কেউ যখন বাংলাদেশ থেকে প্রথম দেশের বাইরে আসে তখন সে দুইটা প্রধান সমস্যার মুখোমুখি হয়। এক ভাষাগত সমস্যা এবং দুই কাজ পেতে। যদি কোনো ইংরেজী ভাষার দেশে যান তবে সেক্ষেত্রে ভাষার সমস্যা কিছুটা হলেও কম হবে তবে আজকের এই লেখাটা ভাষা নিয়ে নয় বরং কিভাবে নতুন কোনো দেশে গেলে চাকরী খুজে পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে। কারো যদি আত্নীয়স্বজন দেশের বাইরে থেকে থাকে এবং আগে থেকেই চাকরী রেডি করে রাখে তবে বলতে হবে সে অতি সৌভাগ্যবান। তবে অধিকাংশেরই এই ধরনের সৌভাগ্য থাকে না। তবে অনেক ক্ষেত্রে আত্নীয়স্বজন থাকলেও তারা চাকরি পেতে তেমন একটা সহযোগীতা করতে পারে না তবে তারা যদি প্রথম কয়েকমাস আপনাকে থাকার সেল্টার দিয়ে থাকে সেটাও অনেক বড় প্লাস পয়েন্ট। এ পর্যন্ত আমার দুটি বড় দেশে থাকা হয়েছে (ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা)। আপনি যদি খুব রিসেন্টলি এই দুটি দেশের একটিতে এসে থাকেন কিংবা নিকট ভবিষ্যতে আসবার চান্স থাকে তবে অবশ্যই লেখাটি পড়বার অনুরোধ রইলো। লেখার শুরুতেই বলে নেই এইসব দেশে জব মূলত দুই ধরনের এক হোয়াইট কলার বা ডেস্ক জব এবং ব্লূ কলার। আমরা বাংগালীরা অবশ্য ব্লু কলার জবকে কামলা বলে অভিহিত করে থাকি। যারা নতুন কিংবা ছাত্র হিসেবে যায় তাদের অধিকাংশই ব্লু কলার জব দিয়েই শুরু করে। এর কারন হচ্ছে ব্লুকলার জব পাওয়া সহজ তেমন একটা হাই কোয়ালিফাইড হতে হয় না এবং পড়াশোনা করবার জন্য অধিক সময় পাওয়া যায়।
নতুন কোনো দেশে যাওয়ার পর আপনাকে প্রথমেই জেনে নিতে হবে আপনি যেই দেশে গিয়েছেন সেই দেশটির প্রথম সাড়ির চাকরি খুজার ওয়েবসাইট কোনটি। যেমন বাংলাদেশের জন্য বিডিজবস.কম তেমনি ভাবে ইউকেতে চাকরি খুজার প্রধান যে ওয়েবসাইট সেটার নাম হচ্ছে গামট্রি.কম (http://www.gumtree.com) মনস্টার.কম(http://www.monster.com) আর ইউএসএ তে ইনডিড.কম (http://www.indeed.com)। এইসব সাইতে প্রতিদিন শ'খানেক নতুন চাকরির পোস্টিং আসে। কিছু কিছু নিয়ম ফলো করলে খুব সহজে এবং কম সময়ে এই সব সাইট থেকে চাকরী পেয়ে যাবেন। এখন যেই দেশে গিয়েছেন সেই দেশের প্রথম সাড়ির ওয়েবসাইটের নাম কিভাবে জানবেন। যেখানে উঠবেন সে জায়গার কোনো বড় ভাইকে বা যারা অনেকদিন ধরে আছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেই ওয়েবসাইটের নাম জেনে যাবেন। আরো সহজ পদ্ধটি হচ্ছে গুগলে জব এবং লোকেশন লিখে সার্চ দিবেন। লিস্টের প্রথম দিকে যে কয়টি জব সাইটের সাজেশন দিবে সেগুলোকে ফলো করলেই হবে। কেউ যদি বাইরের দেশে লম্বা সময় ধরে থাকেন এবং প্রধান চাকরীর ওয়েবসাইটের নাম জেনে থাকেন তবে সেটা কমেন্ট সেকশনে জানানোর অনুরোধ রইলো।
এরপর যে কাজটি করতে হবে সেটা হচ্ছে আপনাকে সুন্দর করে একটি সিভি আর একটি কভার লেটার তৈরি করতে হবে। এখানকার সিভি বাংলাদেশের সিভির থেকে একটু আলাদা। এখানে আপনার পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা আগে দিবেন এবং এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন পরে দিবেন। যে কাজের জন্য এপ্লাই করতে ইচ্ছুক সেই কাজের অভিজ্ঞতা অবশ্যই এড করবেন। যেমন আপনি যদি ব্যাংকের জবের জন্য এপ্লাই করেন তবে আপনার সিভিতে ব্যাংকের জবের অভিজ্ঞতা কোথায় কত বছর কাজ করেছেন সেটা যোগ করে দিবেন। যদি রিটেইলে বা রেস্টুরেন্টের জবের জন্য এপ্লাই করেন তবে সে ক্ষেতে স্ব-স্ব কাজের অভিজ্ঞতা যোগ করে দিবেন। যদি সম্ভব হয় তবে সিভি বা বায়োডাটা এক বা দুই পৃষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন। সিভিতে অপ্রয়োজনীয় তথ্য যেমন বাবার নাম, আপনার হাইট, আপনার প্রিয় খাবার এই ধরনের তথ্য সংজোযন থেকে বিরত থাকবেন। সিভি কি ধরনের ফরমেট হবে সেটা নিয়ে আমি ভবিষ্যতে আরেকটা লেখা লিখব। অবশ্যই আপনার নাম ইমেইল এড্রেস, ফোন নাম্বার স্পষ্ট করে সিভির শুরুতেই দিয়ে দিবেন।
আপনার চাকরীর ওয়েবসাইট এবং সিভি দুইটাই রেডি। এখন আপনার পরবর্তি কাজ হচ্ছে প্রতিদিন খুব সকালে উঠে ওয়েবসাইটে ঢুকে এক সাথে দশ পনেরোটা জবের জন্য এপ্লাই করে দিবেন। কারন হচ্ছে এসব দেশের হায়ারিং ম্যানেজাররা সকালে কাজে এসে সবার আগে কে কে চাকরীর এপলিকেশন করেছে সেটা দেখে যোগ্যতা অনুযায়ী ইন্টারভিউয়ের জন্য কল বা ইমেইলের মাধ্যমে ডাকা শুরু করে। আর সকাল সকাল এপলিকেশন এর সংখ্যা কম থাকে বিধায় আপনার কল বা ইমেইল পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। এভাবে জবের জন্য এপ্লাই করতে থাকলে পরবর্তী পনেরো দিনের মধ্যেই দেখবেন আপনি অনেকগুলো জবের ইন্টারভিউয়ের জন্য কল পেয়ে যাবেন। আর যদি কোথাও থেকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক না পান তাহলে বুজতে হবে আপনার বায়োডাটাতে গড়মিল রয়েছে কিংবা আপনি যেই কাজের জন্য এপ্লাই করছেন সেই কাজ সম্পৃক্ত আপনার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আপনার বায়োডাটাতি কাউকে দিয়ে এডিট করিয়ে নিতে হবে।
জবের ইন্টারভিউয়ের জন্য কল পেয়েছেন মানে এই না যে আপনার চাকরী কনফার্ম। এবার আপনার কাজ হচ্ছে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রিপারেশন নেওয়া। কিভাবে প্রিপারেশন নিবেন? মনে রাখবেন ইন্টারভিউয়ার অধিকাংশ প্রশ্নই করবে আপনার সিভি দেখে। তাই আপনার সিভিতে কি কি লিখেছেন সেটা সম্পর্কে আপনার একটা ভালো আইডিয়া থাকতে হবে। আরেকটা জিনিস যে কম্পানী থেকে যেই পোস্টের জন্য জন্য ডাকা হয়েছে সেই কম্পানী এবং সেই পোস্ট সম্পর্কে আগে ভাগেই ইন্টারনেট ঘেটে কিছু তথ্য জেনে রাখবেন। আর ইন্টারভিউতে কিছু কমন প্রশ্ন জিজ্ঞাস করা হয়। যেমন কেনো আপনি এই কম্পানীতে কাজ করতে চান? আপনার তিনটি দূর্বলতা কিংবা তিনটি স্ট্রং সাইড।
প্রিপারেশন শেষ এখন ইন্টারভিউ ফেস করবার পালা। চেষ্টা করবেন যেদিন আপনার ইন্টারভিউ সেদিন একটু আগে ভাগে ঘর থেকে বের হতে। যদি আপনি ইন্টারভিউয়ের জন্য লেট করে যান তাহলে চাকরি না পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০% বেড়ে যায়। অনেকক্ষেত্রে আবার সরাসরি না করে দেয়। ভালো ফরমাল জামা কাপড় পরে একটু ফিটফাট হয়ে বের হবেন। বিকজ ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দা মোস্ট ইমপর্ট্যান্ট থিংগস। কথা বলার সময় হাসি খুশি ভাবে উত্তর দিবেন আর চেষ্টা করবেন নার্ভাস না হবার। আশা করা যায় আপনি দশটা জবের ইন্টারভিউ ফেইস করলে এর মাঝে একটাতে চাকরী পেয়ে যাবেন। আর বেশি বেশি ইন্টারভিউ ফেইস করার আরেকটা সুবিধা হলো আপনার অভিজ্ঞতা ভারি হয় নার্ভাসনেস কমে যায় এবং ইন্টারভিউতে কি ধরনের প্রশ্ন করা হয় সে সম্পর্কে একটা আইডিয়া হয়ে যায়।
বিদেশে চাকরি খোজার আরেকটা প্রসেস রয়েছে আর সেটা হলো আপনার সিভি আর কভার লেটার তৈরি হয়ে গেলে আপনি প্রতিদিন দশ পনেরোটা বায়োডাটা নিয়ে বের হয়ে বিভিন্ন দোকানে দোকানে গিয়ে আপনার সিভি বিলি করবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই স্টোর ম্যানেজার বা হায়ারিং ম্যানেজারের হাতে আপনার বায়োডাটা দেবার চেষ্টা করবেন এবং সিভি দেওয়ার সময় ম্যানেজারের সাথে কথা বলার ট্রাই করবেন যে আপনার জবটা খুব দরকার কিংবা চাকরির কোনো পজিশন রয়েছে কিনা। আপনি যদি অন্য কোনো ইমপ্লয়ির হাতে সিভি দেন তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চান্স থাকে আপনার সিভিটি ময়লার ব্যাগে যাবে। তবে এই পদ্ধতিটা এখন আর অতটা জনপ্রিয় নয়। কারন অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনাকে বলা হবে অনলাইনে জবের জন্য এপ্লাই করবার জন্য।
যাই হোক উপরের পদ্ধটি গুলো ফলো করলে আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে আপনি দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে একটি চাকরি জোগাড় করে ফেলতে পারবেন। প্রথম চাকরিটি পেয়ে গেলে এবং মোটামুটি নিজে চলার মত একটা অবস্থা হয়ে গেলে তখন আস্তে ধিরে আপনি নিজেই আরো ভালো জবের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারবেন। আজকের মত তাহলে এতটুকুই থাক। পরবর্তীতে কিভাবে বায়োডাটা বানাতে হবে, ইন্টারভিউয়ের জন্য কিভাবে প্রিপারেশন নিতে হবে তা নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখব। সবাই ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:৫৪