবস্থান পাকা করে নেন।
০৬.বেলাল মোহাম্মদ
তিনি চট্টগ্রাম,সন্দীপ উপজেলার মুসাপুরে ২০ ফেব্রুয়ারি,১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহন করেন।ছাত্র অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম চট্টগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন(সূত্রঃ উইকি)। তিনি ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তান, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্ক্রীপ্ট রাইটার হিসেবে যোগ
দেন।
বেলাল মোহাম্মদ স্বধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নামকরন করেন। ২৬শে র্মাচ ১৯৭১ দুপুর বেলা এম এ হান্নান ও রেডিওর কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রের একটি লিফলেট বেলাল মোহাম্মদকে দিলে তিনি স্বধীনতার ঘোষনাপত্রের অনুসারে একটি স্ক্রিপ্ট তৈরি করে দেন, যা ঐদিন মেজর জিয়াউর রহমান স্বধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে পাঠ করেন।(সূত্র ১,২)
তিনি ৭৭ বছর বয়সে ৩০ জুলাই,২০১৩ তারিখে তিনি অসংখ্য শুভাকাংখিদের কাদিয়ে(সূত্র ৩) বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের চিকিতসা শাস্ত্রের ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার জন্য তার দেহ দান(সূত্র ৪) করে যান।
তথ্যসূত্রঃ-
১. Click This Link
২.ভিডিও http://arts.bdnews24.com/?p=2769
৩.মৃত্যু Click This Link
৪.দেহ দান Click This Link
০৭.আবদুর রহমান বয়াতি
১৯৩৯ সালে বৃটিশ ভারতে ঢাকার সূত্রাপুর থানার দয়াগন্জে জন্মগ্রহন করেন।তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ লোকসঙ্গিত শিল্পী।একাধারে তিনি অসংখ্য লোকগানের শিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংগিত পরিচালক।
তার প্রায় পাচঁশ একক এলবাম ও বেশ কিছু যৌথ এলবাম রয়েছে। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হলঃ
“মন আমার দেহঘড়ি,সন্ধান করি, কোন মিস্তরি বানাইয়াছে?”
১৯শে আগষ্ট ২০১৩ তিনি জাপান বাংলঅদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতালে শেষ নিঃম্বাস ত্যাগ করেন।
তথ্যসূত্রঃ-
Click This Link
০৮. মান্নাদে
আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র দে। ১ মে,১৯১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি বাংলা, হিন্দী, মারাঠি, গুজরাটি সহ বিভিন্ন ভাষায় প্রায় সারে তিন হাজারেরও বেশি গান রের্কড করেন।
তার গাওয়া জনপ্রিয় গান “কফি হাউজ” শোনেননি এমন লোক খুজে পাওয়া কঠিন।
মান্নাদে ২৪ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে ৯৪ বছর বয়সে ভারতের বেঙ্গালুর কর্ণকাট এর একটি হাসপাতালে বর্ণময় জীবনের ইতি টানেন।
তথ্যসূত্রঃ Click This Link
তার অফিসিয়ার ওয়েব সাইটঃ http://www.mannaday.in
০৯.গিয়াস কামাল চৌধুরি
তিনি ২১ জুলাই,১৯৩৯ সালে ফেণী জেলার শর্শদি বাড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।
একুশে পদক প্রাপ্ত এ সাংবাদিক ১৯৬৫ সালে ইত্তেফাক গ্রুপ থেকে প্রকাশিত ঢাকা টাইমস্ পত্রিকার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসদ), ভয়েস অফ আমেরিকা সহ দেশ বিদেশি বেশ কিছু সংবাদ সংস্থার সাথে কাজ করেন।নিজ যোগ্যতায় সাংবাদিকদের প্রনের নেতা হয়ে উঠেন। তিনি বেশ কয়েকবার ডিইউজে, বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতির দাইত্ব পালন করেন।
২৬ অক্টোবর, ২০১৩ সালে মহান এই কলম যোদ্ধা ইন্তেকাল করেন।
১০.পল ওয়ারকার
১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ সালে জন্মগ্রহন করেন।
ফিলিপাইনে হাইওয়ান দূর্গতদের জন্য ওর্য়াকার এর নিজস্ব সংস্থা “রিচ আউট ওয়াল্ড ওয়াইড” এর একটি অনুষ্ঠান হতে ফিরে আসার সময় তার বন্ধু রজার বোডস্ তাদের বহনকারী গাড়িটির নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটি লাইট পোষ্টে ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলে তারা দুজনই মারা জান।
১১.ন্যালসন ম্যান্ডেলা
তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিকভাবে নিবার্চিত প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৯৪ হতে ১৯৯৯ পযর্ন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬২ সালে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন।১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন। এর পর তিনি তাঁর দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তাঁর গোত্রের দেয়া মাদিবা নামে পরিচিত।
০৫ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে দক্ষিন আফ্রিকার জাতির পিতা ও বর্ণবাদ বিরোধি এ নেতা বিশ্ববাসির কাছ হতে বিদায় নেন।
প্রথম পোষ্ট , ভুল তো হতেই পারে।