এবার নতুন বছরটা খুব বাজে ভাবে শুরু হয়েছে মনে হচ্ছে। বছরের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কয়েক হাজার একর বনভুমি। ফেব্রুয়ারি মাস আসতে না আসতে তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধতো প্রায় বেধেই গিয়েছিল। তারপর মার্চ মাস থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে করোনা ভাইরাস নামক মহামারি।
আমি অবশ্য এতদিন করোনাকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছিলাম না। কিন্তু গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ দেখে একে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় দেখছি না। ওয়াল্ড হেলথ অরগানাইজেশন গ্লোবাল পেনডেমিক হিসেবে ঘোষনা করেছে। এই পর্যন্ত মারা গিয়েছে ৫০০০ জন।আমেরিকায় একটা থমথমে পরিবেশ বিস্তার করছে। গতকাল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপের সাথে একমাসের জন্য সকল ধরনের ভ্রমন নিষিদ্ধ করেছে। আজকে কয়েকটা শহর লকডাউনের করা হয়েছে সেই সাথে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ঘোষনা করা হয়েছে। বাইরে মানুষজন আনাগোনা অনেক কমে গেছে। রেস্টুরেন্ট, শপিংমল সিনেমা হল সব কেমন যেন জনশূন্য। সবার মুখেই একই কথা করোনা ভাইরাস। সবজায়গায় মানুষজন কম থাকলেও গ্রোসারী স্টোর গুলোতে মানুষের উপচে পরা ভীড়। আমি সেদিন কসকোতে(হোলস্যাল গ্রোসারি স্টোর) গিয়ে দেখি সেখানের সকল টয়লেট টিস্যু মানুষ কিনে নিয়ে গেছে। পানি কিনার লাইন ইয়া লম্বা। আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক আর ক্লিনিংএর জিনিস পত্রতো অনেক আগেই স্টক শেষ হয়ে গেছে। অনলাইনেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না এসব জিনিস। মানুষ আগে ভাগেই সব খাবার দাবার স্টক করে রাখছে। যাতে কোনো কারনে সিটি লক ডাউন ঘোষনা করা হলে যাতে অসুবিধা না হয়। সবাই খুব প্যানিকড। যাদের বাসা থেকে অফিস করার সুযোগ আছে তাদের সবাইকে বাসা থেকে অফিস করতে বলা হয়েছে। আমেরিকার স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটি আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। কাজে কেউ অসুস্থ ফিল করলে তাকে সাথে সাথে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেমন একটা অস্থির পরিস্থিতি।
ইটালী পুরা দেশটাই লকডাউন। সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কানাডার প্রাইমমিনিস্টার জাস্টিনট্রুডোর ওয়াইফের করোনা পজিটিভ ধরা পরছে। সে কারনে জাস্টিন ট্রুডো নিজেকে ১৪ দিনের জন্য সেলফ কোয়ারেনটাইন করেছে। হলিউড তারকা টম হ্যান্কস আর তার স্ত্রী দুজনেরই করোনা ভাইরাস ধরা পরেছে।করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে বৈশিষ্ট সেটা হচ্ছে এটা খুব দ্রুত একজন থেকে আরেকজনে মধ্যে ছড়িয়ে পরছে। মানে হচ্ছে খুবই সংক্রামক। আর দ্বিতীয় হচ্ছে এর কোনো ভ্যাকসিন এখনো আবিস্কার হয়নি। করোনা ভাইরাসের মরটালিটি রেট ৩% মানে প্রতি ১০০ জন আক্রান্ত হলে এর মধ্যে তিন জন মারা যাবে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভারনারেবল কন্ডিশনে রয়েছে বৃদ্ধ এবং যাদের আগের থেকেই প্রিকন্ডিশন রয়েছে। যাদের বয়স কম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তারা এই রোগে আক্রান্ত হলে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যাবে। ভাইরাসটি আরেকটি বৈশিষ্ট হচ্ছে এটি ফুসফুসে ক্ষত সৃষ্টি করে।
এখন সবাই বলছে করোনা ভাইরাস নরমাল ফ্লুয়ের মতন তাহলে উন্নত বিশ্ব এটা নিয়ে এত সিরিয়াস কেনো। সবাই এত গুরুত্ব দিয়ে এটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে কেনো। ভাইরাস যাতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরতে না পারে সেই জন্য যা যা স্টেপ নেওয়া দরকার সব করা হচ্ছে। তাই এটা একটা নরমাল ফ্লু বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো মতেই ঠিক হবে না।
বাংলাদেশ সরকার এই ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে আমি জানি না তবে আপনারা সবাই সিডিসি এবং ওয়াল্ড হেল্থ অরগানাইজেশন ভাইরাস মোকাবেলায় যেসব করতে বলেছে তার সব কিছুই ফলো করবার চেষ্টা করবেন। যেমন সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে মুখে/চোখে হাত না লাগানো। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। পাবলিক গ্যাদারিং যেসব জায়গায় হয় সেসব জায়গা এরিয়ে চলা। এবং সর্বোপরি করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষন ধরা পরলে সাথে সাথে গিয়ে তা পরীক্ষ করে দেখানো এবং পজিটিভ হলে নিজেকে সেল্ফ কোয়ারিনটাইন করে ফেলা যাতে পরিবার পরিজনের মধ্যে এটা ছড়িয়ে পরতে না পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৩৩