কি লিখবো কোথা থেকে শুরু করবো ঠিক বুজে উঠতে পারছি না... মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মনের মধ্যে একই সঙ্গে হতাশা, ক্ষোভ আর অপরাধ বোধ জাগ্রত হয়ে উঠছে। গত কয়েকদিনে ছোটো ছোটো স্কুলের বাচ্চারা যেভাবে ধ্বজভঙ্গ ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে গেছে সেটা দেখে যতটা না আশান্মীত হয়েছিলাম তার থেকেও বেশি ভয় পাচ্ছিলাম ওদের না জানি কিছু হয়ে যায়... যেই ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই বাস্তবে পরিনত হলো। ৪ই অগাষ্ট ২০১৮ পুলিশ আর ছাত্রলীগ কর্মীরা একজোগে চড়াও হয়েছে এই ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলোর উপরে। কতটা নির্দয় আর জানোয়ার হলে বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলা সম্ভব। অথচ এই অসীম সাহসী কিশোররা এতটা মার খাওয়ার পরও যেভাবে ঘুরে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করেছে সেটা আসলেই প্রসংশার দাবীদার।
যাক এখন সব বাদ দিয়ে গুজব নিয়ে কয়েকটা কথা বলি.... এই যে এত এত ভিডিও বের হয়েছে এত এত ছবি এগুলো দেখেও যারা এগুলোকে পাশ কাটিয়ে শুধু মাত্র কয়েকটা ফেইক ছবিকে ফোকাসে এনে পুরো ঘটনাকে গুজবে রুপান্তরিত করার যে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটা আসলেই হাস্যকর। আর যদি সব মিডিয়াকে ব্ল্যাকআউট করে মিডিয়া কভারেজ বন্ধ করে ইন্টারনেট বন্ধ করে মূল ঘটনাকে আড়াল করলে সেখানে যদি গুজব ছড়ায় সেটার দায়ভার একমাত্র এবং শুধুমাত্র সরকারের। আপনারা মূল মিডিয়াকে খবর প্রকাশো করতে দিবেন না আবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যা কিছু মাত্র সংবাদ পাচ্ছি সেটাকেও গুজব বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন। ভাবখানা এমন যে দেশে কিছুই হচ্ছে না। এভরিথিং ইজ আন্ডার কন্ট্রোল। সরকারী মানুষদের বিশ্বাসযোগ্যত কোন পর্যায়ে গেলে তাদের কোনো কথাই এখন আর মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না।
এই বাচ্চা কিশোরদের দাবী ছিলো তারা নিরাপদ সড়ক চায় এবং এই পুরো সড়ক ব্যবস্থাকে দিনের পর দিন ধরে যারা অনিরাপদ করেছে তাদের পদত্যাগ দাবী। স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা মানুষের মৌলিক দাবিগুলোর একটি। সেই দাবি করাটা কি খুবই অযৌক্তিক ছিলো। যে কারনে সরকারে অধিস্থিত সবাই একযোগে একহয়ে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। দিনের পর দিন ধরে সকল ধরনের অনিয়ম আর দূর্নিতী মেনে নিতে নিতে আমাদের অবস্থা এমন হয়েছিলো যে অনিয়মটাই আমাদের কাছে নিয়ম মনে হওয়া শুরু করেছিল। সেই অবস্থায় আমাদের গালে খুব সজোড়ে চপোটাঘাট করে যখন এই কিশোররা আমাদের ধ্যান ভান্গালো তখনো আমরা এদের ঠিক মত সমর্থন দিতে পারছি না।
কাউকে কাউকে আবার বলতে শুনেছি যে আন্দোলন অনেক হয়েছে এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও। তোমাদের দাবী আমরা শুনেছি, দাবী মেনে নিয়েছি। আমরা যা করার করবো। তোমাদের কাজ শেষ এখন বাড়িতে গিয়া পড়াশোনায় মন দেও। প্রত্যেকটা মৃত্যুর পর একটা মানব বন্ধন আর কয়েকটা মোমবাতি জ্বালিয়ে তো অনেক বাসায় ফেরা হয়েছে, কিন্তু কোনো কিছুরই তো কোনো প্রতিকার হয়নি। তাহলে কি করে ভাবেন যে সরকার বাহাদুর সকল দাবী মেনে নিয়েছে তারা ব্যবাস্থা নিচ্ছে এবং এর পর থেকে সব সুষ্ঠু ভাবে চলা শুরু করবে। যেখানে কয়েকদিন আগে সংসদের মত জায়গায় দাড়িয়ে একজন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলেছিল সকল কোটাই তিনি বাতিল করবেন এবং কয়েকদিন পরে সুর পালটিয়ে বলেছে কোনো কোটাই বাতিল হবে না বরং আন্দোলন থামাতে তিনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেলেন। একবার ভাবুনতো ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি তিন চারদিন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে তখনকার প্রতিবাদীরা বাসায় ফিরে যেতেন তাহলে আমাদের কখনো স্বাধীনত অর্জন হত নাকি!!
দেশটার বয়সতো আর কম হলো না। এই ছোটো বাচ্চা আর কিশোররা মিলে যখন দেশের জন্জাল দূর করার কাজে হাত দিয়েছে তখন চলুননা আমরা কাধে কাধ মিলিয়ে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আছি। যার যা কিছু সামর্থ আছে তাই নিয়েই তাদের সাহায্য করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৬